নয়াদিল্লি: নিকট ভবিষ্যতে তেমন সম্ভাবনা না থাকলেও, আগামী ৫০০ বছরের মধ্যে সূর্যের মৃত্যু ঘটবে বলে আশঙ্কা রয়েছে বিজ্ঞানীদের। একটু একটু করে সূর্যের জ্বালানি শেষ হয়ে যাবে বলে দাবি তাঁদের। মৃত্যু পথগামী সূর্যের সঙ্গে কি তাহলে মৃত্যু হবে পৃথিবীরও? এই প্রশ্ন নতুন নয়। বিকল্প কোনও রাস্তা রয়েছে কিনা, রয়েছে এমন প্রশ্নও। আর এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়েই সূর্যের বিকল্প হিসেবে কৃষ্ণগহ্বরকে ভাবতে শুরু করেছেন অনেকে। কিন্তু যদিও বা সূর্যের জায়গা নেয় কৃষ্ণগহ্বর বা সূর্যই যদি আগামী দিনে কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়, সেক্ষেত্রেও কি পৃথিবীর টিকে থাকার কোনও সম্ভাবনা রয়েছে? এর উত্তর সহজ নয় মোটেই। (Science News)


সূর্যকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে গোটা সৌরমণ্ডল। পৃথিবীর সমস্ত সৃষ্টির নেপথ্যেও রয়েছে সূর্যই। তাই সূর্যহীন পৃথিবী এককথায় অকল্পনীয়। কিন্তু সূর্যের মৃত্যু হলে, কী হতে পারে, এই চিন্তা শুধু বিজ্ঞানপ্রেমী মানুষজনকে নয়, তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে বিজ্ঞানীদেরও। আর তার উত্তর খুঁজতে গিয়ে একাধিক তত্ত্ব উঠে এসেছে। সেগুলি বুঝতে হলে আগে কৃষ্ণগহ্বর সম্পর্কে সঠিক ধারণা গড়ে ওঠা জরুরি। (Space Science)


স্যর আইজ্যাক নিউটনের মাধ্যকর্ষণ সূত্র অনুযায়ী, মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তুকণা পরস্পরকে নিজের দিকে আকর্ষণ করে। এমন দু'টি বস্তুকণার আকর্ষণ বলের মান, তাদের ভরের গুণফলের সমানুপাতিক এবং তাদের মধ্যবর্তী দূরত্বের বর্গের ব্যাস্তানুপাতিক। অর্থাৎ দু'টি বস্তুর ভর বেশি হলে, তাদের আকর্ষণ বল আরও বেশি হয়, আর মধ্যেকার দূরত্ব বেশি কলে আকর্ষণ বল হয় কম। কৃষ্ণগহ্বর মহাশূন্যের এমন কিছু জায়গা, যেখানে সামান্য জায়গার মধ্যে অনেক বেশি পদার্থ ঘনীভূত আকার ধারণ করে থাকে, যার আকর্ষণ শক্তি হয় প্রবল। আলো-সহ আশেপাশের সব কিছু ভিতরে কার্যত টেনে নেয়। কিন্তু ভিতর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না কিছুই। কোনও বড় নক্ষত্র ছিন্নভিন্ন হয়ে নিজের কেন্দ্রে জড়ো হলে, তা থেকে কৃষ্ণগহ্বরের সৃষ্টি হয়।  


আরও পড়ুন: Halley's Comet: দীর্ঘ বিচ্ছেদপর্বে ইতি, ৩৮ বছর পর তাকাল মুখ তুলে, পৃথিবীর আকাশে ফিরছে হ্যালির ধূমকেতু


তাই আগামী দিনে সূর্য যদি কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয় বা সূর্যের জায়গা নেয় সমান ভরের কোনও কৃষ্ণগহ্বর, তাহলে পৃথিবীর কী হবে? এর যে উত্তর দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা, তা হল,  নিউটনের মাধ্যাকর্ষণ শক্তি অনুযায়ী, সূর্যের সমান ভরের কৃষ্ণগহ্বরে উদয় ঘটলে, পৃথিবী এবং তার মধ্যে আকর্ষণ বলের তেমন তারতম্য হবে না। ফলে কক্ষপথ থেকে ছিটকে যাবে না পৃথিবী। সামান্য আগুপিছু যদিও বা হয়, অন্য গ্রহগুলিও একই ভাবে এগিয়ে যাবে তারা। কিন্তু অত্যধিক তাপমাত্রার জন্য বর্তমানে যেখানে সূর্যের কাছে ঘেঁষা যায় না, কৃষ্ণগহ্বরের কাছে যাওয়ায় সেই সমস্যা থাকবে না। কিন্তু যত বেশি কৃষ্ণগহ্বরের কাছে পৌঁছবে পৃথিবী, ততই পৃথিবীর উপর কৃষ্ণগহ্বরের মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাব বাড়বে। তাতে একসময় আর ফেরা যাবে না। 


শুধু তাই নয়, সূর্যের মতো কৃষ্ণগহ্বর পৃথিবীকে শক্তি জোগাতে বা আলোকিত করতে পারবে না। সূর্যও যদি কৃষ্ণগহ্বরে পরিণত হয়, পৃথিবীতে প্রাণ থাকবে না। কৃষ্ণগহ্বর যখন আড়ে-বহরে বাড়তে শুরু করবে, তার টানে ছিন্নভিন্ন হয়ে যাবে পৃথিবী। ধুলোর রাশি ছাড়া আর কিছু পড়ে থাকবে না মহাশূন্যে। তবে নিকট ভবিষ্যতে এমনটা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদি কখনও ঘটে, তার ফল কী হতে পারে, শুধু তারই উত্তর খুঁজতে গিয়ে এই তথ্যগুলি সামনে এনেছেন বিজ্ঞানীরা।