নয়াদিল্লি: মাত্র কয়েকদিনের অভিযানে গিয়ে ৪২ দিন আটকে মহাকাশে। ভারতীয় বংশোদ্ভূত নভোশ্চর সুনীতা উইলিয়ামস এবং তাঁর সহযাত্রী ব্যারি বুচ উইলমোর এখনও আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনেই রয়েছেন। যান্ত্রিক গোলযোগ সারিয়ে বোয়িং স্টারলাইনার মহাকাশযানটিকে সক্রিয় করার চেষ্টা চালাচ্ছেন তাঁরা। আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে গবেষণার কাজেও হাত দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় মহাকাশে তাকার দরুণ সুনীতা এবং ব্যারির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। (Sunita Williams)


গত ৫ জুন মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দেন সুনীতা এবং ব্যারি। মাত্র সাত দিনের অভিযানে গিয়েছিলেন তাঁরা। কিন্তু মহাকাশযানে যান্ত্রিক গোলযোগের জেরে পৃথিবীতে ফেরা হয়নি নির্ধারিত সময়ে। আপাতত আন্তর্জাতিক স্পেস স্টেশনে আশ্রয় নিয়েছেন তাঁরা। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা NASA এখনও পর্যন্ত তাঁদের ফেরার দিন জানাতে পারেনি। তবে তাঁরা নিরাপদে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কিন্তু ৪২ দিন ধরে মহাকাশে আটকে থাকা সুনীতা এবং ব্যারির স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। (Sunita Williams Health Risks)


পৃথিবীর থেকে মহাকাশের পরিবেশ একেবারে আলাদা। মাইক্রোগ্র্যাভিটি অর্থাৎ মাধ্যাকর্ষণ শক্তির আকর্ষণ না থাকার ফলে নভোশ্চররা ভেসে বেড়ান। সূর্যের ক্ষতিকর বিকিরণের সংস্পর্শে চলে আসেন তাঁরা। এক্ষেত্রে সুনীতা এবং ব্যারি একটি বদ্ধ জায়গায় আটকে রয়েছেন, যা তাঁদের স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। মাধ্যাকর্ষণ শক্তির অনুপস্থিতিতে গোটা শরীর থেকে তরল ঊর্ধ্বভাগে গিয়ে জমা হয়। এর ফলে মুখ ফুলে যায়, নাকবন্ধ হয়ে যায়, পা কার্যতই তরলশূন্য হয়ে যায়। শরীরে রক্তের পরিমাণ কমে যায় যেমন, তেমনই রক্তচাপে তারতম্যও ঘটে। 


আরও পড়ুন: New Planets Discovered: মহাশূন্যে ৬ নতুন গ্রহের আবিষ্কার, সবমিলিয়ে হল ৫৫০২, তাও সৌরজগতের বাইরে


বায়ুমণ্ডল এবং চৌম্বকীয় ক্ষেত্রের রক্ষাকবচ থাকায় সূর্যের ক্ষতিকর বিকিরণ থেকে রক্ষা পান পৃথিবীবাসী। কিন্তু মহাকাশে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষতিকর বিকিরণের সংস্পর্শে আসেন নভোশ্চররা।  এর ফলে, দীর্ঘদিন পর পৃথিবীতে ফিরলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন নভোশ্চররা। প্রায়শই জ্ঞান হারান তাঁরা। মাথা ঘোরে। মাধ্যাকর্ষণ শক্তিশূন্য জায়গায় দীর্ঘদিন থাকায় হাড়গুলি কার্যক্ষমতা হারায়। দ্রুত পেশির ক্ষয় হয়, বিশেষ করে পা এবং পিঠের। মেরুদণ্ড এবং তলপেটের হাড় ক্ষয়ে যায়।  শরীরে তরলের বন্টন ঘেঁটে যাওয়ায় ইউরিনারি সিস্টেমও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে। হরমোনের মাত্রায় ওঠাপড়া চোখে পড়ে।


দীর্ঘদিন মহাকাশে থাকার ফলে নভোশ্চরদের শরীরের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হয়, যা সরাসরি DNA-র ক্ষতি করে, বাড়িয়ে তোলে ক্যান্সারের ঝুঁকি। অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলির মধ্যে অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়। দীর্ঘদিন মাধ্যকর্ষণ শক্তির বাইরে থাকার দরুণ, পৃথিবীতে ফিরে চোখ এবং হাতের মধ্যে সামঞ্জস্য থাকে না। স্পেস মোশন সিকনেসও দেখা দেয়। বমিভাব আসে. অসলগ্ন হয়ে পড়েন নভোশ্চররা। স্নায়ুর উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ে। আপাতত মহাকাশে তাঁদের বিকল মহাকাশযানটি ঠিক করার কাজে লিপ্ত সুনীতা এবং ব্যারি। মাটি ছাড়া চারাগাছের বৃদ্ধির কাজেও লিপ্ত। কিন্তু দীর্ঘদিন মহাকাশে আটকে থাকা সুনীতা এবং ব্যারির স্বাস্থ্য নিয়েও উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।