কলকাতা: গড়াপেটা বিধ্বস্ত ভারতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক হিসাবে তিনি নতুন নতুন উচ্চতা স্পর্শ করেছিলেন। দেখিয়ে দিয়েছিলেন, খেলা ইংল্যান্ডে হোক বা অস্ট্রেলিয়া কিংবা পাকিস্তানের মাটিতে, প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে আনা সম্ভব। পরে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব নিয়েও একের পর এক চ্যালেঞ্জ সামলেছেন সাফল্যের সঙ্গে। কঠিন পরিস্থিতিতে সমস্ত প্রতিকূলতা জয় করে কীভাবে জয়ের সরণিতে পৌঁছে যাওয়া সম্ভব, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের চেয়ে ভাল আর কে জানেন!
পড়ুয়াদের উদ্বুদ্ধ করতে গিয়েও সৌরভ নিজের সেই লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দিলেন। সাফ বলে দিলেন, 'জীবনে সিদ্ধান্ত নেওয়া খুব গুরুত্বপূর্ণ। আর সাফল্যের তিনটি মন্ত্র। এক, নিজের প্রতি সৎ থাকো। দুই, সাফল্য়ের জন্য মরিয়া থাকো। এবং তিন, কঠোর পরিশ্রম করো।'
হিরো সংস্থার একটি ওয়েবিনারে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মঙ্গলবার সৌরভ বলেন, 'কেউ কেউ প্রতিভা নিয়ে জন্মায়। যাদের সেটা থাকে না, তারা পরিশ্রম দিয়ে সব খামতি দূর করে দিতে পারে। সব দিন সমান যায় না। ভাল দিন থাকে। খারাপ দিন থাকে।'
বক্তব্যের মাঝে কন্যা সানার প্রসঙ্গও টেনে আনেন সৌরভ। বলেন, 'আমার মেয়েকে দেখি, ১৮-১৯ বছর বয়সে ও যা জানে, আমি ওই বয়সে জানতাম না। এখন অনেক বেশি এক্সপোজার। টেলিভিশন মিডিয়া, ডিজিটাল মিডিয়া খুব শক্তিশালী। ঘরে বসেই জানা যায় রাফায়েল নাদাল, বিরাট কোহলি, সচিন তেন্ডুলকররা কীভাবে সফল হয়েছেন। কীভাবে প্রস্তুতি নেয়।' নতুন ভারতীয় দলের কথাও উঠে আসে সৌরভের কথায়। বলেন, 'ঋষভ পন্থ, হার্দিক পাণ্ড্যদের দেখুন। ওরা তৈরি। শুধু দক্ষতার দিক থেকে নয়। মানসিকভাবেও।'
নেতৃত্ব দেওয়ার সময় চাপ টের পেয়েছেন? সৌরভ বলছেন, 'দেশকে নেতৃত্ব দিতে পারাটা সম্মানের। চাপ থাকবে। চাপ থাকা উচিত। তাতে সেরাটা বেরিয়ে আসে। অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করেন, খেলা ছাড়ার পর কী মিস করি? সকাল সাতটার সময় সেই নার্ভাসনেসের অভাব টের পাই। সেই চ্যালেঞ্জ। প্রত্যেক সকালে আমাকে ঘিরে থাকা প্রত্যাশা। জানতাম মাঠে একটা ভাল দিন গেলে বিকেল সাড়ে চারটেয় আমি নায়ক হয়ে যেতে পারি।'
১৯৯৬ সালের সেই ঐতিহাসিক ইংল্যান্ড সফরে অভিষেকেই সেঞ্চুরি। সৌরভ বলছেন, 'লোকে সুযোগকে দুভাবে দেখতে পারে। তিন নম্বরে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেলে দুরকম মনে হতে পারত। মনে হতে পারত, ওরে বাবা এত বড় পেসারদের সামনে তিন নম্বরে নামব! আবার এও মনে করা যেতে পারে যে, আরে, এটাই তো সুযোগ নিজেকে চেনানোর। আমি সুযোগ কাজে লাগাতে চেয়েছিলাম।' সৌরভ যোগ করেন, 'সেরারাও নার্ভাস হয়। নার্ভাসনেস থাকলে আরও ভাল করা যায়।'
তরুণ প্রজন্মের মনোবল বাড়ানোর জন্য সৌরভ বলেন, 'কেউ নিঁখুত নয়। আমি কভার ড্রাইভ ভাল খেলতাম। তবে এমন কেউই আছে যারা কভার ড্রাইভ আমার মতো না খেলতে পারলেও অন সাইডে আমার চেয়েও ভাল খেলে। প্রত্যেকের নিজস্ব শক্তির জায়গা রয়েছে।' তিনি যোগ করেন, 'শুধু ক্রিকেট নয়, ফুটবল, ব্যাডমিন্টন সব খেলাই উন্নতি করছে। পুল্লেলা গোপীচন্দের অ্যাকাডেমি থেকে সাইনা নেহওয়ালের মতো তারকা বেরিয়েছে।শিক্ষার সঙ্গে খেলাধুলোকে একসঙ্গে দেখা উচিত। পড়াশোনা মানে শুধু বইয়ের শিক্ষা হওয়া উচিত নয়। একজনের মানুষ হিসাবে উন্নতি ভীষণ দরকার। সব দিক থেকে উন্নতি করতে হবে। স্কুলের দায়িত্ব অনেক বেশি। ছেলেমেয়েদের পছন্দের কাজ করায় উদ্বুদ্ধ করা উচিত।'