নয়া দিল্লি: প্রায় ১৪,৩০০ বছর আগে পৃথিবীতে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে শক্তিশালী সৌরঝড়ে উলটপালট হয়েছিল সব। ফিনল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা জীবাশ্ম গাছের বলয়ে রেডিওকার্বনের পরিমাণ পর্যালোচনা করে এই আবিষ্কার করেছেন। এই ঝড় আজকের প্রযুক্তি-নির্ভর বিশ্বের জন্য একটি বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে বলেও আশঙ্কা। 

সৌর ঝড় কী?

যখন সূর্য থেকে নির্গত দ্রুত শক্তি এবং প্রোটন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, তখন তাকে সৌর ঝড় বলা হয়। এই কণাগুলি পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রকে ব্যাহত করে এবং রেডিওকার্বন (কার্বন-১৪) নামক একটি তেজস্ক্রিয় উপাদানের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। এই রেডিওকার্বনের সাহায্যে বিজ্ঞানীরা পুরনো জিনিসের বয়স খুঁজে বের করেন। 

বিজ্ঞানীরা পুরাতন গাছের বলয়ে রেডিওকার্বনের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি লক্ষ্য করেছেন, যার ফলে গবেষণায় দেখা গেছে যে এটি খ্রিস্টপূর্ব ১২,৩৫০ (জানুয়ারি থেকে এপ্রিল) আনুমানিক একটি সৌর ঝড়ের কারণে ঘটেছে। এই ঝড়টি এতটাই শক্তিশালী ছিল যে এটি ২০০৩ সালের হ্যালোইন সৌর ঝড়ের চেয়ে ৫০০ গুণ বেশি শক্তি পৃথিবীতে পাঠিয়েছিল। বিজ্ঞানীরা প্রথমে পাঁচটি প্রধান সৌর ঝড় পর্যালোচনা করেছিলেন, যা ৯৯৪ খ্রিস্টাব্দ, ৭৭৫ খ্রিস্টাব্দ, ৬৬৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দ, ৫২৫৯ খ্রিস্টপূর্বাব্দ এবং ৭১৭৬ খ্রিস্টপূর্বাব্দে হয়েছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ঝড়টি ঘটেছিল ৭৭৫ খ্রিস্টাব্দে, যার উল্লেখ চিনা এবং অ্যাংলো-স্যাক্সন নথিতে পাওয়া যায়। ১২,৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের ঝড়টি আরও শক্তিশালী ছিল, ১৮% বেশি।   

মহাকাশ বিজ্ঞানীদের মতে, এর আগে ২০১৭ সালে, সূর্য থেকে এক্স১১.৮ এবং এক্স ১৩.৩ তীব্রতার সৌর শিখা বেরিয়েছিল। কিন্তু তা পৃথিবীতে তেমনভাবে প্রভাব ফেলতে পারেনি। এবার যে তীব্রতা দেখা যাচ্ছে, তাতে সেই সৌর তাপ পৃথিবীর দিকে ক্রমশ এগিয়ে আসছে। ফলে পৃথিবীর বিকিরণ বেড়েছে।                       

আজ কেন বিপদ? 

আজ আমাদের পৃথিবী যোগাযোগ ব্যবস্থা, উপগ্রহ এবং বিদ্যুৎ গ্রিডের উপর নির্ভরশীল। এমন পরিস্থিতিতে এত বড় সৌরঝড় বিশাল ক্ষতি করতে পারে। ১৮৫৯ সালের ক্যারিংটন হারিকেন টেলিগ্রাফের তার পুড়িয়ে দেয়। ২০০৩ সালের হ্যালোইন ঝড় উপগ্রহের কক্ষপথ ব্যাহত করে। এর পরে, ২০২৪ সালের গ্যানন ঝড়ও উপগ্রহগুলিকে নাড়া দিয়েছিল। যদি ১২,৩৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের মতো ঝড় আসে, তাহলে উপগ্রহ, বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যাবে। তবে, আজ বিজ্ঞানীরা এই ধরনের ঝড় নিয়ে গবেষণা করছেন যাতে ভবিষ্যতে উপগ্রহ, যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পাওয়ার গ্রিড ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং আমাদের প্রযুক্তি নিরাপদ রাখা যায়।