কলকাতা: অনন্ত মহাকাশ মানে পরতে পরতে বিস্ময়! কিছুটা ভয়, কিছুটা চমক। সেই তালিকায় নতুন সংযোজন। আমেরিকার একদল গবেষক জানালেন, পৃথিবী থেকে ৩৬ আলোকবর্ষ দূরে, মহাকাশের কোথাও 'নিউট্রন স্টার মারজার'-এর মতো ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ ঘটলে তার ধাক্কায় এই গ্রহে প্রাণের সবটুকু শেষ হয়ে যেতে পারে। এই ধরনের বিস্ফোরণের বৈজ্ঞানিক নাম kilonova। মহাকাশে যে বিস্ফোরণ চলতে থাকে, তার মধ্যে অন্যতম ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ এই kilonova।
কী জানা গেল?
ব্রহ্মাণ্ডের আকার, গঠন,আয়তন ও কার্যকলাপ নিয়ে মানুষের মনে জিজ্ঞাসা ও বিতর্কের শেষ নেই। বিজ্ঞানীদের ধারণা, এই অনন্তের বেশিরভাগই অজানা। স্বাভাবিক ভাবে এই নিয়ে প্রশ্নও অগুনতি। এর মধ্যে অন্যতম প্রশ্ন, মহাবিশ্বে পৃথিবীর মতো গ্রহ কি আর একটাও নেই? প্রাণের হদিস পাওয়া যেতে পারে, এমন গ্রহ কি থাকতে পারে না? তাই নিয়ে গবেষণাও চলছে। পাশাপাশি জিজ্ঞাসা, ব্রহ্মাণ্ডে যে ধরনের মহাজাগতিক ঘটনা ঘটে চলে তার প্রভাব পৃথিবীর উপর ঠিক কতটা? এই প্রশ্নের নিরিখে আমেরিকার Illinois Urbana-Champaign বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদলের একেবারে সাম্প্রতিক দাবি দুশ্চিন্তা বাড়াতে পারে সাধারণ মানুষের। তাঁদের প্রধান বিজ্ঞানী হেল পারকিন্স বলেন, 'পৃথিবী থেকে ৩৬ আলোকবর্ষ দূরত্বের মধ্যে যদি কোনও নিউট্রন স্টারের মারজার হয়, তা হলে সেখান থেকে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ হবে, তা প্রাণের বিলুপ্তি ঘটানোর পক্ষে যথেষ্ট।' প্রসঙ্গত, বৈজ্ঞানিক পরিভাষায় 'নিউট্রন স্টার' আসলে খুব ক্ষুদ্র ব্যাসার্ধের (সাধারণত ৩০ কিলোমিটার) তৈরি একটি মহাজাগতিক বস্তু। তবে এর ঘনত্ব মারাত্মক। ঠাসাঠাসি করে নিউট্রন দিয়ে তৈরি এই নক্ষত্র সাধারণত সুবিশাল কোনও নক্ষত্রের 'সুপারনোভা'-র পর তৈরি হয়।
মার্কিন গবেষকদলের ব্যাখ্যা, নিউট্রন স্টারের মধ্যে সংঘর্ষ হলে যে শক্তিশালী বিস্ফোরণ হবে তা আমাদের পৃথিবীর ওজোন স্তরকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে। ফলে ওই ঘটনার পর থেকে প্রায় ১ হাজার বছর পর্যন্ত এই পৃথিবীকে অতিবেগুনি রশ্মির বিকিরণের মুখে ফেলে দেবে। এর ফলে যে ভয়ঙ্কর ঝুঁকির কারণ তৈরি হবে, তার মধ্যে বিজ্ঞানীদের সবচেয়ে চিন্তা মহাজাগতিক রশ্মিকে নিয়ে। মার্কিন গবেষকদলের মতে, মহাকাশের এই ধরনের বিস্ফোরণ হলে এক ধরনের 'কসমিক রে বাবল' তৈরি হবে। এই 'বাবল'-র গতিপথে যা আসবে, সব কিছুকে সেটি ছেয়ে ফেলবে। অত্যন্ত শক্তিশালী ঋণাত্মক বা ধনাত্মক কণা ছড়াতে থাকবে। পৃথিবীতেও সেই কণা আছড়ে পড়বে। একই রকম ভয় রয়েছে গামা রশ্মি নিয়ে, জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা।
এখনই চিন্তা নেই...
তবে এই নিয়ে এখনই চিন্তার কারণ নেই, সে কথাও 'স্পেস.কম'-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছন গবেষকদলের প্রধান হেল পারকিন্স। তাঁদের মতে, ঘটনাটি যেখানে ঘটবে, তার উপকেন্দ্রের ১৬ আলোকবর্ষের মধ্যে থাকলে তবেই পৃথিবীর এত বড় 'ক্ষতির' আশঙ্কা থাকছে। তা ছাড়া, kilonova-র মতো বিস্ফোরণও সচরাচর মহাকাশে ঘটে না, দাবি তাঁদের। ফলে সব মিলিয়ে আশঙ্কার খুব কিছু নেই।
আরও পড়ুন:একই লগ্নে জন্ম হলেও লড়াইয়ে এঁটে উঠতে পারেনি, আজও পৃথিবীর গর্ভে আশ্রিত এই গ্রহ