কলকাতা: ২০১২ সালে তাঁর করা গোলেই ফেডারেশন কাপের ফাইনালে সমতা ফিরিয়েছিল তৎকালীন ইস্টবেঙ্গল দল। পরে ডেম্পোর (dempo) বিরুদ্ধে সেই ম্যাচে জিতে ইতিহাস গড়ে লাল হলুদ শিবির। ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন সদস্য। কলকাতা ময়দানকে একবারে হাতের তালুর মতো চেনেন। চুটিয়ে খেলেছেন ২ প্রধানেই। শেষবার এটিকের (atk) জার্সিতে দেখা গিয়েছিল এই বঙ্গ সন্তানকে। কিন্তু এবার মাঠে নয়, মাঠের বাইরে থেকেই আইএসএল উপভোগ করবেন অর্ণব মণ্ডল (arnab mondal)। কেমন দেখছেন বাংলার ২ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দলকে? কাকে এগিয়ে রাখছেন? কে শক্তিশালী, কে কতটা দুর্বল? সব কিছু নিয়েই এবিপি লাইভকে একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন এই তারকা ডিফেন্ডার। 


প্রশ্ন: আইএসএল শুরু হচ্ছে, নিজে মাঠে থাকছেন না, মিস করবেন?


অর্ণব: হ্যাঁ, এটা ঠিক যে এবার মাঠে আমায় দেখা যাবে না। কিন্তু ফুটবল থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারব না কোনওমতেই। মিস তো করবই। এত বছর ধরে খেলে আসছি। এবার মাঠের বাইরে থেকেই আনন্দটা ভাগ করে নিতে হবে। 


প্রশ্ন: বাংলার ২ ক্লাবের হয়েই খেলেছেন, এবার কাকে এগিয়ে রাখবেন?


অর্ণব: নিঃসন্দেহে এটিকে মোহনবাগানকেই এগিয়ে রাখব, কারণটাও খুব পরিষ্কার। এই দলটা বেশ কয়েকটা বছর ধরে একসঙ্গে খেলে এসেছে। বেশি বদল হয়নি। দলের প্রত্যেকে প্রত্যেকের খেলা, শক্তি, ক্ষমতা সম্পর্কে ভীষণভাবে ওয়াকিবহাল। ফুটবল খেলায় একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস, ভরসা ও বোঝাপড়াটা খুব দরকার। তুলনায় এসসি ইস্টবেঙ্গল দলটা আমার মতে একেবারেই নতুন। কিছুটা তড়িঘড়ি করেই মনে হয় তৈরি করা হয়েছে। এই সমস্যাটা আগেও হয়েছে ইস্টবেঙ্গল শিবিরে। ফলে মেলবন্ধন গড়ে উঠতে সময় নেয়। আর যার প্রভাব খেলাতেও পড়ে। এই যেমন, বলবন্ত গত মরসুমে খুব বেশি ম্যাচ খেলেনি, অথচ এবছর স্ট্রাইকিং লাইনে ভারতীয় হিসেবে ওই ইস্টবেঙ্গলের প্রধান মুখ। নতুন কোচ, নতুন সতীর্থ, মানিয়ে নিতেও তো সময় লাগে। এছাড়া হাবাসের দলের ভারতীয় প্লেয়াররা অনেক বেশি অভিজ্ঞ। তাছাড়া ২ দলের মধ্যে রিজার্ভ বেঞ্চও এটিকের খুব শক্তিশালী। কারও চোট সমস্যা হলে অন্য একজন ম্যাচ উইনার তৈরি। 


প্রশ্ন: হাবাস না ম্যানুয়েল দিয়াস?


অর্ণব: ২ জনই স্প্যানিশ কোচ। কিন্তু হাবাসের কোচিংয়ে আমি খেলেছি। ম্যানুয়েলের সম্পর্কে ধারণা কম। হাবাসকে আমি যতটুকু দেখেছি ওঁ অল্পতে খুশি হয় না। তাই  দলের প্রত্যেকেই নিজেদের ২০০% দেওয়ার চেষ্টা করে। কারণ কোচ খুশি না হলে পরের ম্যাচেই জায়গা হতে পারে রিজার্ভ বেঞ্চ। 


প্রশ্ন: ডার্বিতে কাকে এগিয়ে রাখবেন? রয় কৃষ্ণ বনাম ড্যানিয়েল চিমা দ্বৈরথের উত্তাপ তো বাড়ছে।


অর্ণব: ডার্বি সবসময়ই ৫০-৫০। কিন্তু এবার আমাকে যদি দল দেখার পর এই প্রশ্ন করা হয়, আমি এটিকে মোহনবাগানকে ৭০-৩০ শতাংশে এগিয়ে রাখব। দেখুন, রয় কৃষ্ণর অনেকগুলো বছর হয়ে গেল ভারতে। এখানকার আবহাওয়া, পরিবেশ সবই চেনে। আর শুধু এটিকে মোহনবাগান শিবির নয়, পুরো আইএসএল টুর্নামেন্টের সেরা বিদেশি মানা হয় ওকে। আর চিমা সবে এসেছে। তুলনা টানাটা ঠিক হবে বলে মনে হয় না।


প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয় যে আইএসএল থেকে অনেক উঠতি প্লেয়ার উঠে আসছে?


অর্ণব: ভারতে ফুটবলের মরসুমটা খুবই ছোট। এত কম সময়ের খেলা হলে কোনওভাবেই একটা প্লেয়ারকে বিচার করা সম্ভব নয়। এই নিয়ে এর আগেও বিভিন্ন প্রশ্ন উঠেছিল। মাত্র ৫ মাসের মরসুম। একবার ভাবুন তো এই ভারতীয় প্লেয়াররা শেষবার মার্চ মাসে মাঠে নেমেছিল। এতদিনের ব্যবধান তারপর। বিদেশের লিগগুলো এখানেই এগিয়ে আমাদের থেকে। এত কম সময়ের মরসুম হলে প্লেয়ারদের ফিটনেসেও সমস্যা হয়। একটা ছন্দে থাকা প্লেয়ার তাঁর ছন্দ হারিয়ে ফেলে। 


প্রশ্ন: খেলোয়াড়-সমর্থক একে অপরের পরিপূরক, করোনা পরবর্তী সময় কতটা বদলেছে এই সমীকরণ?


অর্ণব: একজন পেশাদার ফুটবলার হিসেবে আমি তো বলব যে, মাঠে সমর্থকরা না থাকলে কিছু একটা মিসিং মনে হয়। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে সমর্থকদের জন্যই আমরা, আমাদের জন্যই সমর্থকরা। আমার মনে হয় বাকিদের ক্ষেত্রেও তাই হবে। তবে এখন যা পরিস্থিতি কিছু করারও নেই। সেই জন্যই সোশ্যাল মিডিয়ায় সমর্থন বাড়ছে। ফ্যান ক্লাব, ফ্যান পেজগুলোর সংখ্যা বেড়েছে। তবে ফাঁকা মাঠে ডার্বি খেলা, সত্যিই ভীষণ যন্ত্রণার।


প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন, কোন দলকে সমর্থন করছেন?


অর্ণব: বাংলা থেকে অবশ্যই এটিকে মোহনবাগান। কিন্তু এত বড় টুর্নামেন্ট, অন্যান্য দলগুলোর যে কেউ চমক দেখাতে পারে। দেখা যাক...