সাউদাম্পটন: মাত্র ১৫ মাস আগের ঘটনা। নিউজ়িল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ়ে বিধ্বস্ত হতে হয়েছিল টিম ইন্ডিয়াকে। ওয়েলিংটনে প্রথম টেস্টে কিউয়িরা জিতেছিল ১০ উইকেটে। ক্রাইস্টচার্চে পরের টেস্টে বিরাট কোহলিদের হারতে হয়েছিল ৭ উইকেটে।


তারপর থেকে গত প্রায় দেড় বছরে অনেক কিছু ওলট পালট হয়ে গিয়েছে। করোনা অতিমারির ধাক্কায় গোটা বিশ্ব বিপর্যস্ত। বদলে গিয়েছে ভারতীয় ক্রিকেটও। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে পিছিয়ে পড়েও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সিরিজ জিতে ফিরেছে কোহলি-হীন ভারত। দেশের মাটিতে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে টেস্ট সিরিজে। নিউজ়িল্যান্ডের কাছে গত বছরের হার নয়, আগামীকাল সাউদাম্পটনের রোজ বোল স্টেডিয়ামে কোহলি টস করতে যাবেন সেই সমস্ত ইতিবাচক ছবি মনে গেঁথেই। ক্যাপ্টেন কোহলিও জানেন, তরুণ ব্রিগেডের সদর্প হাজিরা বদলে দিয়েছে তাঁর দলকে।


বৃহস্পতিবার বিকেলে সাউদাম্পটন থেকে ভার্চুয়াল মিটে যোগ দিয়েছিলেন কোহলি। নিউজ়িল্যান্ডের কাছে পরাজয়ের পর অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে টেস্ট সিরিজ়ে হারিয়েছে ভারত। তাঁর দল কি মানসিকভাবে ও দক্ষতার দিক থেকে আরও শক্তিশালী হয়েছে? এবিপি লাইভের প্রশ্নে কোহলি বললেন, 'আমরা একটা সিরিজ়ে হেরেছিলাম মানেই গত ৩-৪ বছরের পারফরম্য়ান্স গৌণ হয়ে যায় না। এটা টি-টোয়েন্টি বা ওয়ান ডে ম্যাচ নয়। টেস্ট ক্রিকেট। ওই সিরিজ়ের পর থেকে আমাদের তরুণরা দারুণভাবে উঠে এসেছে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে দুরন্ত ক্রিকেট উপহার দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সফরে উদাহরণ তৈরি করেছে আমাদের তরুণ ক্রিকেটারেরা। এক ঝাঁক প্রতিভাবান তরুণ আমাদের দলে রয়েছে যাদের নিয়ে আমরা ভীষণ উত্তেজিত।'



শুক্রবার থেকে সাউদাম্পটনে নিউজ়িল্যান্ডের বিরুদ্ধে বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নামছে ভারত। প্রথমবার এরকম টেস্ট ফাইনালের আয়োজন করেছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসি। ম্যাচ নিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে তুমুল উন্মাদনা। যদিও কোহলি এটাকে বড় করে দেখতে নারাজ। ভারতীয় দলের অধিনায়ক সাফ বলে দিচ্ছেন, 'এই একটা ম্যাচ জিতলাম না হারলাম, তা দেখে আমাদের ৩-৪ বছরের সাফল্য বিচার করা ঠিক নয়। বাইরে থেকে এই ম্যাচকে বড় ম্যাচ বলে একটা ধারণা তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু নিজেদের দক্ষতা নিয়ে আমাদের কোনও সংশয় নেই। জানি গত কয়েক বছরে আমরা কী ধরনের ক্রিকেট খেলেছি। ২০১১ সালে আমরা ওয়ান ডে বিশ্বকাপ জিতেছিলাম। ক্রিকেট কিন্তু তারপর থেমে থাকেনি। আরও খেলা হয়েছে। সাফল্য় ও ব্য়র্থতাকে সমানভাবে সামলাতে হবে আমাদের। এই ম্যাচে হারি বা জিতি, আমাদের মানসিকতা বদলাবে না।'


কোহলি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ম্যাচ হিসাবে চিহ্নিত করতে চাইছেন না। বারবরই তিনি ফলাফলের চেয়েও পদ্ধতির ওপর বেশি জোর দেন। তাঁর কাছে সাফল্যের নিক্তি এক ম্যাচের পারফরম্যান্স নয়। বরং ধারাবাহিকভাবে ভাল খেলে যাওয়া। যে দর্শনকে সঙ্গী করে ভারতীয় দলের রূপরেখা বদলে দিচ্ছেন কোহলি। বৃহস্পতিবার টিমস কলে কোহলি বললেন, 'পাঁচদিন ধরে ভাল ক্রিকেট খেলা লক্ষ্য আমাদের। কারা প্রতিপক্ষ ভাবছি না। টেস্ট ক্রিকেটে এরকম একটা ম্যাচের জয় পরাজয় দিয়ে চ্যাম্পিয়ন ঠিক করে দেওয়া যায় না। ৪-৫ বছরের পারফরম্যান্স দেখতে হয়।'


ভারতীয় দলের হেড কোচ রবি শাস্ত্রীও বারবার বলে আসছেন যে, এক ম্যাচের ফাইনাল দিয়ে বিশ্বের সেরা টেস্ট দল নির্ধারণ করা যায় না। কোহলির গলাতেও যেন সেই একই সুর। বললেন, 'আমরা ম্যাচটা জিতলেও ক্রিকেট শেষ হয়ে যাচ্ছে না, হারলেও ক্রিকেট থেমে থাকছে না। তবে গত ৪-৫ বছর ধরে আমরা যে ক্রিকেট খেলেছি, কোনও একটা ম্যাচের নিরিখে তার মূল্য়ায়ণ করা যায় না। আমি ব্যাপারটাকে এভাবে দেখছি যে, আমরা ইংল্যান্ডে ৬টি টেস্ট ম্যাচ খেলতে এসেছি (বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পর ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে পাঁচ ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলবে ভারত)। যার প্রথম ম্য়াচটি শুরু হচ্ছে শুক্রবার।'


সাউদাম্পটনে এখন প্রবল গরম। তবে দু-একদিন ঝড় বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। কোহলি যদিও মনে করেন না যে, আবহাওয়ার কোনও প্রভাব খেলায় পড়বে। তিনি বলছেন, 'আমাদের কাছে আবহাওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ নয়।'


কেন উইলিয়ামসনদের বিরুদ্ধে ৩ পেসার ও ২ স্পিনার নিয়ে নামছে ভারত। মহম্মদ সিরাজকে নিয়ে অনেক চর্চা হলেও, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়শিপের ফাইনালে প্রথম একাদশে তাঁকে রাখা হয়নি। ছক ভেঙে একদিন আগেই প্রথম একাদশ ঘোষণা করে দিয়েছে টিম ইন্ডিয়া। এর আগে টেস্ট ম্যাচ শুরুর আগের দিন ১২ জনের দল ঘোষণা করে দেওয়ার একটা রীতি তৈরি করেছিলেন কোহলি। এদিন একেবারে প্রথম একাদশই জানিয়ে দেওয়া হল। পেসারদের মধ্যে দলে রয়েছে মহম্মদ শামি, যশপ্রীত বুমরা ও ইশান্ত শর্মা। দুই স্পিনার আর অশ্বিন ও রবীন্দ্র জাডেজা। ঋদ্ধিমান সাহা নয়, উইকেটকিপিংয়ের দায়িত্ব সামলাবেন ঋষভ পন্থই।


প্রস্তুতি সারা। এবার শুধু শুক্রবার আম্পায়ারের 'প্লে' বলার অপেক্ষা।