কলকাতা: ডিসেম্বরের অ্যাডিলেড। জস হ্যাজলউড ও প্যাট কামিন্সের আগুনের সামনে বিপর্যয় নেমে এল ভারতীয় শিবিরে। মাত্র ৩৬ রানে গুটিয়ে গেল ইনিংস। সর্বকালীন লজ্জা সঙ্গী হল বিরাট কোহলিদের (Virat Kohli)।


পৃথ্বী শ থেকে শুরু করে ময়ঙ্ক অগ্রবাল, অভিশপ্ত সেই দিন-রাতের টেস্টে রান পাননি কেউই। যদিও কোপ নেমে এসেছিল একমাত্র ঋদ্ধিমান সাহার (Wriddhiman Saha) ওপর। পরের টেস্টের প্রথম একাদশ থেকে বাদ পড়েন বঙ্গ উইকেটকিপার। তারপর থেকে একটার পর একটা টেস্ট সিরিজ এসেছে। ঋদ্ধি থেকে গিয়েছেন উপেক্ষিত। তাঁর পরিবর্তে খেলানো হয়েছে ঋষভ পন্থকে। গোটা দুনিয়া যাঁকে বিশ্বের সেরা উইকেটকিপার হিসাবে জেনেছে, সেই ঋদ্ধিমান অপেক্ষায় থেকেছেন সুযোগের।


অবশেষে সুযোগ এল। ১১ মাস পর। আর প্রত্যাবর্তনেই নজর কাড়লেন বাংলার তারকা। কানপুরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রবল চাপের মুখে অপরাজিত হাফসেঞ্চুরি করলেন। সকলের প্রশংসা আদায় করে নিল ঋদ্ধির ইনিংস।


ছাত্রের হাফসেঞ্চুরি দেখে গর্বিত ঋদ্ধিমানের শৈশবের কোচ জয়ন্ত ভৌমিক। এবিপি লাইভকে বললেন, 'এতদিন পরে ওকে খেলাল। অস্ট্রেলিয়ায় গোলাপি বল টেস্টে গোটা দল ব্যর্থ। ভারত মুখ থুবড়ে পড়ল। অথচ বাদ গেল একমাত্র ও। তারপর অস্ট্রেলিয়া সফর, ইংল্যান্ড সফর, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল - কোনও ম্যাচে ওকে খেলানো হল না। কেউ ব্যর্থ হল, কেউ উইকেট ছুড়ে দিয়ে এল, অথচ কাউকে বাদ দেওয়া হল না।'


 





শিলিগুড়িতে জয়ন্তর অ্যাকাডেমিতে খেলেই ঋদ্ধির উত্থান। ছাত্রের প্রত্যাবর্তনের দিন গুরু বলছেন, 'এতদিন পরে নেমে সফল হওয়াটা বড় ব্যাপার। এই ইনিংস তাই অনবদ্য। বিপদের মুখ থেকে যে ইনিংস দলকে বাঁচায়, তাকেই তো আমরা বড় ইনিংস বলি। ভারতীয় দল আজ খাদের কিনারায় চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে দায়িত্বশীল ইনিংস। প্রথমে শ্রেয়স আইয়ার ও পরে অক্ষর পটেলের সঙ্গে দারুণ দুটো পার্টনারশিপ গড়ল। ভারতের স্কোরকে ভদ্রস্থ জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে।' যোগ করলেন, 'দলের নির্দেশ পালন করতে পেরেছে বলে ভাল লাগছে। যে যত ম্যাচই খেলুক, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় খেলা ইনিংস সকলের কাছেই কদর পায়।'


রবিবার ঋদ্ধিকে লড়াই করতে হয়েছে তিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। নিউজিল্যান্ডের বোলিং, ঘাড়ে অসহ্য যন্ত্রণা আর ফের দল থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কা। ত্রয়ীকে বাউন্ডারির বাইরে উড়িয়ে লড়াইয়ে জিতেছেন ঋদ্ধিই। 'পিচ ব্য়াট করার জন্য খুব একটা সহজ নয়। তার ওপর ঘাড়ে ব্যথা। ম্যানেজমেন্ট বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছিল। শনিবার রাতে ওর সঙ্গে কথা হয়েছিল। আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন মাঠে দেখা গেল না। পাপালি (ঋদ্ধিমানের ডাকনাম) বলেছিল, ফিজিও বিশ্রাম নিতে বলেছে। টিম ম্যানেজমেন্ট হয়তো সেটাই ভাল মনে করেছে,' বলছিলেন জয়ন্ত।


এই ইনিংস কি সব উপেক্ষার জবাব? জয়ন্ত বলছেন, 'জবাব কি না বলব না। পারফর্ম করতেই হবে। ও কথা কম বলে। প্রচারবিমুখ। কিন্তু লক্ষ্যে অবিচল থাকে। কাজটা সঠিকভাবে করার চেষ্টা করে।' যোগ করলেন, 'পাপালি চাপ সামলাতে পারে। ওয়েস্ট ইন্ডিজে গিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে চাপের মুখে খেলেছে। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে খেলেছে। ধরে খেলতে বললে পারে। চালিয়ে খেলতে বললেও পারে।'


জয়ন্ত এখনই ছাত্রের অবসরের কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না। বলছেন, 'ওর তো ৩৬ বছর বয়স। চল্লিশ ছুঁই ছুঁই বয়সে শোয়েব মালিক বিশ্বকাপ খেলতে পারে, রজার মিল্লা যদি অত বয়সে ফুটবল বিশ্বকাপ খেলতে পারে, ছত্রিশে পাপালি পারবে না কেন!'