নয়াদিল্লি: বাড়ি ফিরে এসে এতদিনে অন্য কাজে হাত দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটির জেরে মহাশূন্যে আটকে গিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভোশ্চর সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সহযাত্রী ব্যারি বুচ উইলমোর। ঠিক কবে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা যাবে, এখনও তার খোলসা হয়নি। তবে নির্ধারিত সময়ের ঢের বেশি সময় তাঁদের মহাকাশেই থাকতে হবে বলে জানা যাচ্ছে। (Sunita Williams)
আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA-র কমার্শিয়াল ক্রু প্রোগ্রাম বিভাগের ম্যানেজার স্টিভ স্টিচ জানিয়েছেন, গত ৫ জুন যে অত্যাধুনিক CST-200 Boeng Starliner মহাকাশযানে চেপে মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দেন সুনীতা এবং ব্যারি, তার কার্যকাল বাড়িয়ে ৪৫ খেকে ৯০ দিন করার কথা ভাবা হচ্ছে। ঠিক কবে তাঁদের ফেরানো যাবে, এখনই নিশ্চিত ভাবে বলা যাচ্ছে না। (NASA News)
গোড়া থেকেই ওই মহাকাশযানে সমস্যা দেখা দিচ্ছিল। কখনও থ্রাস্টার রকেটগুলি ঠিক ভাবে কাজ করছিল না, কখনও আবার ছিদ্রবথে বের হচ্ছিল হিলিয়াম। মহাকাশেও সেই সমস্যা অব্যাহত রয়েছে।
সেই আবহে শুক্রবার স্টিচ জানান, আপাতত নিউ মেক্সিকোতে Starliner-এর অন্য একটি রকেট উৎক্ষেপণের দিকে তাকিয়ে তাঁরা। সেখান থেকে প্রাপ্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে। সুনীতা এবং ব্যারিকে ফিরিয়ে আনতে তাড়াহুড়ো করতে চান না তাঁরা। সুনীতা এবং ব্যারির মহাকাশযানটিতে ঠিক কী সমস্যা হচ্ছে, ঠিক কী কারণে সমস্যা হচ্ছে, তা জানতেই নিউ মেক্সিকোতে পরীক্ষা নিরীক্ষা চলবে।
Boeng Starliner সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্ক নাপ্পি জানিয়েছেন, সমস্যাটা এখনও ধরতে পারছেন না তাঁদের ইঞ্জিনিয়াররা। সেই কারণে হাতে কলমে পরীক্ষা করে দেখা হবে। সমস্যার কারণ বোঝা গেলে ওই মহাকাশযানটিকে ফেলে রেখেই সুনীতা এবং ব্যারিকে ফিরিয়ে আনা যেতে পারে। কিন্তু যদি ৮০ শতাংশ তথ্য পাওয়া যায় এবং সেই নিরিখে মহাকাশে মহাকাশযানটির উপর একবার পরীক্ষানিরীক্ষা চালানো যায়, সেক্ষেত্রে পুরো তথ্য হাতে আসবে। তখন Starliner সম্পূর্ণ তথ্য আনতে পারবে।
এই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে ফিরে গিয়েছেন সুনীতা এবং ব্যারি। সেখানে বাকি নভোশ্চরদের সঙ্গে গবেষণার কাজে হাত লাগিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌঁছনোর পথেও মহাকাশযানটি থেকে ছিদ্রপথে হিলিয়াম বেরোতে দেখা গিয়েছে। পাশাপাশি থ্রাস্টারেও সমস্যা দেখা দেয়। মহাকাশযানের নীচে যে নলাকার অংশটি যুক্ত রয়েছে, তাকে সার্ভিস মডিউল বলে, তাতেই উড়ানের শক্তি মজুত থাকে। সেটিতেও বেশ কিছু সমস্যা দেখা দেয়। ফলে গোঁত্তা খেতে খেতে, বিপদ মাথায় নিয়ে আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে পৌঁছন সুনীতা এবং ব্য়ারি।
Boeng Starliner-এর নকশা যেভাবে তৈরি হয়েছে, সেই অনুযায়ী, সার্ভিস মডিউলটি পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার মতো অবস্থায় থাকবে না। ফলে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে মহাকাশযানটি প্রবেশ করার আগেই সেটিকে ধ্বংস করে দেওয়ার কথা রয়েছে। আপাতত আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনেই মহাকাশযানটি নোঙর করা হয়েছে। সত্যি সত্যিই সুনীতা এবং ব্যারিকে মহাকাশে ৯০ দিন রাখা হবে কি না, সেই নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। স্টিচ জানিয়েছেন, ৯০ দিন মহাকাশে থাকার জন্য প্রথমে যানটির ব্যাটারির ক্ষমতা যাচাই করতে হবে। আপাতত আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে ব্যাটারি চার্জ দেওয়া হচ্ছে। সব ঠিক থাকলে ৪৫ দিন কেন ৯০ দিনও টেনে দেওয়া যাবে।
NASA এবং বোয়িং সংস্থার বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠছে ইতিমধ্যেই। মহাকাশ গবেষণা নিয়ে কাজ করা হুইসলব্লোয়ারদের দাবি, রকেটে যে প্রযুক্তিগত ত্রুটি রয়েছে, ছিদ্রপথে হিলিয়াম বেরিয়ে আসছে, তা আগে থেকেই জানত NASA এবং বোয়িং। সেই সমস্যার পুরোপুরি সমাধান না করেই সুনীতা এবং ব্যারিকে মহাকাশে পাঠায় তারা। সেই কারণেই সুনীতা এবং ব্যারি মহাকাশে আটকে রয়েছেন এবং তাঁদের নিরাপদে পৃথিবীতে ফেরা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে বলে অভিযোগ।
এই অভিযান নিয়ে NASA-র সঙ্গে ৪৫০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছিল বোয়িং। এখনও পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকা খরচ হয়ে গিয়েছে। তার পরও কেন ঝুঁকিপূর্ণ মহাকাশযানটিতে চাপিয়ে সুনীতা এবং ব্যারিকে মহাকাশে পাঠানো হল, উঠছে প্রশ্ন। ইলন মাস্কের SpaceX সংস্থার Crew Dragon-এর সঙ্গে পাল্লা দেওয়ার আদৌ উপযুক্ত কি না Boeng Starliner, সেই প্রশ্নও উঠছে। কারণ ২০২০ সাল থেকে লাগাতার আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে রসদ সরবরাহ করে আসছে Crew Dragon. আর নভোশ্চরদের নিয়ে প্রথম অভিযানে গিয়েই এই অবস্থা Boeng Starliner-এর।