নয়াদিল্লি: মহাকাশে আটকে রয়েছেন সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সহযাত্রী ব্যারি বুচ উইলমোর। সেই আবহেই মহাকাশে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেলে রাশিয়ার একটি কৃত্রিম উপগ্রহ। রাশিয়ার ওই কৃত্রিম উপগ্রহটির ১০০-র বেশি টুকরো ছড়িয়ে পড়েছে মহাকাশে। পরিস্থিতি এতটাই বিপজ্জনক আকার ধারণ করে যে, আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে মোতায়েন নভোশ্চরদের নিরাপদ আশ্রয়ে ঢুকে যেতে হয়। (RESURS-P1 Satellite Blast)
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA জানিয়েছে, পৃথিবীর উপর নজরদারি চালানোর কাজে নিযুক্ত ছিল রাশিয়ার Resurs-P1 কৃত্রিম উপগ্রহটি। অকেজো অবস্থাতেই সেটি মহাকাশে বিরাজ করছিল। সেই অবস্থায় বুধবার আচমকাই তীব্র বিস্ফোরণ ঘটে ওই কৃত্রিম উপগ্রহটিতে। টুকরো অংশগুলি ছিটকে পড়ে এদিক ওদিক। (Russian Satellite Blast)
সেই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে মোতায়েন আমেরিকার ছ’জন নভোশ্চর নিজ নিজ মহাকাশযানে আশ্রয় নেন বলে জানিয়েছে NASA. ২০২২ সালেই ওই কৃত্রিম উপগ্রহটিকে অকেজো ঘোষণা করা হয়। আচমকা কী কারণে বিস্ফোরণ ঘটল, যাতে রাশিয়ার কৃত্রিম উপগ্রহটি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেল, তা জানা যায়নি এখনও পর্যন্ত। এই মুহূর্তে তার ধ্বংসাবশেষ ইতিউতি ছড়িয়ে থাকলেও, তার জেরে ভয়ঙ্কর বিপদ ঘটার কোনও সম্ভাবনা নেই বলে জানা গিয়েছে।
তবে বিপদ এড়ানো গেলেও, আগামী দিনে মহাকাশ অভিযানের ক্ষেত্রে এই ঘটনা প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। মহাকাশের ঘটনাবলীর দিকে নজরদারি চালায় যে LeoLabs সংস্থা, তারা জানিয়েছে, পৃথিবীর কক্ষপথের নিম্নভাগে ধ্বংসাবশেষ ছড়িয়ে পড়েছে। সেগুলো সরাতে কয়েক মাস সয় লাগতে পারে, যা অভিযানের কাজে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।
আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশন জানিয়েছে, তাদের কাছে RESURS-P1 কৃত্রিম উপগ্রহটির চূর্ণ-বিচূর্ণ হওয়ার খবর পৌঁছয় বুধবারই। সঙ্গে সঙ্গে নভোশ্চরদের নিরাপদ আশ্রয়ে মাথা গুঁজতে বলা হয়। ধ্বংসাবশেষ কোন পথে ছড়িয়েছে প্রথমে তা দেখা হয়। এর পর নিজ নিজ মহাকাশযান থেকে বেরিয়ে নভোশ্চররা আবার আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের কাজে হাত দেন।
US Space Command জানিয়েছে, ওই কৃত্রিম উপগ্রহটির ১০০-র বেশি টুকরোর হদিশ পাওয়া গিয়েছে এখনও পর্যন্ত। ২০২২ সালেই সেটিকে মৃত বলে ঘোষণা করেছিল রাশিয়া। আপাতত তেমন কোনও বিপদের সম্ভাবনা চোখে পড়ছে না। আমেরিকার রকি পর্বতমালা অঞ্চলের সময় অনুযায়ী, বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ ওই দুর্ঘটনা ঘটে। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনের কক্ষপথের কাছাকাছি জায়গায় বিস্ফোরণটি ঘটে বলে জানা গিয়েছে।
ওই দিন সন্ধে ৬টা পর্যন্ত ধ্বংসপ্রাপ্ত কৃত্রিম উপগ্রহটির টুকরো মহাকাশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে বলে জানিয়েছে US Space Command. এই ঘটনায় মহাকাশ আবর্জনা নিয়েও উদ্বেগ বাড়ছে। ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট, নেভিগেশন পরিষেবা, নজরদারি প্রক্রিয়া চালাতে গিয়ে এমনিতেই মহাকাশে ভিড় বেড়েছে। সেই আবহে এই দুর্ঘটনায় মহাকাশ আবর্জনা আরও বাড়ল। এর আগে, ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনার মুখে পড়েছিল রাশিয়া। সেবার অকেজো হয়ে যাওয়া একটি কৃত্রিম উপগ্রহকে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে ধ্বংস করে দেওয়া হয়, যা থেকে বর্জ্য ছড়িয়ে পড়ে। সেই থেকে মহাকাশে যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক আইন কার্যকর করার দাবিও উঠতে শুরু করে। তবে এখনও তার বাস্তবায়ন ঘটেনি।