সন্দীপ সরকার, কলকাতা: বছর তিন আগের কথা। ২০১৯ সালের ওয়ান ডে বিশ্বকাপ। ভারতের কাছে পাকিস্তান (Ind vs Pak) পরাজিত হতেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভেসে উঠেছিল এক যুবকের করুণ আর্তি। 'মারো, মুঝে মারো...'


সেদিনের সেই পাকিস্তান সমর্থক হাজির সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতেও। এশিয়া কাপে (Asia Cup) প্রিয় দলের হয়ে গলা ফাটাতে। তবে শুধু পাকিস্তান নয়, বিরাট কোহলিরও (Virat Kohli) বড় ভক্ত। এশিয়া কাপে বিরাটের ব্যাটে রান ফেরায় যেন স্বস্তি পেয়েছেন পাক তরুণ!


আসুন আলাপ করিয়ে দেওয়া যাক। মোমিন সাকিব (Momin Saqib)। বছর পঁচিশের পাক যুবক বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন ২০১৯ সালের একটি ভিডিওতে। ভারতের কাছে পাকিস্তানের হারের পর আবেগ গোপন করতে পারেননি। ক্যামেরার সামনেই বলে দিয়েছিলেন, 'আমরা ম্যাচ হেরে কান্নাকাটি করছি, আর ক্রিকেটারেরা আইসক্রিম খাচ্ছে? মারো, মুঝে মারো।' সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তুলেছিল সেই ভিডিও। মিমের বন্যা বয়ে গিয়েছিল। সেই থেকে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ হলেই দুই দেশের ক্রিকেটভক্তরা ওই ভিডিও ব্যবহার করেন সোশ্যাল মিডিয়ায়।


এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান সুপার ফোরের দ্বৈরথের পরের দিন দুবাই থেকে এবিপি লাইভকে সাক্ষাৎকার দিলেন মোমিন। বাংলা সংবাদমাধ্যমে দেওয়া তাঁর প্রথম সাক্ষাৎকার। শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নিলেন। কারণ, ক্রিকেট নিয়ে তাঁর আবেগ দেখে আইসিসি বিশেষ এক অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। আর সেই কারণে সুপার ফোরে ভারত-পাক ম্যাচের আগে এবিপি লাইভকে সময় দেবেন জানিয়েও তা পেরে ওঠেননি।


'মারো মুঝে মারো' তো তোলপাড় ফেলেছিল, ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় তোলার পর জীবন কতটা পাল্টেছে? দুবাই থেকে জুম কলে এবিপি লাইভকে মোমিন বললেন, 'ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল। অনেক লোক আমাকে চিনেছে ওই ভিডিওর পর থেকে। প্রচুর বন্ধু হয়েছে। তবে জীবনে পরিবর্তন আসেনি। সেই সময় লন্ডনে পড়াশোনা করছিলাম। কোর্স সম্পূর্ণ করি। লন্ডনের কিংস কলেজে চাকরি করি। তবে জনপ্রিয়তা বেড়েছে। ভারতেও প্রচুর বন্ধু হয়ে যায় ওই ভিডিওর পরে।'


ক্যামেরার সামনে নিজেকে মারার কথা কেন বলেছিলেন? মোমিনের কথায়, 'আমার কাছে দলকে সমর্থন করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আমি জীবনের প্রত্যেক মুহূর্ত উপভোগ করি। ক্রিকেট ম্যাচ দেখি বা কাজ করি, ভিডিও বানাই, সবেতেই আবেগ নিয়ে করি। প্রিয় দল হারার পর খুব কষ্ট হয়েছিল। অনেকে তো প্রিয় দল হারলে দুদিন কাজ করতে পারে না। কে কী ভাবল ভেবে আমি নিজের আবেগগুলো তো গোপন করতে পারি না! যা মনে হয়েছিল তাই বলেছিলাম। দল জিতুক বা হারুক, আবেগ এসেই যায়।'


ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আবহ উপভোগ করেন মোমিন। বলছেন, 'ভারত-পাক ক্রিকেটীয় দ্বৈরথ দেখাটা বিরাট প্রাপ্তি। সারা বিশ্বের সমস্ত ক্রিকেটপ্রেমী এই ম্যাচের দিকে তাকিয়ে থাকেন। এশিয়া কাপে ভারত-পাকিস্তান দু’বার মুখোমুখি হয়েছে। আর একটা ম্যাচ হলেই যেন তিন ম্যাচের সিরিজ হয়ে যাবে।'


গ্রুপ পর্বে ভারত পাকিস্তানকে হারানোর রাতে মাঠেই বিরাট কোহলি ও হার্দিক পাণ্ড্যর সঙ্গে দেখা করেছিলেন মোমিন। সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিও-ও ভাইরাল হয়েছিল। নিজেকে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার বলে পরিচয় দেন মোমিন। বিরাট-সাক্ষাৎ পর্ব নিয়ে তিনি বলছেন, 'কোহলি মাটির মানুষ। ভীষণ ভদ্রলোক। পাঞ্জাবিতে কথা হয়েছে ওঁর সঙ্গে। মনে হল যেন বন্ধুর সঙ্গে কথা বলছি। ভালবাসাটাই থেকে যায়। আমরা দুজনেই দুজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমি ছন্দে ফেরার জন্য কোহলি ভাইকে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম।' মোমিন যোগ করলেন, 'রবিবার সুপার ফোরের ম্যাচের পরেও কোহলি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা করে গল্প করেছি। বলেছি, আমি ভারতে যেতে চাই। আপনাকে কিন্তু ঘোরাতে হবে।'


পাকিস্তানের সমর্থক হলেও বিরাটের ব্যাটিংয়ের ভক্ত মোমিন। বলছেন, 'কোহলি যাতে ছন্দে ফেরেন, গোটা পাকিস্তানে তা নিয়ে প্রার্থনা হয়েছে। পাকিস্তানে কোহলির প্রচুর ভক্ত। পাকিস্তানের সকলে কোহলির ব্যাটে রান দেখতে চেয়েছিল। দুই দেশের মধ্যে সম্প্রীতি ও সৌজন্যের বিরাট উদারহণ এটা। আমরা চাই বাবর আজমও রানে ফিরুক। আর ভাল ক্রিকেট দেখুক সকলে।'


এশিয়া কাপে রানে ফিরেছেন কোহলি। অন্যদিকে তাঁর সঙ্গে যাঁর ব্যাটিং শ্রেষ্ঠত্বের তুলনা চলে, সেই বাবর আজম ছন্দ হারিয়ে বসেছেন। মোমিন হেসে বলছেন, 'আমার মনে হয় বাবর নিজের ফর্ম কোহলিকে দিয়ে দিয়েছেন আর কোহলি ওঁর ফর্ম বাবরকে।' যোগ করলেন, 'সকলেরই খারাপ সময় আসে। কোহলি যখন ছন্দে ছিলেন না, বাবর ট্যুইট করেছিলেন। বলেছিলেন, খারাপ সময় কেটে যাবে। উৎসাহ দিয়েছিলেন। ক্রিকেট একজনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে না। সকলে মিলে ভাল খেলতে হয়। আশা করছি পাকিস্তানও ভাল খেলবে।'


আরও পড়ুন: 'প্রবল চাপের মুখে যে কেউ ভুল করতে পারে', অর্শদীপের পাশে দাঁড়িয়ে কী বললেন কোহলি?