নয়াদিল্লি: প্রতি মুহূর্তে আড়ে-বহরে বাড়ছে। চরিত্রের দিক থেকে গ্রহ, অথচ আচরণ নক্ষত্রের মতো। মহাশূন্যের বুকে এমনই এক ‘পাজি গ্রহ'কে নিয়ে এই মুহূর্তে চিন্তিত বিজ্ঞানীরা। সেটির হাবভাব দেখে স্তম্ভিত সকলে। কোথায় তার শুরু, আর কোথায় গিয়ে শেষ হবে, কিনারা করতে পারছেন না কেউ। (CHA 1107-7626)
পৃথিবী থেকে ৬২০ আলোকবর্ষ দূরত্বে অবস্থান করছে মহাজাগতিক বস্তুটি, যার নাম Cha 1107-7626. আয়তনে সেটি আমাদের বৃহস্পতির চেয়ে ৫-১০ গুণ বড়। Cha 1107-7626 আসলে ক্যামিলিয়ন নক্ষত্রপুঞ্জের মধ্যে অবস্থান করছে। তবে সেটি কোনও নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করছে না। বরং নিজের মতো ভেসে রয়েছে। (Science News)
সম্প্রতি Cha 1107-7626 নামের মহাজাগতিক বস্তুটিকে নিয়ে গবেষণা শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। আর তাতেই চমকপ্রদ তথ্য় উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, অস্বাভাবিক হারে বাড়ছে মহাজাগতিক বস্তুটি। প্রতি সেকেন্ডে ৬৬০ কোটি টন গ্যাস, ধুলো গিলে নিচ্ছে। মহাশূন্যের বুকে অদ্ভুত বস্তুসমূহের কোনও অভাব নেই। কিন্তু চরিত্রগত ভাবে গ্রহ, কিন্তু আচরণে নক্ষত্র, এমন কোনও বস্তু এই প্রথম দেখতে পেলেন বিজ্ঞানীরা।
অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল অবজার্ভেটরি অফ পালেরমোর বিজ্ঞানী ভিক্টর আলমেন্দ্রস-আবেদ বলেন, “মানুষ ভাবেন, গ্রহ মানেই শান্ত, স্থিতিশীল এক দুনিয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে আমরা দেখছি একটি মহাজাগতিক বস্তু মহাশূন্যের বুকে ভেসে বেড়াচ্ছে।” বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, যে হারে মুহুর্মুহু গ্যাস ও ধুলো গিলছে মহাজাগতিক বস্তুটি, তা সটান তার পেটে গিয়ে পড়ছে। সেই সময় তাপমাত্রা এত বেশি হচ্ছে যে তীব্র বিস্ফোরণ ঘটছে, যা কমপক্ষে দুই মাস দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। জন্মলগ্নে সাধারণত নক্ষত্রের মধ্যেই এমনটা দেখা যায়।
কোনও নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করার পরিবর্তে, মহাকাশে এমনি শূন্যে ভেসে বেড়ানো গ্রহ বা সমগোত্রীয় বস্তুগুলিকে Free-Floating Planetary-Mass Object বা FFPMOs বলা হয়। তাদের সৃষ্টি নিয়েও ধন্দ রয়েছে। কেউ কেউ মনে করেন, কোনও নক্ষত্রের কাছাকাছিই জন্ম সেগুলির। অভিকর্ষের দরুণ পরবর্তীতে ছিটকে যায়। অনেকে আবার মনে করেন, নক্ষত্রের মতো সেগুলিও আপনা থেকেই জন্ম নেয়। কিন্তু চারপাশে জায়গা না পেয়ে নক্ষত্রের মতো বাড়তে পারে না।
২০০৮ সালে Cha 1107-7626 গ্রহটিকে আবিষ্কার করা হয়। চার পাশের বলয় থেকে গ্যাস, ধুলো গিলে খেতে দেখে সেটির প্রতি আগ্রহ জন্মায় বিজ্ঞানীদের। এর অল্পদিনের মধ্যেই দেখা যায়, পর পর বিস্ফোরণ ঘটছে তার বুকে। আকারেও ক্রমাগত বাড়ছে। তাকে ঘিরে যে বলয় রয়েছে, তাতে সিলিকেট, হাইড্রোকার্বন রয়েছে, যা শিশু-নক্ষত্রদের চারপাশেও দেখা যায়।