কলকাতা: গ্রহ, নক্ষত্রদের নিয়ে রহস্যে মোড়া দুনিয়া মহাশূন্যে (Space News)। তাতে আরও রোমাঞ্চ যোগ করল ‘মহাজাগতিক আয়না’, যা আসলে একটি ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ (Exoplanets)। আমাদের সৌরজগতের বাইরে অন্য কোনও নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে চলা গ্রহকেই ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ বলা হয়। আয়নার মতো ঝকঝকে, উল্টো দিকের জিনিসপত্র গাত্রে প্রতিবিম্বের আকারে ধরা পড়ে বলেই ওই ‘এক্সোপ্ল্যানেট’টিকে ‘মহাজাগতিক আয়না’ বলে উল্লেখ করছেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা।(Science News)


কোনও গ্রহ বা নক্ষত্রর সঙ্গে আয়নার তুলনা এর আগে কখনও শোনা যায়নি। তাই এই মুহূর্তে আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে উঠেছে ‘এক্সোপ্ল্যানেট’ LTT9779 b. পৃথিবী থেকে LTT9779 b-এর দূরত্ব প্রায় ২৬৪ আলোকবর্ষ। যে নক্ষত্রকে প্রদক্ষিণ করে LTT9779 b, তার আলোর ৮০ শতাংশই গায়ে পড়ে প্রতিফলিত হয়। সেই তুলনায় সূর্যের আলোর মাত্র ৩০ শতাংশই পৃথিবীর গায়ে পড়ে প্রতিফলিত হয়। 


LTT9779 b-র গায়ে পড়ে আলোর এই প্রতিফলন এবং তার গাত্রে অন্য বস্তুর প্রতিবিম্ব ধরা পড়ার নেপথ্যেও রয়েছে বৈজ্ঞানিক কারণ। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, LTT9779 b আসলে ধাতব মেঘের আবরণে মোড়া। এক্ষেত্রে গ্যাসের সঙ্গে লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ক্রোমিয়াম, ভ্যানেডিয়ামের মতো ধাতু মিশে বাইরে থেকে একটি আবরণের সৃষ্টি হয়। নক্ষত্রের দিকে যে অংশ থাকে, তাতে রোদ পড়লে অন্যান্য খনিজের সঙ্গে ধাতব কণাগুলিও বাষ্পীভূত হয়।


আরও পড়ুন: Chandrayaan 3: চাঁদের মাটিতে কীসের খোঁজ চন্দ্রযান ৩-এর? উৎক্ষেপণ দেখতে পারবেন আপনিও


কিন্তু মহাশূন্যে তাপমাত্রা ৩ হাজার সেলসিয়াসে পৌঁছে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে অনু-পরমাণুগুলি চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে বায়ুমণ্ডলের জলের সঙ্গে মিশে গিয়ে আরও উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। তাতেই ওই ‘এক্সোপ্ল্যানেট’-এর এমন ঝকঝক রূপ, আয়নার মতো উপস্থিতি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।


আমাদের সৌরজগতে শুক্রগ্রহের উপস্থিতিও অত্যন্ত উজ্জ্বল। বাইরে মেঘের পুরু স্তর থাকায় সূর্যরশ্মির ৭৫ শতাংশ প্রতিফলিত হয়ে তার গায়ে লেগে। পৃথিবীর চেয়ে LTT9779 b পাঁচগুণ বেশি বড় বলে জানা গিয়েছে। অর্থাৎ মহাজগতে সর্ববৃহৎ আয়নাসম বস্তু বলেও ধরা হচ্ছে তাকে। এই LTT9779 b এক্সোপ্ল্যানেটই উদ্বিগ্ন করে তুলেছে বিজ্ঞানীদের।


দিয়েগো পোর্তালেস ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানী জেমস জেনকিন্স বলেন, “কল্পনা করুন, নিজের নক্ষত্রের গা ঘেঁষে একটি বিশ্ব দাউদাউ করে জ্বলছে। তাকে ঘিরে থাকা ধাতব মেঘের আস্তরণ ভেসে বেড়াচ্ছে মহাশূন্যে এবং তা থেকে ফোঁটা ফোঁটা টাইটেনিয়াম ধরে পড়ছে।” বিজ্ঞানীদের মতে, মহাশূন্যে LTT9779 b-র অবস্থান কোনও ভাবেই কাম্য ছিল না। বিজ্ঞানী ভিভিয়েন পারমেনতিয়েরের মতে, এই ধরনের গ্রহের আয়ু সাধারণত বেশি হয় না। নক্ষত্রের দ্বারাই এদের বায়ুমণ্ডলে বিস্ফোরণ ঘটে। পড়ে থাকে শুধু পাথর। তবে LTT9779 b-র ক্ষেত্রে ধাতব মেঘ বাইরের জগতের গ্রহটিকে খুব বেশি তেতে উঠতে দেয় না। তাই LTT9779 b-র আয়ু নিয়ে এখনই তেমন কোনও আশঙ্কার কারণ দেখছেন না তাঁরা।


২০২০ সালে আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট LTT9779 b-র হদিশ পায়। তবে এর প্রতিফলন  ক্ষমতার হদিশ মেলে অতি সম্প্রতি, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির তল্লাশি অভিযানে। মাঝে বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিল LTT9779 b। পরে আবার সন্ধান মেলে।