বুয়েনস আইরেস: স্টেডিয়ামে তিলধারণের জায়গা নেই। আর্জেন্তিনার (Argentina) ফুটবল সংস্থার প্রেসিডেন্ট ক্লদিও তাপিয়া রীতিমতো দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। ম্যাচের টিকিট চেয়ে ১০ লক্ষ মানুষ আবেদন করেছিলেন। ম্য়াচ কভার করতে চাওয়া সাংবাদিকের সংখ্যা? ১ লক্ষ ৩০ হাজার!
হবে নাই বা কেন? ফ্রান্সকে রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে হারিয়ে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর প্রথমবার মাঠে নামছেন লিওনেল মেসি (Lionel Messi), অ্যাঙ্খেল দি মারিয়া, নিকোলাস ওতামেন্দি, এমিলিয়ানো মার্তিনেজরা। জার্সির বুকে তিন তারা। তিন বিশ্বকাপ জয়ের প্রতীক হিসাবে। বুয়েনস আইরেসে পানামার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন লা আলবিসেলেস্তেরা। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসাবে প্রথমবার মাঠে নামা তাঁদের। আর দেশের জার্সিতে মাঠে নেমে গোল করলেন মেসি। ফ্রি-কিক থেকে। ট্রেডমার্ক মেসি ম্যাজিক দেখিয়ে। এই ম্যাচকে কেন্দ্র করে আর্জেন্তিনায় যেরকম উন্মাদনা তৈরি হয়েছে, যেভাবে কাতারে কাতারে মানুষ গ্যালারিতে এক সুরে গান বেঁধেছেন, মাঠের বাইরেও উল্লাসে মেতেছেন, তা দেখে আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলেন না মেসি। কাঁদতে দেখা গেল কিংবদন্তিকে। আনন্দাশ্রু। গ্যালারিতে তখন সকলে মিলে গান ধরেছেন, 'মুচা চোস...'
পানামার বিরুদ্ধে দুরন্ত ফ্রি-কিক, কেরিয়ারের ৮০০ তম গোলের মাইলস্টোন ছুঁলেন মেসি (Lionel Messi)। গত বছর ডিসেম্বরে দেশের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছিলেন মেসি। প্রথমবার বিশ্বজয়ের স্বাদ পান তিনি। তারপর ক্লাব ফুটবলে নামলেও দেশের জার্সিতে এটাই ছিল মেসির প্রথম ম্যাচ। আর প্রথম ম্য়াচেই নজির গড়লেন লিও। আন্তর্জাতিক ফ্রেন্ডলি ম্যাচে পানামাকে ২-০ গোলে (Argentina vs Panama) হারিয়ে দেয় আর্জেন্তিনা (Argentina)।
পানামার বিরুদ্ধে প্রীতি ম্যাচে ৮৯ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে গোল করেন মেসি। পিএসজির হয়ে এর আগে নিজের ৭৯৯ তম গোলটি করেছিলেন আর্জেন্তাইন ফুটবল সম্রাট। মেসির সামনে এখন শুধুই রোনাল্ডো রয়েছেন। তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ৮৩০ গোল। ২০২১ সালে নিজের আটশোতম গোল করেছিলেন রোনাল্ডো। মেসির সামনে সুযোগ থাকবে সি আর সেভেনকে টপকে যাওয়ার।
ম্যাচে আরও একটি গোল করতে পারতেন মেসি। তাঁর ফ্রি কিক ক্রসবারে লেগে ফেরে। তবে ফিরতে সেই বল থেকে আর্জেন্তিনার হয়ে প্রথম গোলটি করেন থিয়াগো আলমাদা। ম্যাচের ৭৮ মিনিটে এগিয়ে যায় আর্জেন্তিনা। তারপর শেষ বাঁশি বাজার আগে দ্বিতীয় গোল করেন মেসি নিজেই।
ম্যাচের পর মেসি বলেন, 'আমি আজীবন এইরকম মুহূর্তের স্বপ্ন দেখেছি। আপনাদের সঙ্গে উদযাপন করার স্বপ্ন দেখেছি। কোপা আমেরিকা ও বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফেরার স্বপ্ন দেখেছি। আমার জীবনের সেরা মুহূর্ত।' আর্জেন্তিনার কোচ লিওনেল স্কালোনিও মাঠে কেঁদে ফেললেন। তিনি বলেন, 'এই দলের ফুটবলারদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। ফুটবল সকলের খেলা। এই জার্সিটা যাঁরা পরেছেন, তাঁদের সকলের। সকলে শরীরের শেষ স্বেদবিন্দুও নিংড়ে দিয়েছে। কোনও সময় হয়তো ফল আমাদের পক্ষে যায়নি। তবে এবার সেটা হয়েছে। আর এটা অনবদ্য মুহূর্ত।'
আরও পড়ুন: ঋদ্ধিমান আমাদের সম্পদ, বলছেন গতবারের আইপিএল জয়ী দলের ডিরেক্টর