নয়াদিল্লি: অবস্থান অনুযায়ী সূর্যের ষষ্ঠতম গ্রহ শনি। কিন্তু আকর্ষণে একেবারে শীর্ষে। বলয় সম্বলিত গ্রহটি বরাবরই নজর কেড়েছে। কিন্তু শনির সেই বলয়ই এবার গায়েব হতে চলেছে। ২০২৫ সালে শনির বলয়গুলি অদৃশ্য হয়ে যাবে বলে জানা গিয়েছে। একেবারেই কি বলয় হারাতে চলেছে শনি, নাকি আবারও ফিরে আসবে সেগুলি? বিশদে জানালেন বিজ্ঞানীরা। (Rings of Saturn)
আগামী ছ'মাসে, ২০২৫ সালের মার্চ মাস থেকে শনির বলয় দেখতে পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে মহাকাশে বিলীন হয়ে যাচ্ছে না শনির বলয়গুলি, বরং পৃথিবীবাসীর চোখে এবং পৃথিবীতে বসানো টেলিস্কোপে সেগুলি ধরা পড়বে না বলে জানা গিয়েছে। এর জন্য শনির অবস্থান এবং ঘূর্ণনকে দায়ী করেছেন বিজ্ঞানীরা। (Science News)
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নিজের অক্ষের উপর ২৬.৭ ডিগ্রি কোণে হেলে রয়েছে শনি। প্রতি ২৯.৫ বছরে সূর্যকে একবার প্রদক্ষিণ করে সে। শনিকে ঘিরে থাকা বলয়গুলি অত্যন্ত পাতলা। আগামী মার্চ মাসে শনির ওই অবস্থানের জেরে বলয়গুলির অবস্থান হবে পৃথিবীবাসীর সমান্তরাল। ফলে শনিকে ঘিরে থাকতে দেখা যাবে না সেগুলিকে।
তবে এই অবস্থান চিরস্থায়ী নয়। শনি যে ২৯.৫ বছরে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে, সেই ২৯.৫তম বছরেই বলয়গুলি পৃথিবী থেকে দেখা যায় না। ২৯.৫ বছর পর, আগামী মার্চে সূর্যের চারিদিকে ঘোরা সম্পূর্ণ করছে শনি। ফলে আবারও পৃথিবীবাসীর চোখের সামনে থেকে গায়েব হতে চলেছে তার বলয়। মার্চ মাসের পর আবার যত এগোতে শুরু করবে শনি, ধীরে ধীরে আবির্ভাব ঘটবে তার বলয়গুলিরও। কক্ষপথে হেলে থাকার দরুণ ২০২৫ সালের নভেম্বর মাসে ফের সাময়িক গায়েব হয়ে যাবে। ২০৩২ সালে আবারও আগের মতো আবির্ভাব ঘটবে। এর আগে, ২০০৯ সালেও একই ঘটনা ঘটে।
অর্থাৎ শনির বলয়গুলি মিলিয়ে যাচ্ছে না, আমাদের নজরের বাইরে চলে যাচ্ছে। শনির বলয়গুলি মূলত বরফের কণা, পাথরের টুকরো, মহাজাগতিক ধুলো দ্বারা গঠিত। পৃথিবী থেকে টেলিস্কোপ ধরলে, বলয়ের আকারে চোখে পড়ে। ওই কণার কোনওটির আকার একেবারে বালির মতো, কোনওটির আবার বাড়ির সমান। সমান্তরাল ভাবে এমন একাধিক বলয় ঘিরে রেখেছে শনিকে। মূল সাতটি বলয় রয়েছে শনির। তাদের মধ্যিখানে রয়েছে শূন্যস্থানও। উদাহরণস্বরূপ ক্যাসিনি ডিভিশনের কথা বলা যায়, যা ৪,৮০০ কিলোমিটার বিস্তৃত।
১৭ শতকে ইতালির জ্যোতির্বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলি প্রথম বার শনির বলয় আবিষ্কার করেন। প্রাচীন টেলিস্কোপে চোখ রেখে শনির বলয় দেখতে পান তিনি। তবে তাঁর কাছে বলয়গুলি ধরা দেয় কানের মতো আকারে। টেলিস্কোপটি উন্নত না হওয়াতেই এমনটি ঘটে। পরবর্তীতে পূর্ণ আকারের বলয়গুলির অস্তিত্ব ধরা পড়ে। সেই থেকে জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং মহাকাশপ্রেমীদের কাছে আকর্ষণ হয়ে উঠেছে শনি।