নয়াদিল্লি: উত্তরোত্তর জনসংখ্যাবৃদ্ধি মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল। ২১০০ আসতে আসতে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যা ১১০০ কোটিতে গিয়ে ঠেকতে পারে বলে মিলেছিল পূর্বাভাস। কিন্তু গবেষণায় এ বার সম্পূর্ণ উল্টো তথ্য সামনে এল (World Population)। বর্তমানে জন্মহার যে জায়গায় রয়েছে, সেই নিরিখে ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি থমকে যাবে। তার পর শতাব্দীর শেষ নাগাদ জনসংখ্যা ৬০০ কোটিতে গিয়ে ঠেকবে (Population Growth)।


শতাব্দী শেষ হতে হতে ২০০ কোটি কমবে জনসংখ্যা!


অলাভজনক সংস্থা 'দ্য ক্লাব অফ রোমে’র তরফে এই নয়া গবেষণার রিপোর্ট সামনে এসেছে। তাতে বলা হয়েছে, বর্তমানে জন্মহার যে জায়গায় রয়েছে, এই ধারা বজায় থাকলে আগামী দিনে পৃথিবীর জনসংখ্যা কমবে বই বাড়বে না।  বর্তমানে পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭৯৬ কোটি। চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি তা সর্বোচ্চ ৮৬০ কোটিতে গিয়ে ঠেকবে। কিন্তু শতাব্দী শেষ হতে হতে ২০০ কোটি কমবে জনসংখ্যা।


বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গবেষণা একদিকে যেমন আশাজনক, তেমনই দুঃসংবাদও। তাঁদের মতে, জনবসংখ্যা কমলে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরে আসবে বইকি! কিন্তু এতে সভ্যতার ভারসাম্য বিঘ্নিত হবে। কারণ প্রবীণ মানুষের সংখ্যা বাড়বে। সেই তুলনায় কমে যাবে কর্মক্ষম মানুষের সংখ্যা। ফলে স্বাস্থ্য পরিষেবা, পেনশন সংক্রান্ত অর্থনৈতিক বোঝার চাপ বাড়বে যুবসমাজের ঘাড়ে।


আরও পড়ুন: Supreme Court: 'সময়মতো বিচার শেষ না করা অন্যায়', ৭ বছর ধরে জেলে থাকা অভিযুক্তদের জামিন দিল সুপ্রিম কোর্ট


Earth4AllCollective-এর পরিবেশ বিজ্ঞাবনী এবং অর্থনীতিবিদদের গবেষণায় এই নয়া তথ্য উঠে এসেছে। ২৭ মার্চ তাঁদের গবেষণাপত্রটি প্রকাশিত হয়েছে ওয়র্কিং পেপারে। তাতে বলা হয়েছে, যে সব দেশে মাথাপিছু আয় তুলনামূলক কম, সেখানে জন্মহারে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। আগামী এর প্রভাব অনুভূত হবে গোটা বিশ্বে।


১৯৭২ সালে এই 'ক্লাব অফ রোম'ই জনসংখ্যা বিস্ফোরণ ঘটবে বলে সতর্ক করেছিল। তাদের নয়া গবেষণায় এ বার জনসংখ্যা উদ্বেগজনক হারে কমে যাওয়ার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। যদি তাদের এই পরিসংখ্যান রাষ্ট্রপুঞ্জের হিসেবের একেবারে উল্টো। কারণ ২০২২ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জ জানায়, ২০৫০ সাল নাগাদ গোটা বিশ্বের জনসংখ্যা ৯৭০ কোটিতে গিয়ে ঠেকবে। ২১০০ সাল আসতে আসতে তা গিয়ে ঠেকবে ১০৪০ কোটিতে। একদশক আগে আবার রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছিল, ২১০০ আসতে আসতে ১১০০ কোটি হবে পৃথিবীর জনসংখ্যা।


জনসংখ্যার বৃদ্ধি নির্ধারণে সাধারণত মেয়েদের সামাজিক স্বাধীনতা, শিক্ষা, গর্ভনিরোধ এবং শারীরিক অধিকারকে এগিয় রাখা হয়। Earth4All-এর পদ্ধতি কিছুটা আলাদা। পরিবেশ এবং অর্থনৈতিক দিকটিও পর্যালোচনা করে দেখে তারা। এর পাশাপাশি প্রাচুর্য, সামাজিক অসাম্য, খাদ্য উৎপাদন, আয়ের পর্যায়, বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবকেও মাপকাটি হিসেবে ধরা হয়।


ভবিষ্যতের পূর্বাভাস দিতে গিয়ে দু'টি বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে নয়া গবেষণা, ১) যেমন চলছে তেমন থাকবে, ২) আশাজনক পরিস্থিতি। প্রথমটির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, প্রশাসনিক নিষ্ক্রিয়তায় সামাজিক অসাম্য আরও বড় আকার ধারণ করবে। তাতে দুর্বল শ্রেণির মানুষ বলি হবেন। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, শিক্ষায় যদি আরও বিনিয়োগ বাড়ে, সমাজে সাম্যের প্রতিষ্ঠা হয়, সবুজায়ন বাড়ে,তাতে আগামী শতাব্দীর আগে সুরাহা হবে।


জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ে নয়া রিপোর্টে উদ্বেগ


জনসংখ্যার উত্তরোত্তর বৃদ্ধির ফলেই পৃথিবী ধীরে ধীরে বসবাসরে অযোগ্য হয়ে পড়ছে বলে যে তত্ত্ব রয়েছে, নয়া গবেষণায় তা-ও খারিজ করে দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য শুধুমাত্র জনসংখ্যার বৃদ্ধি দায়ী নয়। বরং ধনকুবেররাই নিজেদের স্বার্থ মতো পরিবেশকে সাবাড় করে চলেছেন।