নয়াদিল্লি: যাবতীয় হই-হট্টগোল থেকে দূরে, সকলের নজরের বাইরে নয়া মাইলফলক ছুঁয়ে ফেললেন বিজ্ঞানীরা। পৃথিবীতে বসেই অতীব কঠিন, বিরল হিরে তৈরি করে ফেললেন তাঁরা, যা এতদিন শুধুমাত্র উল্কাপিণ্ডেই পাওয়া যেত। অতীব কঠিন বস্তুর খোঁজে ষড়ভুজাকার ওই হিরে আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল বিজ্ঞানীদের। (Hexagonal Diamond)
উল্কাপিণ্ড থেকে প্রাপ্ত ওই বিরল হিরের তৈরি করতে মহাজাগতিক উপাদানেরও প্রয়োজন পড়েনি বিজ্ঞানীদের। সাধারণ গ্রাফাইট থেকেই বিরল ওই হিরে তৈরি করে ফেলেছেন বিজ্ঞানীরা, যা সাধারণ পেনসিলের মধ্যেও থাকে। উচ্চ তাপমাত্রায়, গ্রাফাইটের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করেই এই অসাধ্যসাধন করেছেন চিনের বিজ্ঞানীরা। (Science News)
চিনের সেন্টার ফর হাই-প্রেসার সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি অ্যাডভান্সড রিসার্চের বিজ্ঞানী এই আবিষ্কার বিশদে প্রকাশিত হয়েছে Nature জার্নালে। কিন্তু কী করে এমন সম্ভব হল? জানা গিয়েছে, উচ্চ তাপমাত্রায়, অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করার ফলে গ্রাফাইটে উপস্থিত কার্বনের পরমাণুগুলি ষড়ভুজের আকারে বিন্যস্ত হয়ে যায়। উল্কাপাতের সময় এমনটিই ঘটে প্রাকৃতিক ভাবে।
গ্রাফাইট থেকে গবেষণাগারে যে হিরে তৈরি করেছেন বিজ্ঞানীরা, সেটি ছোট্ট একটি স্ফটিক, কিন্তু অতীব কঠিন। এই আবিষ্কারের ফলে অতীব কঠিন বস্তু তৈরির ক্ষেত্রে নয়া দিগন্ত খুলে গেল। শুধু তাই নয়, হিরে কাটা, পলিশ করার পদ্ধতিও পাল্টে যেতে পারে আগামী দিনে।
ষড়ভুজাকার হওয়ার জন্যই হিরেটি এত কঠিন বলে মত বিশেষজ্ঞদের। হিরেটি একেবারে বিশুদ্ধ, পৃথিবীতে প্রাপ্ত অন্য হিরের তুলনায় ঢের বেশি কঠিন। ষড়ভুজাকার হিরেকে Ionsdaleites বলা হয়। এর পরমাণুর গঠন হয় অত্যন্ত মজবুত। চিনের অ্যাকাডেমি অফ সায়েন্সেস-এর সদস্য, হাই-প্রেসার বিশেষজ্ঞ হো-কোয়াং মাও জানিয়েছেন, অতীব কঠিন বস্তু এবং অত্যাধুনিক বৈদ্যুতিন ডিভাইস তৈরির ক্ষেত্রে এই গবেষণা পথ দেখাবে।
মাও জানিয়েছেন, প্রথমে একেবারে বিশুদ্ধ গ্রাফাইট জোগাড় করেন তাঁরা। ক্ষুদ্রাকার হিরে তৈরির ক্ষেত্রেও গুণমানের সঙ্গে আপস করা হয়নি। ধাপে ধাপে চাপ বাড়ানো হচ্ছিল গ্রাফাইটের উপর, তার আকারের পরিবর্তনের দিকে লাগাতার নজদারিও চলছিল X-Ray ইমেজিংয়ের মাধ্যমে, যাতে একেবারে নিখুঁত ষড়ভুজ আকার দেওয়া যায়।