সন্দীপ সরকার, কলকাতা: সারাদিনে খেলা হল ৮৩ ওভার। চারদিনে যা সর্বোচ্চ। অথচ বাংলার বোলাররা সারাদিন বল করে তুললেন মোটে ৪ উইকেট। মেঘ কেটে ঝলমলিয়ে রোদ উঠল বাংলার আকাশে। কিন্তু বাংলা ক্রিকেটের (Bengal Cricket Team) আকাশ যে মেঘাচ্ছন্নই হয়ে রইল!
ইডেনে (Eden Gardens) ছত্তীসগড়ের (BEN vs CSCS) বিরুদ্ধে মাত্র ১ পয়েন্ট পেল বাংলা। মনোজ তিওয়ারিদের প্রথম ইনিংসে তোলা ৩৮১/৮ (ডিক্লেয়ার) স্কোরের জবাবে সোমবার দিনের শেষে ছত্তীসগড় তুলল ২১৪/৬। রঞ্জি ট্রফির নিয়ম হচ্ছে, কোনও ম্যাচে যদি দুই দলের অন্তত একটি করে ইনিংস শেষ না হয়, তাহলে দুই দলের মধ্যে একত পয়েন্ট করে ভাগাভাগি হয়ে যায়। সেই নিয়মে এক পয়েন্ট করে পেল বাংলা ও ছত্তীসগড়, দুই দলই। ঘরের মাঠে খাতায়-কলমে দুর্বল প্রতিপক্ষদের বিরুদ্ধে প্রথম ইনিংসের লিডও নিতে পারল না বাংলা। প্রতিপক্ষকে অল আউটই করতে পারলেন না বাংলার বোলাররা।
কেরিয়ারের দ্বিতীয় রঞ্জি ম্যাচে নেমে সূরয সিন্ধু জয়সওয়াল নিলেন ৪ উইকেট। ২৩ ওভারে মাত্র ২৯ রান খরচ করে। তাঁকে বাদ দিয়ে আর কাউকে দেখেই মনে হয়নি, উইকেট নিতে পারেন। সবচেয়ে করুণ অবস্থা ঈশান পোড়েলের। একটা সময় ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলে ছিলেন। এখন যেন প্রেরণার অভাবে ভুগছেন। জাতীয় দলের নটিক্যাল মাইলের মধ্যেও নেই তিনি। আগের ম্যাচে নজরকাড়া বোলিং করা মহম্মদ কাইফও এলোমেলো। ছত্তীসগড়ের আশুতোষ সিংহ ২৪০ বলে ৮৮ রানের লড়াকু ইনিংস খেললেন। সব মিলিয়ে এক পয়েন্টেই থেমে যেতে হল বাংলাকে।
যে ফলাফলের পর উঠছে একাধিক প্রশ্ন। কেন মন্দ আলোয় রোজ ওভার নষ্ট হচ্ছে দেখেও দুদিন ব্যাট করে গেল বাংলা? কেন আরও আগে ইনিংস ডিক্লেয়ার করে ছত্তীসগড়ের বিরুদ্ধে অল আউট ঝাঁপানো হল না? কেন ছত্তীসগড়ের মতো প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধেও একজন অতিরিক্ত ব্যাটার হিসাবে শুভম চট্টোপাধ্যায়কে খেলানো হল? একজন বাড়তি বোলার থাকলে কি বাংলার তিন পয়েন্টের সম্ভাবনা আরও উজ্জ্বল হতো না? প্রতিপক্ষ দলে ডানহাতি ব্যাটারদের ভিড় দেখেও কেন বাঁহাতি স্পিনার প্রদীপ্ত প্রামাণিককে বসিয়ে রাখা হল?
বাংলা শিবির থেকে অবশ্য প্রশ্নবাণের সদুত্তর মিলল না। বরং কোচ-অধিনায়ক সকলেই বল ঠেললেন আবহাওয়ার কোর্টে। কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল বললেন, 'আবহাওয়ার ওপর তো নিয়ন্ত্রণ চলে না। এতটা সময় যে নষ্ট হবে আমরা আঁচই করতে পারিনি। প্রথমে ব্যাট করে অন্তত চারশো না করলে মনস্তাত্ত্বিক সুবিধা পাওয়া যাবে না বলে ডিক্লেয়ার করা হয়নি। আগের দুই ম্যাচে সবুজ উইকেটে দলের ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে আরও একজন ব্যাটার থাকলে ভাল হতো। তাই রাজাকে (শুভমের ডাকনাম) খেলানোর সিদ্ধান্ত। ইডেনে পেসাররাই দাপট দেখায়। একমাত্র স্পিনার হিসাবে কর্ণ লাল ভালই করেছে তো! এছাড়া শ্রেয়াংশ ঘোষ, মনোজদের দিয়ে পার্টটাইম বল করানোর পরিকল্পনা ছিলই।'
অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারির গলাতেও একই সুর। বলছেন, 'আবহাওয়া আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পুরো খেলা হলে ওদের অল আউট করে অন্তত তিন পয়েন্ট পেতামই। এখনকার দিনে কোনও দলকেই খাটো করে দেখা যায় না। ছত্তীসগড় নামটা শুনলে হয়তো মনে হবে দুর্বল দল। কিন্তু ওদের বিরুদ্ধে খেলাও সহজ নয়। বড় রান তুলে নিতে চেয়েছিলাম প্রথম ইনিংসে। ডিক্লেয়ার আরও আগে করা যেত বলে মনে হয় না।'
যা শুনে বাংলা ক্রিকেট মহলের কেউ কেউ বলছেন, মানসিকতা এত রক্ষণাত্মক হলে রঞ্জি চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্ন দেখবে কী করে? কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন, বাংলার বর্তমান কোচ যখন অধিনায়ক ছিলেন, তখন ইনিংস ডিক্লেয়ার করতে দেরি হচ্ছে দেখে বেহালার বীরেন রায় রোডের বাড়ি থেকে তড়িঘড়ি ইডেনে ছুটে আসতে হয়েছিল তৎকালীন সিএবি মহাকর্তাকে। কোচ হিসাবেও তিনি যে রক্ষণাত্মক হবেন, এটা তো প্রত্যাশিত।
তবে লক্ষ্মী জানাচ্ছেন, সন্ধিক্ষণের মধ্যে দিয়ে যাওয়া বাংলা ক্রিকেট সঠিক দিশাতেই এগোচ্ছে। বলছেন, 'আমাদের প্রথম দলের চার ক্রিকেটারকে ছাড়া খেলতে হয়েছে। দলে বড় কোনও তারকা নেই। নতুন ছেলেদের খেলায় আমি সন্তুষ্ট।' যোগ করলেন, 'সূরয বাদ দিয়ে বাকিদের আরও ভাল বোলিং করার জায়গা ছিল, মেনে নিচ্ছি। আশা করছি পরের ম্যাচ থেকেই ভাল করব আমরা।'
২৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হতে চলা অসম ম্যাচ থেকে কি বাংলার ভাগ্যের চাকা ঘুরবে?
আরও পড়ুন: ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ২ টেস্ট থেকে সরে দাঁড়ালেন কোহলি, বোর্ডের ঘোষণায় তীব্র জল্পনা