নয়াদিল্লি: সূর্য অস্ত যায় এই মহাসাগরের বুকে। দিগ্বিদিকের ঠিক থাকে না। কুমেরু মহাসাগর বা আন্টার্কটিক মহাসাগর তথা দক্ষিণ মহাসাগরকে তাই Sea of Darkness-ও বলা হয়। আর সেই কুমেরু মহাসাগর নিয়েই এবার বিপদবাণী শোনালেন বিজ্ঞানীরা। জানালেন, কুমেরু মহাসাগরের প্রবল শান্ত হচ্ছে, থিতিয়ে আসছে মহাসাগরের তেজ। জলবায়ু পরিবর্তনের দরুণই এমনটা ঘটছে এবং এর ফল মারাত্মক হতে পারে বলে জানালেন তাঁরা। (Antarctic Ocean Current Slowing Down)


দীর্ঘ দিন ধরে গবেষণা চালিয়ে এই বিপদ টের পেয়েছে ইউনিভার্সিটি অফ মেলবোর্নের বিজ্ঞানীরা। তাঁদের গবেষণাপত্রটি Environmental Research Letters জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। Antarctic Circumpolar Current (ACC) অর্থাৎ পৃথিবীর বৃহত্তম মহাসাগরীয় স্রোত, যা আন্টার্কটিকা মহাদেশকে ঘিরে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়, যা আটলান্টিক, প্রশান্ত এবং ভারত মহাসাগরকে সংযুক্ত করে, সেটি বৈশ্বিক জলবায়ুকে অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণ করে। সমুদ্রে তাপ ও লবণ বণ্টন এবং কার্বন ডাই অক্সাইড গ্রহণে এর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। উষ্ণ জলরাশিকে আন্টার্কটিকায় পৌঁছতে দেয় না। উপসাগরীয় স্রোতের চেয়ে এই স্রোত চার গুণ বেশি শক্তিশালী। (Antarctic Circumpolar Current


বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, কুমেরু মহাসাগরীয় স্রোত যে ভাবে শ্লথ হয়ে পড়ছে, তাতে ২০৫০ সাল নাগাদ ২০ শতাংশ তেজ কমে যাবে। উচ্চ কার্বন নির্গমনকে এর জন্য় দায়ী করছেন বিজ্ঞানীরা। আন্টার্কটিকার বরফ ইতিমধ্যেই গলতে শুরু করেছে। এর প্রভাবও কুমেরু মহাসাগরের স্রোতের উপর পড়ছে। আন্টার্কটিকাকে ঘিরে থাকা আটলান্টিক, প্রশান্ত এবং ভারত মহাসাগরের দক্ষিণ অংশই Southern Ocean কুমেরু মহাসাগর নামে পরিচিত। 


গবেষণার সঙ্গে যুক্ত অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর বিশাখদত্ত গায়েন বলেন, “বর্তমান ‘ইঞ্জিন’ যদি ভেঙে পড়ে, এর ফল হবে মারাত্মক। জলবায়ু পরিবর্তন আরও গুরুতর হয়ে উঠবে, নির্দিষ্ট কিছু অঞ্চলের জলবায়ু আরও চরম হয়ে উঠবে, বাড়বে বিশ্ব উষ্ণায়ন। বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন শোষণের যে ক্ষমতা মহাসাগরের, সেই ক্ষমতা হ্রাস পাবে।”


গবেষণা বলা হয়েছে, সাদার্ন বুল কেল্প, চিংড়ি, মোলাস্কের মতো প্রজাতিকে আন্টার্কটিকায় ঢুকতে বাধা দেয় কুমেরুমহাসাগরীয় স্রোত। কিন্তু যেভাবে থিতিয়ে আসছে মহাসাগর, তাতে এই ধরনের প্রাণীদের অস্তিত্ব সঙ্কটের মুখে, যা মানুষের জন্য খাদ্যাভ্যাসের জন্য সঙ্কট ডেকে আনবে। আবার প্রভাব পড়বে আন্টার্কটিকার পেঙ্গুইনদের খাদ্য়াভ্যাসের উপরও। ২০১৫ সালে প্যারিস চুক্তির আওতায় পৃথিবীর সব দেশ বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমিয়ে আনতে সম্মত হয়েছিল, অর্থাৎ শিল্পায়নের আগের অবস্থায়। কিন্তু তাপমাত্রা লাগাতার বেড়েই চলেছে, যার দরুণ আন্টার্কটিকার বরফের তাদরও পাতলা হতে শুরু করেছে। শুধু তাই নয়, জলবায়ু রক্ষার ওই চুক্তি থেকে নাম পর্যন্ত তুলে নিতে শুরু করেছে তাবড় শক্তিশালী দেশ। এমন পরিস্থিতিতে পৃথিবীর স্বাস্থ্যরক্ষা নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়ছে।