নয়াদিল্লি: সাময়িক প্রতিরোধ গড়া গেলেও, আজও মারণ রোগ হিসেবেই গণ্য হয়। সেই ক্যান্সারের বিরুদ্ধে সার্বিক প্রতিরোধ গড়ার পথে এগোলেন বিজ্ঞানীরা। পরীক্ষামূলক ভাবে ক্যান্সার প্রতিরোধী mRNA টিকা তৈরিতে সফল হলেন তাঁরা, যা সবরকমের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলবে শরীরে। এই টিকা ক্য়ান্সারের চিকিৎসায় যুগান্তকারী আবিষ্কার হিসেবে চিহ্নিত হতে চলেছে বলে মত গবেষকদের। (mRNA Cancer Vaccine)

ইউনিভার্সিটি অফ ফ্লোরিডার বিজ্ঞানীরা এই অসাধ্যসাধন করেছেন। পরীক্ষামূলক ভাবে যে mRNA টিকা তৈরি করেছেন তাঁরা, তা টিউমারের বিরুদ্ধে সার্বিক প্রতিরোধ গড়ে তুলবে, যা আগামী দিনে সবরকমের ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করার শক্তি জোগাবে শরীরকে। Natural Biomedical Engineering জার্নালে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে এই সংক্রান্ত বিশদ তথ্য প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা। (Universal Cancer Vaccine)

আপাতত ইঁদুরের উপর ওই পরীক্ষামূলক mRNA টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ইঁদুরের শরীরে টিউমার ঠেকানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী হয়েছে ওই টিকা। বিশেষ করে ক্যান্সার ইমিউনোথেরাপির সাধারণ ওষুধের সঙ্গে সঙ্গে যদি ওই টিকা প্রয়োগ করা হয়, তাতে অভূতপূর্ব কাজ কারছে টিকাটি। 

সাধারণত ক্যান্সারের চিকিৎসায় ইমিউন চেকপয়েন্ট ইনহিবিটর নামক ইমিউনোথেরাপি প্রয়োগ করা হয়। এক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলির উপর চেকপয়েন্ট নামের যে প্রোটিন থাকে, সেগুলিকে ব্লক করে দেওয়া হয়। ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে আর দমিয়ে রাখতে পারে না ক্য়ান্সারের কোষ। প্রোটিনকে ব্লক করে টি সেলগুলিকে (এক ধরনের শ্বেত কণিকা) আরও শক্তিশালী করে তোলা হয়, যাতে নির্ভুল লক্ষ্যে ক্যান্সারের কোষগুলির আঘাত করা যায় এবং সেগুলিকে মেরে ফেলা যায়।

ক্যান্সার প্রতিরোধে এখনও পর্যন্ত যত টিকা আবিষ্কৃত হয়েছে, তার চেয়ে নয়া mRNA টিকাটি একেবারে আলাদা। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, অন্য় টিকাগুলি টিউমারের নির্দিষ্ট প্রোটিনের উপরই আঘাত হানে। কিন্তু নয়া mRNA টিকাটি ভাইরাল সংক্রমণের মতো আচরণ করে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সক্রিয় করে তোলে। ফলে টিউমারের প্রোটিনগুলিকে আলাদা আলদা ভাবে শনাক্ত করে আঘাত হানতে হয় না।

গবেষণার নেতৃত্বে থাকা এলিয়াস সেয়োর জানিয়েছেন, এতটা ভাল ফল তাঁরাও আশা করেননি। তাই সকলেই উদ্দীপিত বোধ করছেন। তাঁর কথায়, “সব ধরনের ক্যান্সার প্রতিরোধী একটি টিকা তৈরির রাস্তা খুলে গেল।”

বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, নয়া mRNA টিকাটি টিউমারের মধ্যে থাকা PD-L1 প্রোটিনের বিকাশ ঘটায়, যা আসলে চিকিৎসার প্রতি আরও প্রতিক্রিয়াশীল ককে তোলে সেগুলিকে। বিজ্ঞানীরা এর আগে, গত বছর মানুষের উপরও ওই টিকা পরীক্ষামূলক ভাবে প্রয়োগ করেন। তবে নয়া টিকাটি, তার চেয়ে আরও উন্নত ও শক্তিশালী। সার্বিক ব্যবহারের জন্য দ্রুত উৎপাদনও সম্ভব। এবার মানুষের উপর টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হতে চলেছে।