কলকাতা: করোনার অভিশাপ সরিয়ে সব কিছুতেই ধীরে ধীরে ফিরছে স্বাভাবিকত্ব। নিউ নর্মালে শুরু হয়েছে খেলাধুলোও। সংযুক্ত আরব আমিরশাহিতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল ত্রয়োদশ আইপিএল।

এবার ক্রিকেট ফিরতে চলেছে বাংলাতেও। মঙ্গলবার থেকে শুরু হতে চলেছে বেঙ্গল টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জ। স্থানীয় ক্রিকেটের ৬টি ক্লাব দল ট্রফির জন্য লড়াই করবে। দলগুলি হল মোহনবাগান, ইস্টবেঙ্গল, কালীঘাট, টাউন ক্লাব, তপন মেমোরিয়াল ও কাস্টমস ক্লাব। সব ম্যাচ হবে ইডেন গার্ডেন্সে।

আইপিএলের আদলে ইতিমধ্যেই ৬টি দলের সমস্ত ক্রিকেটার, সাপোর্ট স্টাফ ও ম্যাচ অফিসিয়ালদের জৈব সুরক্ষা বলয়ে রাখা হয়েছে। হোটেলে থেকেই টুর্নামেন্টে অংশ নেবেন সকলে।

ক্রিকেটারদের নিলামের দিন সিএবি-র অ্যাপেক্স কাউন্সিলের চার সদস্য। (বাঁদিক থেকে) যুগ্মসচিব দেবব্রত দাস, প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া, সচিব স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় ও কোষাধ্যক্ষ দেবাশিস গঙ্গোপাধ্যায়। ছবি সৌজন্যেঃ সিএবি।

ফের ক্রিকেট মাঠে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বসিত ৬ দলের ক্রিকেটারেরা। দলে মনোজ তিওয়ারি থাকলেও টুর্নামেন্টে মোহনবাগানকে নেতৃত্ব দেবেন অনুষ্টুপ মজুমদার। তিনি বলছেন, ‘এতদিন পর ফের মাঠে নামার সুযোগ পেয়ে দারুণ লাগছে। এই টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য সিএবি-কে কৃতিত্ব দিতেই হবে।’

প্রায় একই সুর ইস্টবেঙ্গলের অধিনায়ক অর্ণব নন্দীর গলায়। বলছেন, ‘ক্রিকেটে ফেরাটা খুব জরুরি ছিল। করোনা আবহে ফের মাঠে নামার সুযোগ পাচ্ছি। বাংলার ক্রিকেটপ্রেমী সকলের কাছেই এই টুর্নামেন্টটার তাৎপর্য অন্যরকম।’

টুর্নামেন্টের পূর্ণাঙ্গ সূচি। সৌজন্যেঃ সিএবি।

তপন মেমোরিয়ালের অধিনায়ক শাহবাজ আমেদ আইপিএল খেলে ফিরেছেন সদ্য। বিরাট কোহলির রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা বেঙ্গল টি-টোয়েন্টি চ্যালেঞ্জে কাজে লাগাতে চান। বলছেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেট মরসুম শুরু হওয়ার আগে সকলেই নিজেদের তৈরি করে নেওয়ার সুযোগ পাবে এই টুর্নামেন্টে।’

এতদিন পর মাঠে ফিরে সমস্যা হবে না? পারফরম্যান্সে কোনও প্রভাব পড়তে পারে? কালীঘাটের অধিনায়ক শুভম চট্টোপাধ্যায় বলছেন, ‘সকলেই একই পরিস্থিতিতে মাঠে নামবে। ক্রিকেটারেরা সকলে ফিজিক্যাল ট্রেনিংয়ের মধ্যে ছিল। মনে হয় না কারও সমস্যা হবে বলে।’

ময়দানে ক্রিকেটের প্রত্যাবর্তনে স্বস্তির সুর সব দলের কোচদের গলাতেও। মোহনবাগানের কোচ সঞ্জীব গোয়েল বলছেন, ‘ভাবতে পারিনি ফের মাঠে নামতে পারব। এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। সব কিছুই তো পাল্টে গিয়েছে।’ আইপিএলে কিংস ইলেভেন পঞ্জাব শিবিরে থাকা পেসার সায়ন ঘোষ ও রাজস্থান রয়্যালস শিবিরে থাকা আকাশ দীপ রয়েছেন মোহনবাগানে। পাশাপাশি মনোজ, দেবব্রত দাস, অনুরাগ তিওয়ারিরা থাকায় বেশ শক্তিশালী মোহনবাগান দল।

ইস্টবেঙ্গলের কোচ শিবসাগর সিংহ বলেছেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু হওয়ার আগে সকলের সামনে নিজেদের প্রমাণ করার দারুণ সুযোগ এই টুর্নামেন্ট।’ অন্যতম শক্তিশালী দল গড়েছে কালীঘাটও। সুদীপ চট্টোপাধ্যায়, প্রদীপ্ত প্রামাণিক, আমির গনিরা রয়েছেন দলে। কাস্টমস দলে আছেন শ্রেয়ান চক্রবর্তী, সুমন্ত গুপ্ত, প্রসেনজিৎ দাসের মতো স্থানীয় ক্রিকেটের পরিচিতরা। টাউনের হয়ে মাঠে নামবেন অনন্ত সাহা, কাজি জুনেইদ সইফি, পঙ্কজ সাউ, সুদীপ ঘরামি, অরিত্র চট্টোপাধ্যায়, অয়ন ভট্টাচার্যরা।

টুর্নামেন্টের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী বাংলার কোচ তথা জাতীয় দলের প্রাক্তন ক্রিকেটার অরুণ লাল। ছবি সৌজন্যেঃ সিএবি।

তবে বাংলার অধিনায়ক অভিমন্যু ঈশ্বরণ ও অভিষেক রামন করোনা আক্রান্ত হওয়ায় টুর্নামেন্টে খেলতে পারবেন না। দুজনেরই ইস্টবেঙ্গলের হয়ে মাঠে নামার কথা ছিল। করোনা হানা দিয়েছে সবুজ-মেরুন শিবিরেও। আক্রান্ত ঋত্ত্বিক চট্টোপাধ্যায়। তিনিও টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গিয়েছেন।

রবিবারই সূচি প্রকাশিত হয়েছে। প্রত্যেক দল একে অপরের বিরুদ্ধে দুবার করে খেলবে। স্থানীয় ক্রিকেটের প্রথম ডার্বি ২৮ নভেম্বর। তারপর ফের ৬ ডিসেম্বর মুখোমুখি হবে ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান। মঙ্গলবার মোহনবাগান-কাস্টমস ম্যাচ দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু হচ্ছে। সিএবি প্রেসিডেন্ট অভিষেক ডালমিয়া বলছেন, ‘আমরা জৈব সুরক্ষা বলয়ের সমস্ত নিয়ম কঠোরভাবে মেনে টুর্নামেন্ট করছি। আশা করছি ভাল একটা টুর্নামেন্ট হবে।’ এবারই প্রথমবার এই টুর্নামেন্ট হচ্ছে। ৮ ডিসেম্বর দুটি সেমিফাইনাল ও ৯ ডিসেম্বর ফাইনাল খেলা হবে।