কলকাতা: ‘রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা’, শুধু পৃথিবী নয় মহাজগতেও দিব্যি খাটে কবির লেখা এই পঙক্তি। কারণ মহাশূন্যের অতলে ‘হেঁচকি’ তোলা এক কৃষ্ণগহ্বর খুঁজে বের করেছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। কেন এমন আচরণ খুঁজে দেখতে গিয়ে আরও হতবাক হলেন তাঁরা, যা দেখলেন, তা কল্পনাও করতে পারেননি কেউ। (Hiccupping Black Hole)
দানবাকৃতির ওই কৃষ্ণগহ্বরটির ওজন প্রায় ৫ কোটি সূর্যের সমান। পৃথিবী থেকে ৮০ কোটি আলোকবর্ষ দূরের একটি ছায়াপথের একেবারে কেন্দ্রে অবস্থিত। প্রতি ৮.৫ দিন অন্তর একবার গা ঝাড়া দেয়। পর পর বেশ কয়েক বার হেঁচকি তোলার পর তার মুখ দিয়ে গ্যাস বেরিয়ে আসে। এর পর আবার শান্ত হয়ে যায় কৃষ্ণগহ্বরটি। (Science News)
গত ২৭ মার্চ Science Advances জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে ওই কৃষ্ণগহ্বরটির আচরণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, ওই কৃষ্ণগহ্বরটির বলয় ভেদ করে ঢুকে গিয়েছে একটি কক্ষপথ, যা কিছুটা হেলে অবস্থান করছে। সেটির উপর দিয়ে অহরহ ছুটে চলেছে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের আরও একটি কৃষ্ণগহ্বর। ছোট আকারের ওই কৃষ্ণগহ্বরটিই যাত্রাপথে ধোঁয়া ও গ্যাসের কুণ্ডলী রেখে যায়। বলয় ভেদ করে যখন উপরে উঠে আসে ছোট আকারের কৃষ্ণগহ্বরটি, তাতে যে ধোঁয়া এবং গ্যাস বেরোয়, তাকেই ‘হেঁচকি’ ভাবা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: আগাগোড়া মজুত রহস্যের উপাদান, ব্রহ্মাণ্ড সংযোগ নিয়েও চর্চা, বার বার যে কারণে খবরে Monolith
আমেরিকার ম্যাসাচুসেটসের Kavli Institute for Astrophysics and Space Research-এর বিজ্ঞানী ধীরজ পশম ওই গবেষণাপত্রের অন্যতম লেখক। তিনি জানিয়েছেন, গোটা বিষয়টি অত্যন্ত চমকপ্রদ। মাসের পর মাস মাথা চুলকাচ্ছিলেন তাঁরা। পরে চেক রিপাবলিক থেকে দ্বিতীয় কৃষ্ণগহ্বরের বিষয়টি খোলসা করা হয়।
বৃহদাকার কৃষ্ণগহ্বরটির বলয় ভেদ করে এগিয়েছে যে কক্ষপথ, তাতে ছোট আকারের ওই কৃষ্ণগহ্বর ছাড়াও আরও একাধিক মহাজাগতিক বস্তু রয়েছে বলে দাবি করেছেন ধীরজ। আরও নক্ষত্র তো বটেই, ছোট আকারের আরও কৃষ্ণগহ্বরও ওই কক্ষপথে অবস্থান করতে পারে বলে দাবি করেছেন তিনি। গোটা বিষয়টিই অত্যন্ত আশ্চর্যের বলে জানিয়েছেন ধীরজ।
ধীরজের দাবি, কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে এখনও যে অনেক কিছু জানা এবং বোঝা বাকি, এই ঘটনাই তার প্রমাণ। কৃষ্ণগহ্বর আসলে অসম্ভব শক্তিশালী, মহাজগতে তার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্য কোনও কৃষ্ণগহ্বর যদি অহরহ বলয় ভেদ করে ঢুকতে এবং বেরোতে পারে, তাহলে মহাজগতের সমীকরণ নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে।
গবেষকদের দাবি, বৃহদাকার কৃষ্ণগহ্বরটির ভর আগামী দিনে ছোট কৃষ্ণগহ্বরটিকে গিলে নেবে। তবে আগামী ১০ হাজার বছরেরও বেশি সময় লাগবে বলে মত তাঁদের। ছোট কৃষ্ণগহ্বরটি বেশ হালকা হওয়ার দরুণই এত বেশি সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
২০২০ সালে এই দানবাকৃতির কৃষ্ণগহ্বরটির আবিষ্কার করেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় চার মাস ধরে ওই কৃষ্ণগহ্বরটির বলয় থেকে অত্যুজ্জ্বল আলোর ছটা বেরোতে দেখে অবাক হন সকলেই। পরে জানা যায়, কাছে পড়া একটি নক্ষত্রকে কার্যত ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে ওই কৃষ্ণগহ্বর।