মহাকাশ অভিযানের নিরিখে একাধিক মাইলফলক তৈরি হল ২০২৪ সালে। প্রথম বার চাঁদের মাটির নমুনা পৃথিবীতে তুলে আনা হোক বা প্রথমবার মহাকাশে মানুষের হাঁটা, অথবা প্রথম বার সূর্যের স্পর্শ পাওয়া, এই এক বছরে মহাকাশ গবেষণায় একের পর এক সাফল্য মিলল। বিশ্বের তাবড় দেশের সঙ্গে ভারতও মহাকাশ অভিযানে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করল। (Year Ender 2024)
পুনর্ব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান: ২০২৪ সালে ইতিহাস রচনা করেছে ধনকুবের ইলন মাস্কের সংস্থা SpaceX. মহাকাশ অভিযানে কার্যতই বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেছে তারা। পুনর্ব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান ব্যবহারে প্রথম ধাপে উতরে গিয়েছে তারা। ভারী ওজনের বুস্টার এবং রকেটের উপরের অংশ মহাকাশ থেকে পুনরায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। শুধু পৃথিবীতে ফিরে আসাই নয়, উৎক্ষেপণ টাওয়ারের উপর নির্ধারিত জায়গায় অবতরণও করে। এমনিতে মহাকাশ অভিযানে প্রচুর খরচ। প্রতিবার নতুন রকেট তৈরি মুখের কথা নয়। পুনর্ব্যবহারযোগ্য মহাকাশযান তৈরির উপর সেই কারণেই জোর দেওয়া।
সূর্যের স্পর্শপ্রাপ্তি: বড়দিনের প্রাক্কালে সূর্যের স্পর্শ পায় NASA-র Parker Solar Probe. আমেরিকার স্থানীয় সময় অনুযায়ী, ২৪ ডিসেম্বর সকাল ৬টা বেজে ৫৩ মিনিটে সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছি ছিল Parker Solar Probe. তাপমাত্রা ছিল ৯৪১.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্যের স্পর্শ পাওয়ার পরও দিব্যি আগের মতো কাজ করছে সৌরযানটি।
ফাইল চিত্র।
চাঁদের মাটির নমুনা সংগ্রহ: চিনের Chang'e 6 অভিযান অসাধ্য সাধন করে দেখিয়েছে। China National Space Administration চাঁদের মাটির নমুনা সংগ্রহের অভিযান চালায়। আর তাতেই প্রথমবার চাঁদের মাটির নমুনা পৃথিবীতে আনা সম্ভব হয়। চাঁদের মাটি পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে, ২৮০ কোটি বছর আগে চাঁদের উল্টো পিঠে সক্রিয় আগ্নেয়গিরি ছিল। (Top 5 Space Achievements)
ফাইল চিত্র।
বেসরকারি চন্দ্রাভিযান: ফেব্রুয়ারি মাসে প্রথম বার চাঁদের মাটিতে পদার্পণ করে কোনও বেসরকারি মহাকাশযান। আমেরিকার হিউস্টনের Intuitive Machines-এর Odysseus চাঁদের মাটিতে অবতরণ করতে সফল হয়। চাঁদের দক্ষিণ মেরু থেকে ৩০০ কিলোমিটার দূরে Malapert গহ্বরের কাছে অবতরণ করে মহাকাশযানটি।
ফাইল চিত্র।
জাপানের চন্দ্রাভিযান: চাঁদের মাটিতে পদার্পণকারী পঞ্চম দেশ হিসেবে ইতিহাস রচনা করে জাপান। তাদের চন্দ্রযান Smart Lander for Investigating Moon (SLIM) চাঁদের মাটি ছোঁয়। আমেরিকা, সোভিয়েত ইউনিয়ন (অধুনা রাশিয়া), ভারত এবং চিনের পর জাপানই পঞ্চম দেশ, যারা চাঁদের মাটি ছুঁতে সফল হয়েছে।
ফাইল চিত্র।
মঙ্গলে অণুজীব: মঙ্গল গ্রহে প্রাণের খোঁজ করতে নেমে অভূতপূর্ব সাফল্য মিলেছে। আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (NASA)-র Perseverance Rover এমন পাথরের সন্ধান পায়, যাতে মঙ্গলের বুকে একসময় অণুজীবের উপস্থিতির ইঙ্গিত মিলেছে। পৃথিবীতে মঙ্গলের মাটির নমুনা এসে পৌঁছতে পারে ২০৩৩ সালে। তখনই এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে।
ফাইল চিত্র।
ভারতের সৌর অভিযান: ২০২৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর উৎক্ষেপণ হলেও, এবছর সৌর অভিযানে বিপুল সাফল্য পায় ভারত। ৬ জানুয়ারি ভারতের সৌরযান Aditya-L1 ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট ১-এ পৌঁছয়। সেখান থেকে সূর্যের আলোকমণ্ডল নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চালাচ্ছে সেটি।
ফাইল চিত্র।
ISRO-র পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎক্ষেপণযান: মহাকাশযান উৎক্ষেপণে উৎক্ষেপণযান বা লঞ্চ ভেহিকলের গুরুত্ব অপরিসীম। পুনর্ব্যবহারযোগ্য উৎক্ষেপণযানের দু'টি সফল পরীক্ষা করে এবছর সাড়া ফেলে দেয় ISRO.
ISRO-র মহাজাগতিক নোঙর অভিযান: ৩০ ডিসেম্বর PSLV-C60 (SpaDeX) রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়। একাধিক স্যাটেলাইটও পাঠানো হয়েছে। কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে অন্য মহাকাশযানের সঙ্গে যুক্ত হবে, একসঙ্গে চক্কর কাটবে পৃথিবীর। আমেরিকা, রাশিয়া, চিনের পর ভারত মহাকাশে নোঙর করার দিকে এগোচ্ছে। এই অভিযান সফল হলে মহাকাশে ভারতের নিজস্ব স্পেস স্টেশন গড়ে তোলার কাজে আরও গতি আসবে।
ফাইল চিত্র।
ইউরোপা ক্লিপার অভিযান: ভিনগ্রহীদের খোঁজে NASA মহাকাশে ইউরোপা ক্লিপার মহাকাশযান পাঠিয়েছে। ইলন মাস্কের SpaceX-এর ফ্যালকন রকেটে চাপিয়ে সেটিকে পাঠানো হয় ২৫ অক্টোবর। বৃহস্পতির উদ্দেশে রওনা দিয়েছে মহাকাশযানটি। ২০৩০ সাল নাগাদ গন্তব্যে পৌঁছনোর কথা। বৃহস্পতির সবচেয়ে ছোট উপগ্রহ ইউরোপাকে নিরীক্ষণ করবে সেটি। ইউরোপার বরফের চাদরের নীচে আস্ত মহাসাগর লুকিয়ে রয়েছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে, যার অনুসন্ধান করবে ইউরোপা ক্লিপার।
ফাইল চিত্র।
মহাকাশে ১০০০ দিন: মহাকাশে সবচেয়ে বেশিদিন থাকার রেকর্ড গড়লেন রাশিয়ার নভোশ্চর ওলেগ কোনোনেঙ্কো। মহাকাশে ১০০০ দিন কাটিয়ে রেকর্ড গড়েছেন তিনি।
ফাইল চিত্র।
গ্রহাণু অভিযান: ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ESA)-র Hera অভিযানই প্রথম গ্রহাণু অভিযান। SpaceX-এর Falcon 9 রকেটের মাধ্যমে হয় উৎক্ষেপণ। দু'টি কিউবস্যাটসও পাঠানো হয়েছে। ২০২২ সালে DART রকেটের মাধ্যমে ডাইমরফস গ্রহাণুকে ধাক্কা দিয়ে কক্ষপথ থেকে সরিয়ে দেয় NASA. আগামী দিনে গ্রহাণু বা উল্কার আঘাতে বিপর্যয় যাতে না ঘটে, তার জন্য মহাজাগতিক প্রতিরক্ষা গড়ে তোলাই লক্ষ্য NASA-র। রকেটের ধাক্কায় গ্রহাণুটি কেমন আছে, তা খতিয়ে দেখবে Hera.