দুবাই:  রোহিত শর্মা ও শিখর ধবনের জোড়া শতরানের দৌলতে এশিয়া কাপের সুপার ফোরের মহারণে ১০ ওভারের বেশি বাকি থাকতেই পাকিস্তানকে ৯ উইকেটে চূর্ণ করে কার্যত ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করল ভারত।
রবিবাসরীয় ব্লকবাস্টারে ভারতের বিরুদ্ধে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পাক অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ভারতীয় বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের জন্য ৭ উইকেট খুইয়ে মাত্র ২৩৭ রান তুলতে সক্ষম হয় পাক-বাহিনী। জবাবে, মাত্র ... ওভারেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় রোহিত-ব্রিগেড।
এদিন ভারতের এই রান তাড়া করার কাজটি কার্যত নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন দুই ওপেনার-- রোহিত ও শিখর। প্রথম থেকেই এই বাঁ-হাতি ও ডান-হাতি জুটি পাক বোলারদের কাছে কঠিন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ান। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ভঙ্গিতে ব্যাট করেন দুজনই। বিশেষ করে বেশি আগ্রাসী ছিলেন ধবন। উইকেটে থিতু হয়েই মাঠের চারদিকে চোখ-জুড়োনো শট বেরিয়ে আসতে থাকে দুই ওপেনারের ব্যাট থেকে। একটা সময় কার্যত পাক বোলিংকে নিয়ে ছেলেখেলা করতে থাকেন রোহিত-ধবন জুটি।
তবে, ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের ভাল ব্যাটিংয়ের পাশাপাশি কথা বলতে হবে পাকিস্তানের হতশ্রী ফিল্ডিংয়ের কথাও। তিন-তিনবার ভারত অধিনায়ক জীবনদান পান। তিনবার তাঁর ক্যাচ ফস্কান পাক ফিল্ডাররা। সেই সুযোগ কাজে লাগালে হয়ত ম্যাচ এরকম একপেশে না হয়ে রোমাঞ্চকর হতো। পাকিস্তানের ফিল্ডিং এত বাজে না হলে ভারত এদিন এত মসৃণভাবে জিততে পারত না।
এদিন ভাগ্যদেবতা সুপ্রসন্ন ছিল রোহিতের ওপর। আর সেটাকে কাজে লাগান তিনি। একদিনের কেরিয়ারের ১৯ তম শতরান সম্পন্ন করেন অধিনায়ক। ১০৬ বলে আসা শতরানে ছিল ৭টা চার ও ৩টি ছক্কা। দিনের শেষে তিনি ১১১ রানে অপরাজিত থাকেন। একইসঙ্গে, কেরিয়ারের ৭০০০ রানও সম্পূর্ণ করলেন রোহিত।
কিন্তু, অপরদিকে শিখর কোনও সুযোগ দেননি। আলাদা করে বলতে হবে তাঁর কথা। এদিন ফর্মের শিখরে ছিলেন ধবন। কেরিারের ১৪ তম শতরান সম্পন্ন করেন। উইকেটের দুদিকেই সমান সপ্রভ ছিলেন। কাট, পুল, ড্রাইভ-- সব শট অনায়াসে আসছিল শিখরের ব্যাট থেকে। এদিন বোলারদের কোনওরকম সুযোগ দেননি তিনি। যাকে বলে ‘ফ্ললেস’ ইনিংস। ১০০ বলে করা তাঁর ১১৪ রানের ইনিংস সাজানো ছিল ১৬টি চার ও ২টি ছক্কায়।  চলতি প্রতিযোগিতায় এই নিয়ে দ্বিতীয় শতরান করলেন তিনি।
এদিন ওপেনিংয়ে ১৩তম শতরান পার্টনারশিপ সম্পূর্ণ করেন রোহিত-শিখর জুটি। তালিকার শীর্ষে সচিন তেন্ডুলকর ও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জুটি। এই দুজন একসঙ্গে ওপেনিং করতে নেমে ২১ বার শতরান পার্টনারশিপ করেছেন। এদিন এই যুগলবন্দিতে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ড তৈরি হল। রান তাড়া করতে নেমে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ ওপেনিং পার্টনারশিপ করলেন রোহিত ও শিখর। প্রথম উইকেটে এই দুজন এদিন করেন ২১০ রান।
অবশেষে ১১৪ রানে থামে শিখর ধবনের ইনিংস। রান আউট হয়ে ফেরেন তিনি। ততক্ষণে নিজের কাজ করে দিয়েছেন শিখর। শিখর যখন আউট হন, ভারতের স্কোর ৩৩.৩ ওভারে ২১০ রান। অর্থাৎ, দল জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। জয় স্রেফ সময়ের অপেক্ষা মাত্র। বাকি কাজটা সম্পন্ন করেন রোহিত শর্মা ও অম্বাতি রায়ুডু। এরমধ্যে শতরানও সম্পন্ন করে নেন রোহিত। রায়ুডু অপরাজিত থাকেন ১২ রানে। অবশেষে ৩৯.৩ ওভারেই জয় হাসিল করে মেন ইন ব্লু-রা।
এর আগে বিবাসরীয় ব্লকবাস্টারে ভারতের বিরুদ্ধে টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা তারা ধীরভাবে করে পাকিস্তান। লক্ষ্য ছিল উইকেট না হারানো। কিন্তু, কুলদীপ ও চাহাল বিপক্ষের দুই ওপেনারকে ফেরত পাঠিয়ে দেন। তার ওপর বাবর আজমের রান-আউট পরিস্থিতি আরও জটিল করে তোলে। এরপর অধিনায়ক সরফরাজের সঙ্গে ইনিংস গড়ার কাজ শুরু করেন শোয়েব মালিক। দুজনে মিলে মিডল ওভারে ভারতীয় বোলারদের ভালভাবেই সামলান। এদিন ৯০ বলে ৭৮ রান করেন মালিক। ৪৪ রান করেন সরফরাজ। দুজনে মিলে চতুর্থ উইকেটে ১০৭ রান করেন।
সরফরাজ আউট হওয়ার পর আসিফ আলি এসে কিছু ঝোড়ো শটের মাধ্যমে দলের রান রেট বাড়ানোর চেষ্টা করেন। ভূবনেশ্বর কুমারের একটি ওভারে ওঠে ২২ রান। কিন্তু, তিন ও শোয়েব আউট হতেই পাকিস্তানের রান তোলার গতি স্লথ হয়ে যায়।
এই পরিস্থিতির ফায়দা তোলে ভারতীয় বোলাররা। ডেথ ওভারে, ভারতীয় বোলাররা দারুন বল করেন। বিশেষ করে বলতে হবে জসপ্রিত বুমরাহর কথা। প্রায় প্রত্যেক বল ইয়র্কার লেংথে ফেলে ব্যাটসম্যানদের রান তোলার কাজ আরও কঠিন করে দেন। শেষ ১০ ওভারে পাকিস্তান ৬৮ রান করে। এরমধ্যে ভূবির একটি ২২ রানের ওভার বাদ দিলে বাকি ৯ ওভারে ওঠে ৪৬ রান।


এক নজরে দুই দল:


ভারত- শিখর ধবন, রোহিত শর্মা (অধিনায়ক), অম্বাতি রায়ুডু, মহেন্দ্র সিংহ ধোনি, দীনেশ কার্তিক, কেদার যাদব, রবীন্দ্র জাডেজা, ভূবনেশ্বর কুমার, কুলদীপ যাদব, যুযবেন্দ্র চাহাল ও জসপ্রিত বুমরাহ।


পাকিস্তান- ফকর জমান, ইমাম-উল-হক, বাবর আজম, শোয়েব মালিক, সরফরাজ আহমেদ(অধিনায়ক), আসিফ আলি, শাদাব খান, মহম্মদ নওয়াজ, শাহিন আফ্রিদি, হাসান আলি ও মহম্মদ আমির।