নয়াদিল্লি:  মনুষ্যজীবনের সঙ্গেই শুধু ওতপ্রোত ভাবে জড়িত নয়। সৃষ্টির সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে সঙ্গীত। এতদিন গোটা বিষয়টি জল্পনা-কল্পনার স্তরে আটকে থাকলেও, এবার হাতেনাতে তার প্রমাণ মিলেছে বলে দাবি বিজ্ঞানীদের (Science News)। তাঁদের দাবি, গোটা বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের নিজস্ব আবহসঙ্গীত রয়েছে, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ থেকে যার উৎপত্তি। সৃষ্টির একেবারে গোড়া থেকে মহাশূন্যে বেজে চলেছে সেই আবহসঙ্গীত। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে সেই ধ্বনি রেকর্ড করা গিয়েছে বলে জানানো হয়েছে (Gravitational Waves)।

  


উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, চিন, ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশে বিজ্ঞানীরা বিগত কয়েক বছর ধরেই বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের সেই আবহসঙ্গীতকে পৃথিবীবাসীর কানে পৌঁছে দেওয়ার প্রচেষ্টা চালাচ্ছিলেন। সম্প্রতি তাতে সাফল্য মিলেছে, যা মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে মাইলফলক বলে গন্য হচ্ছে এখন থেকেই। এর ফলে মহাকাশ অধ্যয়নের পথ আরও প্রশস্ত হবে বলে মনে করা হচ্ছে। 


বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের নিজস্ব আবহসঙ্গীত রয়েছে বলে সর্বপ্রথম ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন অ্যালবার্ট আইনস্টাইন। সে প্রায় ১০০ বছর আগের কথা। তার পর থেকে ধারাবাহিক ভাবে সেই অবহসঙ্গীতের খোঁজ চলে আসছে, বিজ্ঞানীদের দাবি ছিল, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ আলোর সমান গতিতে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের সবকিছু ছুঁয়ে ধাবিত হয়, কোনও রকম বাধাবিঘ্ন ছাড়াই। এর ফলে এক ধরনের উচ্চকম্পাঙ্ক তৈরি হয়, যা বায়ুমণ্ডল ফুঁড়ে পৃথিবীতেও এসে পৌঁছয়।


আরও পড়ুন: Chandrayaan 3 Launch: খরচ প্রায় ৬১৫ কোটি টাকা, মহাকাশে নয়া উড়ান ভারতের, সামনের মাসেই উড়বে চন্দ্রযান-৩


তার বাইরে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডে অপেক্ষাকৃত কম শক্তিশালী কম্পাঙ্কেরও সৃষ্টি হয়, যেগুলি পৃথিবীতে এসে পৌঁছয় না, বরং মহাশূন্যেই  ঘুরতে থাকে, যা থেকে গুঞ্জনধ্বনি তৈরি হয় এক রকমের। তার হদিশ পেতেই এতদিন নিরন্তর গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছিলেন বিজ্ঞানীরা। ইন্টারন্যাশনাল পালসার অ্যারে কনসর্টিয়ামের অধীনে মহাকর্ষীয় তরঙ্গ শনাক্তকরণের কাজ চলছিল। এতদিন পর তার খোঁজ পাওয়া গিয়েছে বলে বৃহস্পতিবার বিবৃতি প্রকাশ করে জানানো হয়েছে।


ইউরোপিয়ান পালসার টাইমিং অ্যারে সংগঠনের  মাইকেল কিথ বলেন, "বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ড যে মহাকর্ষীয় তরঙ্গে প্লাবিত, এখন তা জানি আমরা।" বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মহাকর্ষীয় তরঙ্গ যখন ধাবিত হয়, সময় বিশেষে সঙ্কোচন এবং প্রসারণও ঘটে তার।  বিস্ফোরণ ঘটে মৃত নক্ষত্রের কেন্দ্রস্থল থেকে তাই গবেষণা শুরু করেন বিজ্ঞানীরা। আকাশগঙ্গায় এমন মৃত ১১৫টি নক্ষত্রকে চিহ্নিত করা হয়। রেডিও টেলিস্কোপের মাধ্যমে কান পাতেন বিজ্ঞানীরা। তাতে দেখা যায়, ওই মৃত নক্ষত্রগুলির মধ্যে কিছু সেকেন্ডে শতবার ঘুরছে, নিয়ম করে তা থেকে রেডিও তরঙ্গও প্রতিফলিত হচ্ছে, খানিকটা মহাজাগতিক বাতিঘরের মতো, একেবারে ঘড়ির কাঁটা ধরে এগনোর মতো করে। 


একনাগাড়ে এই ঘূর্ণনের উপর নজর রেখেছিলেন বিজ্ঞানীরা। তাতে ২০২০ সালে প্রথম তরঙ্গের প্রমাণ মেলে বলে জানিয়েছেন US Pulsar Search Collaboratory Programme-এর মওরা ম্যাকলাফিং। আইনস্টাইনের আপেক্ষিক তত্ত্বের সঙ্গে তাতে কোনও ফারাক ছিল না। তবে তরঙ্গ চিহ্নিত করা গেলেও, এখনও পর্যন্ত গবেষণা প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। তবে আগামী এক-দু'বছরের মধ্যে গবেষণা সম্পূর্ণ কার সম্ভব হবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। 


কিন্তু প্রাথমিক ভাবে যে প্রমাণ মিলেছে, তাতে বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের আবহসঙ্গীত কেমন শোনায়, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল। এর উত্তরে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ছায়াপথের কেন্দ্রস্থলে থাকা ক্রমবর্ধমান বৃহদাকার কৃষ্ণগহ্বর থেকেই ওই তরঙ্গ বেরিয়ে আসছে। আয়তনে ওই কৃষ্ণগহ্বরগুলি সূর্যের থেকে লক্ষ লক্ষ গুণ বড়। এসবের মধ্যে থেকে যে ধ্বনি ভেসে আসছে, তা খানিকটা কোলাহলপূর্ণ রেস্তরাঁয় বসে থাকলে যে গুঞ্জনধ্বনি কানে আসে, তার মতো। বিশ্ব-ব্রহ্মাণ্ডের আবহসঙ্গীতকে এভাবেই ব্যাখ্যা করেছেন মাইকেল কিথ।