নয়াদিল্লি: মানবসভ্যতার সূচনা একদিনে হয়নি। জঙ্গল থেকে গুহা, সেখান থেকে নাগরিকজীবনে মানুষের বিবর্তনে কোটি কোটি বছর সময় লেগেছে। এবার কি তাহলে বন্যজীবনেও মানবসভ্যতার প্রভাব পড়তে শুরু করল? এই প্রশ্ন উস্কে দিয়েছে বিশেষ একটি ঘটনা। কাঁকড়া ধরার জাল টেনে মাছ খেতে দেখা গিয়েছে একটি নেকড়েকে। আর তাতেই নড়েচড়ে বসেছেন বিজ্ঞানীরা। (Wolf Using Tool)
কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া থেকে এই ঘটনা সামনে এসেছে। অবিকল মানুষের কায়দায় জল থেকে কাঁকড়া কাঁকড়া ধরার জাল তুলে এনেছে নেকড়েটি। তার পর কাঁকড়ার ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহৃত ইলিশজাতীয় মাছও খেয়েছে চিবিয়ে। সেই ভিডিও সামনে আসেতই শোরগোল পড়ে গিয়েছে। মানুষকে দেখেই যে নেকড়েটি জাল টেনে তুলতে শিখেছে, সেব্যাপারে নিশ্চিত বিজ্ঞানীরা। আর তাই প্রশ্ন উঠছে, বন্যজীবন ছেড়ে পশুরাও কি তাহলে নাগরিক জীবনে অভ্যস্ত হওয়ার দিকে এগোচ্ছে? তাদের আচরণ কি পরিবর্তন ঘটছে? (Science News)
ব্রিটিশ কলম্বিয়ার স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকার আদিবাসীরা একটি পরিবেশ তত্ত্বাবধনা কর্মসূচিতে যুক্ত। ইউরোপিয়ান সবুজ কাঁকড়া সেখানকার বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংস করে বলে, ফাঁদ হিসেবে জাল পেতে রাখা হয়। কিন্তু কিছু দিন ধরে জালগুলিকে বেশ ক্ষতিগ্রস্ত অবস্থায় পাওয়া যায়। কাঁকড়াদ্বারা নয়, বরং ভালুক বা নেকড়ের থাবা ও দাঁত লেগেই জাল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে বোঝা যায়। ডাঙার কাছাকাছি কিছু জাল পাতা ছিল যেমন, তেমন গভীর জলেও জাল পাতা ছিল।
কী ঘটছে বোঝার জন্য, ক্যামেরা বসানো হয় জলাশয়ের চারপাশে। জাল পেতে রাখা হয় জলে। সেই ক্যামেরায় যে দৃশ্য ধরা পড়েছে, তা দেখে চমকে উঠেছেন সকলেই। দেখা গিয়েছে, জলে নেমে রীতিমতো দড়িতে টান দিচ্ছে নেকড়েটি। ধৈর্য সহকারে জালটিকে টেনে তুলে আনছে পাড়ে। তার পর কৌটোর আকারের পাত্রের মধ্যে টোপ হিসেবে মাছ বের করছে মুখ দিয়ে। ডাঙায় উঠে এসে সেই মাছ খাচ্ছে তৃপ্তি সহকারে।
একটি স্ত্রী নেকড়েই ধরা পড়েছে ক্যামেরায়। এই প্রথম বন্য পশুকে যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে দেখা গেল। ওই অঞ্চলে আর কত নেকড়ে ওই উপায় জানে, সেব্যাপারে কৌতূহল বেড়ে গিয়েছে। তবে মানুষকে দেখেই যে নেকড়েটি জাল টেনে তুলতে শিখেছে সেব্যাপারে নিশ্চিত স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ নিউ ইয়র্কের অধ্যাপক কাইল আর্টেল। তিনি জানিয়েছেন, একটি বিষয় সবেচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে তাঁর যে, নির্ভুল ভাবে বেশ কয়েকটি ধাপ পেরিয়ে তবেই মাছের নাগাল পেয়েছে নেকড়েটি। অর্থাৎ মানুষের মতো করেই সমস্যা সমাধানের রাস্তা বুঝেছে। উপর থেকে জালটি দেখাও যাচ্ছিল না, জলের নীচে ছিল সেটি। অর্থাৎ একেবারে পরিকল্পনা মাফিক, বুদ্ধি খাটিয়েই কাজটি সম্পন্ন করেছে ওই নেকড়ে।
সাতের দশকে জেন গুডঅল একটি শিম্পাঞ্জির যন্ত্র ব্যবহারের কথা তুলে ধরেন প্রথমে। ডলফিন, হাতি, কিছু পাখি এমনকি কিছু পতঙ্গকেও কিছু ক্ষেত্রে মানুষের মতো আচরণ করতে দেখা গিয়েছে। এক্ষেত্রে নেকড়েটিও যে যন্ত্রের ব্যবহার করেছে, তা মেনে নিয়েছেন ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডো বোল্ডারের অধ্যাপক তথা পশু-আচরণ বিশেষজ্ঞ মার্ক বেকফ।