কলকাতা: জলের অপর নাম জীবন- প্রাইমারি স্কুলে নানা সময়ে রচনা লিখতে গিয়ে এই লাইন আমরা প্রায় সকলেই লিখেছি। নানা সময়ে পড়েছি বা শুনেছি বহুশ্রুত একটি কবিতার লাইনও। 'water, water everywhere and not a drop to drink'-- স্যামুয়েল টেলর কোলরিজের লেখা বিখ্যাত কবিতার একটি লাইন। বিশ্বের ৯০ ভাগ জল- কিন্তু তার সামান্য কিছু অংশ পানীয় হিসেবে খাওয়ার যোগ্য। অর্থাৎ পরিস্রুত পানীয় জল খুব বেশি নেই। যেটুকু রয়েছে সেটাও সম-বণ্টন নয়। অন্যদিকে ক্রমশ জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে। ফলে সাবধান না হলে ভয়াবহ জলকষ্টের মুখে পড়তে পারে গোটা পৃথিবী। বিজ্ঞানী ও পরিবেশবিদদের একটি বড় অংশ বহুদিন ধরেই এমন সতর্কবার্তা দিয়ে আসছেন।
এই পরিস্থিতিতেই ২২ মার্চ পালিত হচ্ছে বিশ্ব জল দিবস (World Water Day). প্রতিবছর এই দিনটিতে পালিত হয় বিশ্ব জল দিবস। Sustainable Goal Development যা যা নেওয়া হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে জল ও শৌচের জন্য যা যা পরিকল্পনা করা হয়েছে। তা সময়ের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য রয়েছে। সেই কারণেই সচেতনতা প্রসারের জন্য এমন একটি দিন পালন করা হয়। সাধারণ মানুষের মধ্যে জল সংরক্ষণের গুরুত্ব বোঝাতে এবং জল অপচয় কমাতে বার্তা দেওয়া হয় এই দিনটিকে সামনে রেখে।
১৯৯২ সালে প্রথম UN-General Assembly-তে বিশ্ব জল দিবস পালনের জন্য একটি রেজোলিউশন নেওয়া হয়েছিল। তারপরে ২২ মার্চকে বিশ্ব জল দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৯৩ সালে প্রথম এই দিনটি পালিত হয়েছিল।
কেন সতর্ক থাকতে হবে?
UN-এর মতে এখন বিশ্বে প্রতি ৪ জনের মধ্যে অন্তত ১ জন পরিস্রুত পানীয় জল পান না। জলঘটিত নানা রোগে বিশ্বের নানা দেশে (বিশেষ করে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া, স্বল্প উন্নত দেশে) বহু মৃত্যু ঘটে। জীবনযাপনের মান ব্যহত হয়। Organisation for Economic Co-operation and Development (OECD)-এর মতে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বে জলের চাহিদা অন্তত ৫৫ শতাংশ বাড়বে।
বিশ্বের মোট যা জল রয়েছে তার মধ্যে মাত্র ৩ শতাংশ পানের যোগ্য (Fresh Water)। তারও মধ্যে মাত্র ১ শতাংশ বিভিন্ন হ্রদ ও নদীতে রয়েছে যা মানুষ সরাসরি ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু ক্রমবর্ধমান দূষণের কারণে সেইটুকু জলও ক্রমশ দূষিত হয়ে চলেছে। যার ফলে মানবস্বাস্থ্যে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পোষাক থেকে খাদ্য প্রক্রিয়াকর, পরমাণু থেকে বিদ্যুৎ শিল্প- হেন কোনও শিল্প নেই যার জন্য জল দূষিত হয় না। কৃষিক্ষেত্রে লাগামহীন সারের ব্যবহারও জল দূষণের অন্যতম কারণ। অনেকসময় জলশোধন প্রক্রিয়াও ঠিকমতো হয় না। সব মিলিয়ে বিশ্বে ভবিষ্যতে জলের সমস্যা আরও মারাত্মক আকার ধারণ করবে বলেই আশঙ্কা বিজ্ঞানীদের।
এই কারণেই জলের অপচয় রোখার জন্য আন্তর্জাতিক স্তর থেকে পদক্ষেপের জন্য বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। নগরয়ানের সঙ্গে তাল মিলিয়ে জলশোধন প্রক্রিয়া আরও আধুনিক করা, বৃষ্টির জল সঞ্চয় করে ব্যবহার করার মতো প্রক্রিয়া আরও উন্নত করারও চেষ্টা হচ্ছে। এই বিপদ কাটিয়ে ওঠা যাবে? নাকি জলের সঙ্কটের কাছে মাথা নোয়াতে হবে? উত্তর লুকিয়ে সচেতন পদক্ষেপে।