নয়াদিল্লি: দাঁতের কষ্ট কী কষ্ট, যাঁর হয়নি বুঝবেন না। তার উপর যদি দাঁত তুলতে হয়, বসাতে হয় ক্রাউন। তাই দন্ত চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার কথা উঠলেই দুই পা পিছিয়ে যান অনেকেই। কিন্তু এবার সেই ভয় ও যন্ত্রণার অবসান ঘটতে পারে। কারণ দাঁত গেলে আপনা আপনি দাঁত গজানোর ব্যবস্থা করছেন বিজ্ঞানীরা। (Growing Human Teeth in Lab)

Continues below advertisement

ছোটবেলায় দুধের দাঁত ভেঙে একবার দাঁত গজায়। কিন্তু তার পর দাঁত ভাঙলে নতুন করে গজায় না আর। কিন্তু সব ঠিক থাকলে এবার বেশি বয়সে দাঁত ভাঙলেও, ঠিক গজিয়ে উঠবে। দাঁত যদি নাও গজায়, সেক্ষেত্রে নকল দাঁতের পরিবর্তে গবেষণাগারে তৈরি আসল দাঁতই প্রতিস্থাপন করা হবে মাড়ির উপর। এতে যন্ত্রণাও কম হবে এবং আসল দাঁতের সব সুবিধা মিলবে বলে আশাবাদী বিজ্ঞানীরা। (Medical Science News)

পৃথিবীর সর্বত্রই এ নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে। লন্ডনের কিং’স কলেজও এক ধাপ এগিয়ে গেল। কিং’স কলেজের ছাত্রী অ্যানা অ্যাঞ্জেলোভা ভলপনি গত দুই দশক ধরে দাঁতের পুনরাবির্ভাব নিয়ে গবেষণা করছেন। ২০১৩ সালে তিনি যে টিমে ছিলেন, তারা মানুষ এবং ইঁদুরের শরীরের কোষ ব্যবহার করে আসল দাঁত তৈরি করতে সফলও হয়। এই মুহূর্তে লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা।

Continues below advertisement

National Center for Biotechnology Information-এ নতুন যে গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে নেতৃত্ব দেন অ্যানা। গবেষণায় বলা হয়েছে, আসল দাঁত তৈরি করে তা প্রতিস্থাপনের একেবারে কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছেন তাঁরা। যে বস্তু দ্বারা এমনটি সম্ভব, সেটি হাতে এসে গিয়েছে। এতে একেবারে ‘বায়োলজিক্যাল’ দাঁতই গজাবে। সব কিছু ঠিকঠাক এগোলে ইঁদুরের কোষের প্রয়োজন পড়বে না আর।

আটের দশকেই দাঁতের পরিবর্তে দাঁত গজানোর উপায় বের করতে গবেষণা শুরু হয়। একদশক আগে সেই লক্ষ্যে পৌঁছতে সফল হন অ্যানা এবং তাঁর সতীর্থরা। মানুষের মাড়ির সঙ্গে ইঁদুরের ভ্রূণের দাঁতের কোষ মিশিয়ে আসল দাঁত তৈরি করে তাক লাগিয়ে দেন। কিন্তু যার উপর দাঁতটি গজাবে, তার নতুন একটি কাঁচামাল হাতে পেয়ে গিয়েছেন অ্যানা। 

গবেষণাগারে দাঁত তৈরি করতে যে 3D কাঠামো ব্যবহার করা হয়, সেটি তৈরিতে এতদিন প্রোটিন কোলাজেন ব্যবহার করতেন অ্যানা। এবার ব্যবহার করছেন হাইড্রোজেল, যা একধরনের পলিমার, যাতে জলের পরিমাণ বেশি। গবেষণায় যুক্ত, ডক্টরাল পড়ুয়া শুয়েচেন ঝাং বলেন, “ইঁদুরের ভ্রূণের কোষ নিয়ে ছোট পেলেট তৈরি করি। এর পর সেটিকে হাইড্রোজেলের মধ্যে দিয়ে আট দিন ধরে বাড়তে দিই।” আটদিন পর হাইড্রোজেলের মধ্যে দাঁতের কাঠামো তৈরি হয়ে যায় বলে জানিয়েছেন তিনি। এই গবেষণায় ইম্পিরিয়াল কলেজ লন্ডনও সহযোগিতা করছে। 

২০১৩ সালের গবেষণায় সদ্য গজানো দাঁতকে শিকড়, এনামেল-সহ ইঁদুরের মুখে প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। তবে মানুষের মুখে ওই দাঁত বসাতে এখনও অনেক সময় লাগবে। বিশেষ করে ইঁদুরের কোষের পরিবর্তে প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের কোষ ব্যবহারের প্রশ্নে এখনও আটকে বিজ্ঞানীরা। অ্যানা বলেন, “হয় কাঠামো তৈরি করে সরাসরি দাঁতের সকেটে বসাতে হবে, নয়ত গোটা দাঁত তৈরি করে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বসাতে হবে। সময়ের সঙ্গেই বোঝা যাবে বিষয়টি।”

পুরনো দাঁতের জায়গায় নতুন ‘বায়োলজিক্যাল’ দাঁত গজানোর কিছু সুবিধা রয়েছে, একেবারে সত্যিকারের দাঁতই হবে সেটি। সবরকম অনুভূতি বোঝা যাবে। তবে অ্যানা বা তাঁর সতীর্থরাই নন শুধু, পৃথিবীর একাধিক দেশে এ নিয়ে গবেষণা চলছে। প্রক্রিয়াও ভিন্ন ভিন্ন। জাপানের ওসাকার মেডিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট কিটানো হসপিটালের গবেষক কাৎসু তাকাহাশি ও তাঁর সহযোগীরা জানিয়েছেন, অ্যান্টিবডি নির্ভর চিকিৎসার মাধ্যমে আপনা আপনি দাঁত গজানোর ব্যবস্থা করছেন তাঁরা। তাঁদের গবেষণা অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে মানুষের উপরই। চলতি দশকের শেষ নাগাদই দাঁত গজানোর ব্যবস্থা এসে যাবে বলে আশাবাদী তাঁরা।

অন্য দিকে, আমেরিকার School of Dental Medicine of Tufts University-র গবেষকরা মানুষের দাঁতের মতো দাঁত তৈরিতে সফল হয়েছেন। তাঁরা মানুষ এবং শূকরের কোষের সাহায্য়ে এই কাজে সফল হয়েছেন। গোটা জীবনকালে একাধিক বার শূকরের দাঁত গজাতে পারে। মানুষের চোয়ালকেও তেমন উপযুক্ত করে তোলার কাজ চলছে সেখানে। আবার ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটনের গবেষকরা দান করা আক্কেল দাঁতের কোষ থেকে নতুন দাঁত গজাতে সফল হয়েছেন।