কলকাতা: বারো বছর আগের নাগপুর। টি-টোয়েন্টিতে জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয়েছিল বাংলার এক পেসারের। আর অভিষেকেই প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কার সেরা ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বঙ্গ তরুণ। তাঁর বলেই ইশান্ত শর্মার হাতে ক্যাচ দিয়ে প্যাভিলিয়নের পথে পা বাড়িয়েছিলেন সনৎ জয়সূর্য। ব্যাট হাতে এক সময় যিনি বিশ্বের সমস্ত বোলারের ত্রাস ছিলেন।


সেদিনের সেই তরুণ পেসার অশোক ডিন্ডা। জয়সূর্যকে আউট করায় যাঁর হাতে নিজের দামি একটি সানগ্লাস তুলে দিয়েছিলেন সতীর্থ বীরেন্দ্র সহবাগ। বীরুর দেওয়া সেই উপহার এখনও ডিন্ডার কাছে সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। মঙ্গলবার সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করেছেন ডিন্ডা। বুধবার এবিপি আনন্দকে ৩৬ বছরের পেসার বললেন, '২০০৯ সালে নাগপুরে সেটা ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আমার অভিষেক ম্যাচ। আর প্রথম ম্যাচেই জয়সূর্যকে ফেরানো একজন বোলারের কাছে স্বপ্নের মতোই। খুশি হয়ে বীরু ভাই ওর ওকলের একটি দামি সানগ্লাস আমাকে উপহার দিয়েছিল। সেই সানগ্লাস এখনও আমি সযত্নে রেখে দিয়েছি। আমার ক্রিকেট কেরিয়ারের সেরা প্রাপ্তি ওই উপহার।'

প্রায় ২১ বছরের ক্রিকেটীয় কেরিয়ার। বাংলার হয়ে খেলেছেন ১৬ বছর। ১১৬টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৪২০ উইকেট। ৯৮টি লিস্ট এ ম্যাচে ১৫১টি উইকেট নিয়েছেন। জাতীয় দলের হয়ে ১৩টি ওয়ান ডে ও ৯টি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। কোনও আক্ষেপ থেকে গেল? ডিন্ডার স্বীকারোক্তি, 'জাতীয় দলের হয়ে টেস্ট খেলা হল না। দুবার টেস্টের স্কোয়াডে ছিলাম। একবার ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আর একবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। কিন্তু প্রথম একাদশে সুযোগ হয়নি। সেই আফশোস তো রয়েছেই।'

গত মরসুমে বাংলার ড্রেসিংরুমে কোচিং স্টাফদের একাংশের সঙ্গে তাঁর মনোমালিন্য হয়েছিল বলে শোনা যায়। তারপরই বাংলা ছেড়ে গোয়ার হয়ে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। যদিও নতুন দলের হয়ে শুধুমাত্র সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। গোয়ায় গিয়ে একটা টুর্নামেন্ট খেলেই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কেন? ডিন্ডা বলছেন, 'আমি ভেবেছিলাম রঞ্জি ট্রফি খেলব। তবে বোর্ড জানিয়ে দিয়েছে, এই মরসুমে রঞ্জি হবে না। বিজয় হাজারে ট্রফি হবে। তাই সরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। শরীরও সায় দিচ্ছিল না। চাইনি দলে জায়গা আটকে রাখতে। আমি খেললে নতুন কেউ সুযোগ থেকে বঞ্চিত হতো।'

বল হাতে তাঁর আগুনে স্পেল বাংলাকে অজস্র ম্যাচ জিতিয়েছে। সেরা স্মৃতি কী? ডিন্ডা বলছেন, 'কোনও একটা ম্যাচ বা পারফরম্যান্স বেছে নেওয়া মুশকিল। অনেক ম্যাচ রয়েছে। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে নেওয়া পাঁচ উইকেট। ইডেনে উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে ৭ উইকেট, কর্নাটকের বিরুদ্ধে ৭ উইকেট, রেলওয়েজের বিরুদ্ধে ৭ উইকেট। তবে একটা ম্যাচের কথা বেশ মনে পড়ে। বাংলার হয়ে অনূর্ধ্ব ২২ ক্রিকেটে ওড়িশার বিরুদ্ধে পাটা ম্যাচে খেলছিলাম আমরা। ম্যাচ জিততে ওড়িশার ৩৬ রান দরকার ছিল। ওদের অল আউট করে দিয়ে ১৬ রানে ম্য়াচ জিতেছিলাম আমরা। এখনও পাপালি (ঋদ্ধিমান সাহা), মনোজ তিওয়ারিদের সঙ্গে ওই ম্যাচ নিয়ে গল্প হয়।'

অবসর নেওয়ার পর শুভেচ্ছাবার্তা পাঠিয়েছেন ভি ভি এস লক্ষ্মণ থেকে শুরু করে লক্ষ্মীরতন শুক্ল, মনোজ, ঋদ্ধিমান, দীপ দাশগুপ্তরা। সিএবি তাঁকে বাংলার ক্রিকেটের সঙ্গে যুক্ত রাখতে উন্মুখ। কোচিং নাকি নির্বাচক, কোন ভূমিকায় দেখা যাবে? ডিন্ডা বলছেন, 'ক্রিকেট থেকে দূরে থাকতে পারব না। মাঠ আমাকে টানে। তবে এখনই কিছু ভাবিনি কী করব। আর তরুণদের তো সব সময় পরামর্শ দিই। আপাতত মেয়ে আর স্ত্রীকে কিছুটা সময় দিই। তবে দ্রুত মাঠে ফিরব।'