সন্দীপ সরকার, কলকাতা: এক দল ৪১বারের রঞ্জি (Ranji Trophy) চ্যাম্পিয়ন। অন্য দল গত তিনবারের মধ্যে দুবারের ফাইনালিস্ট। কিন্তু শেষ ট্রফি জয় ১৯৮৯-৯০ মরশুমে। ৩৪ বছর আগে।


মুম্বইয়ের সঙ্গে বাংলার তফাতটা ঠিক কোথায়, ইডেনে (Eden Gardens) তা ফের একবার প্রমাণিত হয়ে গেল। সেই সঙ্গে বোঝা গেল, কেন বছরের পর বছর কেটে গেলে রঞ্জি জয়ের স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে যাচ্ছে বাংলা ক্রিকেট দলের।


ইডেনে আড়াইদিনের মধ্যে বাংলাকে ইনিংস ও চার রানে হারিয়ে দিল মুম্বই (Bengal vs Mumbai)। তাও কোন মুম্বই? ম্যাচের আগেই যে দল থেকে হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটের জন্য ছিটকে গিয়েছেন নিয়মিত অধিনায়ক অজিঙ্ক রাহানে। বাংলার বিরুদ্ধে যে ম্যাচে খেলতে পারেননি দলের অন্যতম ভরসা সরফরাজ খান। জাতীয় টেস্ট দলে ডাক পাওয়ায়। তবু সেই ধাক্কা বোঝাই গেল না মুম্বই ক্রিকেটারদের অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের সুবাদে।


কাকে ছেড়ে কার কথা বলা হবে? ব্যাটিংয়ে নেতৃত্ব দিলেন শিবম দুবে। যিনি ভারতীয় টি-টোয়েন্টি দলে নিয়মিত হয়ে উঠছেন ক্রমশ। কিন্তু লাল বলের ক্রিকেটেও যে তিনি পারদর্শী, প্রমাণ করে চলেছেন পেসার অলরাউন্ডার। মুম্বইয়ের হয়ে সর্বোচ্চ ৭২ রান করেছেবন শিবমই। সেই সঙ্গে অভিষেক ম্যাচে খেলতে নামা সূর্যাংশ শেডগের ৭১, তনুশ কোটিয়ানের ৬৭, অথর্ব আঙ্কোলেকর ও রয়স্টন ডায়াসের ৪৬।


বল হাতে আগুন ঝরালেন মোহিত অবস্থি। ডানহাতি পেসার প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। দ্বিতীয় ইনিংসে একাই নিলেন সাতটি। মাত্র ৫২ রানের বিনিময়ে। প্রথম ইনিংসে বাংলা অল আউট হয়েছিল ১৯৯ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে তুলল ২০৯ রান। প্রথম ইনিংসে ৫৬ ওভার ব্যাট করেছিল বাংলা। দ্বিতীয় ইনিংসে তার সামান্য বেশি, ৫৯.৪ ওভার।


বাংলার ইনিংসে একজনের পারফর্ম করা আর বাকিদের আয়ারাম গয়ারামের দলে নাম লেখানোটাও যেন দস্তুর হয়ে গিয়েছে। শনিবার বাংলার ১৯৯ রানের মধ্যে অনুষ্টুপ মজুমদার একাই করেছিলেন অপরাজিত ১০৮ রান। ফলো অন করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট হাতে কিছুটা লড়াই করলেন একমাত্র অভিষেক পোড়েল। ৮৩ বলে আগ্রাসী ৮২ রান করলেন। তাতে অবশ্য বিপর্যয়ের ছবিটা বদলায়নি।


বাংলার নতুন দুই ওপেনারকে নিয়ে এই মরশুমের গোড়ায় অনেক আশার কথা শুনিয়েছিলেন কোচ লক্ষ্মীরতম শুক্ল। কিন্তু একটা করে ইনিংসের পরই যেন ব্যাট করতে ভুলে গিয়েছেন সৌরভ পাল। ইডেনে প্রথম ইনিংসে করেছিলেন ০। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৫। শ্রেয়াংশ ঘোষ দুই ইনিংসের মধ্যে বেশ একটা সামঞ্জস্য রেখে রান তুললেন। প্রথম ইনিংসে ৫। দ্বিতীয় ইনিংসেও ৫। ব্যক্তিগত ৪ রানের মাথায় মনোজ তিওয়ারির ক্যাচ পড়ল স্কোয়্যার লেগে। তবে দ্বিতীয় জীবন পেয়েও বড় রান করতে ব্যর্থ বঙ্গ অধিনায়ক। ২৬ রান করে ফিরলেন। প্রথম ইনিংসের নায়ক অনুষ্টুপ মজুমদার আউট হলেন ১৪ রানে। চা পানের বিরতির পরই গুটিয়ে গেল বাংলার ইনিংস। মোহিত অবস্থির নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেংথের কোনও জবাবই ছিল না বাংলার ব্যাটারদের কাছে।


বোনাস-সহ সাত পয়েন্ট নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালের দিকে পা বাড়িয়ে রাখল মুম্বই। ৫ ম্যাচে তাদের ২৭ পয়েন্ট। ৫ ম্যাচের শেষে বাংলার পয়েন্ট ১২। বাকি দুই ম্যাচ কেরল ও বিহারের সঙ্গে। সেই দুটি ম্যাচ জিততেই হবে বাংলাকে। কেরলের বিরুদ্ধে তিরুঅনন্তপুরমে খেলা। সেই ম্যাচের দল ঘোষণাও হয়ে গেল রবিবার। বাদ পড়লেন সুমন দাস ও শ্রেয়াংশ ঘোষ। দলে এলেন অভিমন্যু ঈশ্বরণ, আকাশ দীপ, শাহবাজ আমেদ ও সাকির হাবিব গাঁধী।


মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে হারের পরও ইতিবাচক থাকছে বাংলা শিবির। কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল বললেন, 'আমি দলের পাশেই আছি। এই ম্যাচে ভাল খেলতে পারিনি। তবে আমাদের আশা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। পরের দুই ম্যাচে সরাসরি জয়ের জন্য ঝাঁপাব।'


বাংলার ক্রিকেটপ্রেমীরা যদিও খুব একটা নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না। গ্রুপ থেকেই বিদায় ঘটবে না তো মনোজ ব্রিগেডের?


আরও পড়ুন: দ্বিতীয় সন্তানের অপেক্ষায় 'বিরুষ্কা', ফাঁস করলেন এ বি ডিভিলিয়ার্স


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।