সন্দীপ সরকার, কলকাতা: শীত কার্যত বিদায় নিয়েছে। কলকাতা-সহ গোটা বাংলায় তাপমাত্রার পারদ চড়ছে। বেলা বাড়তেই চড়া রোদের ছ্যাঁকা।


অথচ সেই আবহাওয়ায় ক্রিকেট ম্যাচ শুরু করা যাচ্ছে না পিচ ভিজে থাকায়!


বৃষ্টি হয়নি। কুয়াশার চাদরও আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখছে না। সেভাবে শিশিরও পড়ছে না। তাহলে পিচ ভিজল কীভাবে? স্থানীয় ক্রিকেটে সোমবার সকাল থেকে এই রহস্য তাড়া করে বেড়াল। আর খোঁজখবর নিতেই শুরু হয়ে গেল একে অপরকে দোষারোপের পালা। যা নিয়ে ময়দান রীতিমতো সরগরম।


রঞ্জি ট্রফির (Ranji Trophy) ফাইনাল মিটতেই শুরু হয়েছে সিএবি (CAB) ফার্স্ট ডিভিশন লিগে গ্রুপ এ-র ১১ দলের খেলা। রঞ্জি ট্রফি, সি কে নাইডু ট্রফি (CK Naidu Trophy) চলছিল বলে ময়দানের প্রথম সারির ক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ ক্রিকেটারেরা বাংলা শিবিরে ছিলেন। তাই ফার্স্ট ডিভিশন লিগও বন্ধ ছিল প্রায় ৭৮ দিন। যাতে সব ক্লাব তাদের প্রধান ক্রিকেটারদের পায় আর সর্বশক্তি নিয়ে ঝাঁপাতে পারে।


সোমবার থেকে ফার্স্ট ডিভিশন লিগে গ্রুপ এ-র পাঁচটি ম্যাচ শুরু হল। ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়ে এই ম্যাচগুলি চলবে ১ মার্চ পর্যন্ত। কল্যাণীতে বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে মুখোমুখি হয়েছে শ্যামবাজার ও মোহনবাগান (Shyambazar vs Mohun Bagan)। কিন্তু সেই ম্যাচ শুরু হয় দুপুর ১২.৪০-এ। লাঞ্চের পর। যেখানে খেলা শুরু হওয়ার নির্ধারিত সময় ছিল সকাল সাড়ে ন'টা। গয়েশপুর মাঠে ভবানীপুর ও কালীঘাট ম্যাচও শুরু হয় নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে। বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ। এ গ্রুপের বাকি তিন ম্যাচ সময়ে শুরু হলেও কল্যাণী ও গয়েশপুরে একই সমস্যায় ম্যাচ শুরু করা যায়নি।


বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, সিএবি-র গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান তথা প্রাক্তন ক্রিকেটার মদন ঘোষ খবর পেয়েই সংশ্লিষ্ট মাঠের কর্মীদের ফোন করে খোঁজ নেন। তাঁকে জানানো হয়, আগের দিন বিকেলে বেশি জল দেওয়া হয়ে গিয়েছে। তাই এই বিপত্তি। পরে এবিপি লাইভকে মদন বলছিলেন, 'আসলে মালিরা ঝারি করে জল দেয়। হয়তো বুঝতে পারেনি। বেশি জল দিয়ে ফেলেছে।'


কল্যাণী ও গয়েশপুর, সিএবি-র তরফে দুই মাঠই দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন সুজিত সরকার। তিনি বলছেন, 'মাঠের মালিরা কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়ের কথা মতোই জল দিয়েছেন। পুরোটাই হয়েছে সিএবি-র চিফ কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশে।' ঘটনা হচ্ছে, সুজন নিজে মাঠে হাজির ছিলেন না। জানা গেল, তিনি ফোনে কথা বলে নির্দেশ দিয়েছেন। যা নিয়ে পাল্টা প্রশ্নও উঠছে। বলা হচ্ছে, কিউরেটর সশরীরে হাজির না থেকে যাই বলুন না কেন, মাঠের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিএবি-র প্রতিনিধি কেন নিজের বুদ্ধিবিবেচনা প্রয়োগ করলেন না। কল্যাণীতে বেঙ্গল ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে ২২-২৪ ফেব্রুয়ারি ইস্টবেঙ্গল বনাম পুলিশ এসি ম্যাচও দেরিতে শুরু হয়েছিল। এবং সেটাও ভেজা পিচের জন্য। প্রশ্ন উঠছে, কেনই বা বারবার একই মাঠে খেলা শুরু করা নিয়ে এই সমস্যা তৈরি হচ্ছে?


সিএবি-র চিফ কিউরেটর তথা বোর্ডের পিচ কমিটির পূর্বাঞ্চলীয় প্রতিনিধি সুজন আবার বল ঠেলছেন আম্পায়ারদের কোর্টে। বলছেন, 'পিচে বোলারদের ফুটমার্কের জায়গায় মেরামতির কাজ হয়েছিল। উইকেট এমন কিছু ভেজা ছিল না যে, ম্যাচ লাঞ্চের পর দুপুর ১২.৪০-এ শুরু করা হল। এটা আম্পায়ারদের সিদ্ধান্ত। আমার মনে হয় আম্পায়াররা চাইলে আরও আগে ম্যাচ শুরু করতে পারতেন।'


যদিও কিউরেটরের কথা শুনে ম্যাচের পরিচালনার দায়িত্বে থাকা আম্পায়াররা খুব খুশি বলে খবর নেই। বরং বেশ ক্ষুব্ধ তাঁরা। বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন কেন কিউরেটর নিজে হাজির না থাকা সত্ত্বেও এমন মন্তব্য করেছেন। কেন কিউরেটরের অনুপস্থিতিতে সিএবি-র প্রতিনিধি পিচে জল দেওয়ার ব্যাপারে আরও সতর্ক হননি। বলা হচ্ছে, গয়েশপুরে কালীঘাট-ভবানীপুর ম্যাচ শুরু হতেও দেরি হয়েছে এবং সেই মাঠেরও দায়িত্বে রয়েছেন একই ব্যক্তি। প্রশ্ন উঠছে, কার উদাসীনতায় বারবার সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ক্লাবগুলিকে। কেনই বা সিএবি এ ব্যাপারে নীরব।


পিচ বিভ্রাট নিয়ে মোহনবাগানের কোচ তথা বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক প্রণব নন্দী বলছিলেন, 'কেন এক মাঠে বারবার এই সমস্যা হচ্ছে, সেটা ভেবে দেখতে হবে সিএবি-কে। আমি সকালে পিচ দেখে যেটা বুঝেছি, ম্যাচ শুরু করার অবস্থা ছিল না। আম্পায়াররা সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি বলব, ক্রিকেটের জন্য ভাল সিদ্ধান্ত। বেশ কিছু ওভার নষ্ট হয়েছে ঠিক কথা, তবে খেলা শুরু করে দিলে প্রথমে ব্যাটিং করা দল বিপাকে পড়ত। পরপর উইকেট পড়ত। টস ফ্যাক্টর হয়ে যেত।' ময়দানের প্রবীণ কোচ যোগ করছেন, 'সিএবি-র উচিত আরও সতর্ক হওয়া। যাতে ম্যাচের আগের দিন পিচে অতিরিক্ত জল দিয়ে এইরকম বিভ্রাট আর না হয়।'


সিএবি কর্তারা শুনছেন কি?


আরও পড়ুন: স্পিনারের বলে মুখে চোট, পড়ল সেলাই, বাংলার উইকেটকিপারকে নিয়ে আশ্বস্ত করল দিল্লি ক্যাপিটালস