নয়াদিল্লি: নামে পোকা, কিন্তু বহুমূল্য। পৃথিবীর অন্যতম দামি পোকা Stag Beetle, বাংলায় যাকে বলে হরিণ পোকা। ৫-১০ হাজার নয়, বাজারে এই হরিণ পোকার দাম নয় নয় করে ৭৫ লক্ষ টাকা। এই টাকায় কলকাতা শহরে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট কিনতে পারেন। বহুমূল্য বিদেশি গাড়িও হয়ে যাবে হেসে খেলে। (Stag Beetle)


প্রথমত, হরিণ পোকা অত্যন্ত বিরল প্রজাতির পতঙ্গ। হরিণ পোকা সৌভাগ্য বয়ে আনে বলেও মনে করা হয়। হরিণ পোকা ধরে যদি নিজের কাছে রাখতে পারেন কেউ, তাতে রাতারাতি কোটিপতিও হওয়া সম্ভব বলে প্রচলিত রয়েছে। (Expensive Stag Beetle)


শুধু তাই নয়, সায়েন্টিফিক ডেটা জার্নালের গবেষণা অনুযায়ী, জীব বৈচিত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে হরিণ পোকার। মৃত কাঠকে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে এদের। মাটির উর্বরতা বাড়িয়ে তোলে। 


হরিণ পোকার চোয়ালের অংশ হরিণের শিংয়ের মতো মুখের দুই দিক থেকে উন্নত, তাই এর নাম Stag Beetle বা হরিণ পোকা। ওই শিং দিয়েই পুরুষ হরিণ পোকারা পরস্পরের সঙ্গে লড়াই করে পছন্দের সঙ্গী বেছে নেয়। জীবনের অধিকাংশ সময়ই মাটির নীচে লার্ভা হিসেবে বিরাজ করে হরিণ পোকা। গ্রীষ্মকালে কয়েক সপ্তাহের জন্য বেরিয়ে আসে। ওই সময়ই সঙ্গী খুঁজে সঙ্গমে লিপ্ত হয় এবং সন্তানের জন্ম দেয়। 


পূর্ণবয়স্ক হরিণ পোকা সাধারণত ৩৫-৭৫ মিলিমিটার দীর্ঘ হয়। গ্রীষ্মকালে অন্ধকার ঘনিয়ে আসার পর সঙ্গীর খোঁজে বের হয়। স্ত্রী হরিণ পোকা ৩০-৫০ মিলিমিটার দীর্ঘ হয়। মোট পাঁচটি পা থাকে, সামনের পা পিছনের থেকে ছোট হয়, ফলে হাঁটতে অসুবিধা হয় এদের। হরিণ পোকার গা হয় অত্যন্ত মসৃণ এবং চকচকে। মাথার অংশ কমলা, চোয়ালের অংশ বাদামি। মাটির আধ মিটারের মধ্যে এদের পাওয়া যায়। মাটিতেই ডিম পাড়ে স্ত্রী হরিণ পোকা।


ব্রিটেন-সহ ইউরোপের পশ্চিমাংশের বনভূমি, তৃণভূমি, বাগান, পার্কে হরিণ পোকা পাওয়া যায়। দক্ষিণ ইংল্যান্ডের উপত্যকা এবং উপকূল এলাকাতেও পাওয়া যায়। আয়ারল্যান্ডে যদিও হরিণ পোকা নেই। ব্রিটেনের অন্যত্রও হরিণ পোকা বিরল। কোথাও কোথাও বিলুপ্তও হয়ে গিয়েছে। লন্ডনের ন্যাচরাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম জানিয়েছে, ২ থেকে ৬ গ্রাম ওজন হয় হরিণ পোকার। আয়ুকাল ৩ থেকে ৭ বছর। গাছের রস, পচা ফলের রস খেয়ে বেঁচে থাকে এরা। লার্ভা থাকাকালীন শরীরে যে শক্তি সঞ্চয় করে, তা আজীবন ধরে রাখে তারা। লার্ভা থাকাকলীন খসে পড়া গাছের শুকনো কাঠ খায় হরিণ পোকা। গাছের কোনও ক্ষতি করে না এরা। 


হরিণ পোকাকে ঘিরে লোককথাও প্রচলিত রয়েছে। মাথায় বসিয়ে রাখলে বজ্রপাত থেকে রক্ষা মেলে বলে যেমন শোনা যায়, তেমনই অশুভ শক্তির হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে বলেও বিশ্বাস করেন বহু মানুষ। ১৫৫০ থেকে ১৬২৫ সাল নাগাদ ব্যথার ওষুধ, খিঁচুনির ওষুধ, স্নায়ু সংকোচনের ওষুধ তৈরিতে এই হরিণপোকা ব্যবহারের উল্লেখ পাওয়া যায়। তাবিজ হিসেবে ধারণ করলে ম্যালেরিয়া, প্রস্রাব এবং স্নায়ুঘটিত রোগ সরে যেতে বলেও উল্লেখ মেলে। 


ব্রিটেনে আইন এনে হরিণ পোকাকে সংরক্ষিত বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ১৯৮১ সালের গ্রামীণ বন্যপ্রাণ আইন অনুযায়ী সেটি ব্রিটেনের পঞ্চম তফসিলে প্রাধান্য পেয়েছে। ইউরোপের বহু দেশের লাল তালিকাতেও রয়েছে হরিণ পোকা। কারণ সেখানে হরিণ পোকা বিলুপ্তির পথে। ডেনমার্ক এবং লাটভিয়া থেকে বিলুপ্ত হয়ে যায়। ২০১৩ সালে নতুন করে হরিণ পোকার আমদানি করা হয় ডেনমার্কে। 


আরও পড়ুন: Scar on Mars: মঙ্গলের বুকেও গভীর গিরিখাত, স্পষ্ট অগ্ন্যুৎপাতের ক্ষত, ছবি তুলল Mars Express