সন্দীপ সরকার, কলকাতা: খেলোয়াড় হিসাবে তিনি নিজে ছিলেন কিংবদন্তি। অবসরের পরও ব্যাডমিন্টন কোর্টকে ছাড়তে পারেননি। ভবিষ্যতের তারকা তৈরিতে দিনরাত পরিশ্রম করে চলেছেন। তাঁর হাত ধরেই সাইনা নেহওয়াল (Saina Nehwal), পি ভি সিন্ধুর (PV Sindhu) উঠে আসা। সেই পুল্লেলা গোপীচন্দ (Pullela Gopichand) এবার যুক্ত হলেন বাংলার ব্যাডমিন্টনের সঙ্গে। হরিনাভিতে স্টার ব্যাডমিন্টন অ্যাকাডেমির অন্যতম কোচ হিসাবে দায়িত্ব নিলেন। শনিবার অ্যাকাডেমির উদ্বোধনে এসে খোলামেলা আড্ডা দিলেন এবিপি আনন্দের ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্ম এবিপি লাইভের সঙ্গে। বাংলার ব্যাডমিন্টন নিয়ে পরিকল্পনা থেকে শুরু করে ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের ভবিষ্যতের রোডম্যাপ, সাইনা-সিন্ধুর সাম্প্রতিক ফর্ম থেকে শুরু করে থোমাস কাপের সাফল্য, সব বিষয়েই অকপট গুরু গোপী।
প্রশ্ন: হায়দরাবাদে আপনার অ্যাকাডেমিতে তৃণমূল স্তরের ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়দের নিয়ে অবিশ্বাস্য কাজ করেছেন। তারপর বাংলার অ্যাকাডেমির সঙ্গেও যুক্ত হলেন, বাংলার উদীয়মান শাটলারদের নিয়ে কী পরিকল্পনা?
পুল্লেলা গোপীচন্দ: আমার লক্ষ্য ছিল বাংলার ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়েরা যাতে বাংলাতেই প্রশিক্ষণের সুযোগ পায়। বাংলায় ব্যাডমিন্টনের আধুনিক পরিকাঠামো ছিল না। আমি এখান থেকে ৬ জন কোচকে হায়দরাবাদে আমার অ্যাকাডেমিতে নিয়ে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে তাঁরা কোচিংয়ে আরও পেশাদারি ট্রেনিং করে এসেছেন। আমাদের অ্যাকাডেমিতে যে ট্রেনিং পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, সেটাই এখানেও হবে। আমি নিজে সবসময় যোগাযোগ রাখব। খুব ভাল লাগছে যে, বাংলার উঠতি শাটলাররাও এখন উন্নত পরিকাঠামো পাবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় এখানকার ছেলেমেয়েরা ভাল করুক, সেটাই চাই।
প্রশ্ন: থোমাস কাপে ইতিহাস গড়ে ভারতের জয়, অল ইংল্যান্ড ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়নশিপে লক্ষ্য সেনের রানার আপ হওয়া, ভারতীয় ব্য়াডমিন্টন কি সঠিক দিশায় এগোচ্ছে?
গোপীচন্দ: থোমাস কাজ জয় বিরাট বড় সাফল্য। দলগত সাফল্যের জয়। ভারতের পুরুষ ব্যাডমিন্টন দলের গভীরতা দেখতে পেয়েছি। তবে আমাদের খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগতভাবে আরও টুর্নামেন্ট জিততে হবে। আরও ধারাবাহিকতা দেখাতে হবে। তবে থোমাস কাপের সাফল্য দল হিসাবে বিরাট প্রাপ্তি। বিশ্ব ব্যাডমিন্টনে ভারতকে নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গি অনেক পাল্টে গিয়েছে। এখন সকলেই আমাদের ব্যাডমিন্টনকে শ্রদ্ধা করে।
প্রশ্ন: দু’বছরের মধ্যে অলিম্পিক্স, সামনে কমনওয়েলথ গেমসও রয়েছে, ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের রোডম্যাপটা কীরকম?
গোপীচন্দ: সারা বিশ্বে ব্যাডমিন্টনের প্রচুর টুর্নামেন্ট হয়। বছরে ৩৫ সপ্তাহ খেলা থাকে। এই সপ্তাহ ও পরের সপ্তাহ মিলিয়ে মালয়েশিয়াতে দুটি টুর্নামেন্ট রয়েছে। তারপর সিঙ্গাপুর, চিনা তাইপে, জাপানে টুর্নামেন্ট রয়েছে। তারপরই কমনওয়েলথ গেমস। খেলোয়াড়দের ফিটনেসের দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে। পাশাপাশি নিজেদের খেলার ধার আরও বাড়াতে হবে। ভাল পারফরম্যান্সের জন্য শারীরিকভাবে ফিটনেসের তুঙ্গে থাকাটা ভীষণ জরুরি। রোডম্যাপ হল প্রচুর টুর্নামেন্ট খেলা আর সেই সমস্ত প্রতিযোগিতায় দারুণ পারফর্ম করা। ধারাবাহিকতা দেখানো। তবে প্রশাসনের তরফে এখন অনেক সাহায্য পাই। তাতে আমাদের ফলও এখন খুব ভাল হচ্ছে। সমস্ত শাটলার, বিশেষ করে সেরা খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত ফিটনেস ট্রেনার, ফিজিওথেরাপিস্ট থাকছে। আমি আশাবাদী যে, এভাবেই আমরা সব টুর্নামেন্টে ভাল খেলতে থাকব।
প্রশ্ন: অলিম্পিক্সে নীরজ চোপড়ার সাফল্য মাইনর স্পোর্টস নিয়ে আমাদের ধারণা বদলে দিয়েছে। এই সাফল্যকে কীভাবে দেখেন?
গোপীচন্দ: নীরজের (Neerah Chopra) সাফল্য গোটা দেশের সমস্ত ক্রীড়াবিদকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। যে যে খেলার সঙ্গেই যুক্ত থাকুক না কেন, নীরজের সোনা সকলের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। নীরজের সাফল্যের পর খেলাধুলো নিয়ে সরকার, কর্পোরেট জগতের পাশাপাশি বাবা-মায়েদেরও দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে গিয়েছে।
প্রশ্ন: সাইনাকে নিয়ে আলোচনা চলছে। সম্প্রতি বড় সাফল্য পায়নি। প্রত্যাশা পূরণ করতে পারছেন না। কী মনে হয়, সাইনা ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন?
গোপীচন্দ: সাইনা চোট আঘাতে বেশ জর্জরিত। যে কারণে ওর পারফরম্যান্সে প্রভাব পড়েছে। তবে ও অভিজ্ঞ। ৭০ বা ৮০ শতাংশ ফিট থাকতে পারলেও ও জানে কীভাবে ম্যাচ জিততে হয়। আমি আশা করছি দ্রুত ও ছন্দে ফিরবে।
সম্পূর্ণ সাক্ষাৎকার দেখুন:
প্রশ্ন: অলিম্পিক্সের পর বিভিন্ন টুর্নামেন্টের নক আউটে চিন বা চিনা তাইপের শাটলারদের কাছে হেরে যাচ্ছেন পি ভি সিন্ধু। কোথায় সমস্যা হচ্ছে?
গোপীচন্দ: চিনা তাইপের তাই জু য়িন ভীষণ দক্ষ শাটলার। অলিম্পিক্সে রানার আপ। প্রাক্তন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নও। তাই ওর মতো সেরা খেলোয়াড়ের কাছে সিন্ধুর হার খুব একটা উদ্বেগজনক নয়। মালয়েশিয়া ওপেনে তিনটি গেমে কঠিন লড়াই হয়েছে। আশা করছি সিন্ধু খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে আর তাই জু য়িনকে পাল্টা চাপে ফেলে দেবে।
প্রশ্ন: ভারতের কাকে ভবিষ্যতের গোপীচন্দ বলে চিহ্নিত করবেন?
গোপীচন্দ: অনেকেই আছে। তবে আমি চাই পুল্লেলা গোপীচন্দের সাফল্যকেও ছাপিয়ে যাক আগামী প্রজন্ম। অনেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে আসছে। করোনার কারণে গত এক বছরে আমাদের ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলো হয়নি। জুনিয়রদের যতটা সুযোগ পাওয়ার কথা পায়নি। আশা করছি জুনিয়ররা সুযোগ পেলে আরও প্রতিভা উঠে আসবে।
প্রশ্ন: বাংলা বা কলকাতার কোন জিনিসটা আপনার সবচেয়ে পছন্দের?
গোপীচন্দ: এখানকার ক্রীড়া সংস্কৃতি আমার ভীষণ পছন্দের। খেলোয়াড়দের নিয়ে বীরপুজো করা হয়। সবাই সব খেলার খোঁজ রাখে, জানে। আমার এখানে আসতে পেরে খুব ভাল লাগে। আশা করছি বাংলা থেকে অনেক শাটলার তুলে আনতে পারব।
আরও পড়ুন: সৌরভের বেঁধে দেওয়া লক্ষ্যও পার করে দিল জাডেজার দুরন্ত সেঞ্চুরি