ব্রাসিলিয়া: প্রতিপক্ষের কড়া ট্যাকলে মাঠে পড়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন। একটু পরে যখন ফ্রি কিক নেওয়ার আগে জুতোর লেস বাঁধছিলেন, দেখা গেল, বাঁ পায়ের গোড়ালির ওপরের অংশের সাদা মোজা রক্তে ভিজে গিয়েছে। লিওনেল মেসির মাঠের এই লড়াইও বুধবার সকালে ফিকে হয়ে যেতে পারত, যদি না টাইব্রেকারে গোলপোস্টের নীচে অতিমানব হয়ে উঠতেন এমিলিয়ানো মার্তিলেজ়। কলম্বিয়ার বিরুদ্ধে পেনাল্টি শ্যুট আউটে তিন-তিনটি গোল বাঁচিয়ে তিনিই এদিন আর্জেন্তিনার রক্ষক। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ ১-১ শেষ হওয়ার পর টাইব্রেকারে কলম্বিয়াকে ৩-২ হারিয়ে কোপা আমেরিকার ফাইনালে পৌঁছে গেল আর্জেন্তিনা। এবার ট্রফির যুদ্ধে তাদের সামনে ব্রাজ়িল।


বুধবার আর্জেন্তিনার জয়ের নায়ক মার্তিনেজ়ের এক সময় কোপা আমেরিকায় খেলাই অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল। টুর্নামেন্ট শুরুর ঠিক আগে বিশ্বকাপের যোগ্যতা অর্জনকারী ম্য়াচে ঘাড়ে গুরুতর চোট পেয়েছিলেন অ্যাস্টন ভিলার হয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলা গোলকিপার। তবে ফিট হয়ে তিনিই কোপা আমেরিকায় আর্জেন্তিনার গোলপোস্ট পাহারা দিচ্ছেন। এবং বুধবার কলম্বিয়াকে দুহাতে দুঃস্বপ্ন উপহার দিলেন।



ম্যাচের শুরুতেই গোল করে এগিয়ে গিয়েছিল আর্জেন্তিনা। জিওভানি লো সেলসো কলম্বিয়া বক্সে ঢুকে পড়ে পাস বাড়িয়েছিলেন মেসিকে। মেসি সেই বল সাজিয়ে দেন লউতারো মার্তিনেজ়কে। গোল করতে ভুল করেননি তরুণ স্ট্রাইকার। আর্জেন্তিনা এগিয়ে যায় ১-০। ম্যাচের বয়স তখন সবে ৬ মিনিট।


তবে এরপর ম্যাচে ফেরে কলম্বিয়া। প্রতি আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে শুরু করে তারা। বেশ কয়েকবার ক্ষিপ্র গতিতে আর্জেন্তিনা বক্সে ঢুকে পড়েছিলেন কলম্বিয়ার ফুটবলাররা। ম্যাচের ৩৭ মিনিটের মাথায় ৩০ সেকেন্ডের ব্যবধানে আর্জেন্তিনার পোস্ট ও ক্রসবারে দুবার কলম্বিয়ার ম্যাচে সমতা ফেরার প্রয়াস ধাক্কা খায়। প্রথমার্ধ ১-০ ব্যবধানেই শেষ হয়।


দ্বিতীয়ার্ধে অবশ্য কলম্বিয়া আক্রমণে কোণঠাসা হয়ে পড়ে আর্জেন্তিনা রক্ষণ। ৬১ মিনিটের মাথায় আর্জেন্তিনা বক্সের ডানদিক থেকে নিখুঁত শটে গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান লুইস ডিয়াজ়। এরপর আর্জেন্তিনা বারবার আক্রমণ করলেও গোল হয়নি। তারই মাঝে প্রতিপক্ষের কড়া ফাউলে আহত হন মেসি। ৮০ মিনিটে মেসির জন্য অনবদ্য পাস দিয়েছিলেন পরিবর্ত হিসাবে মাঠে নামা অ্যাঙ্খেল দি মারিয়া। কিন্তু মেসির শট গোলপোস্টে লাগে। নির্ধারিত সময় ১-১ গোলেই শেষ হয়।


কোপা আমেরিকায় অতিরিক্ত সময়ের নিয়ম নেই। নির্ধারিত সময়ে ম্যাচ শেষ না হলে সরাসরি টাইব্রেকারে হয় ফয়সালা। টাইব্রেকারে কুদ্রাদো গোল করে কলম্বিয়াকে এগিয়ে দেন। মেসি সমতা ফেরান গোল করে। এরপরই মার্তিনেজ় ম্যাজিক। স্যাঞ্জেজ়ের শট আটকে দেন তিনি। অবশ্য সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি আর্জেন্তিনা। রদ্রিগো দে পল গোল করতে ব্য়র্থ হন। এরপর কলম্বিয়ার বোরহা গোল করলেও মিনা ও কার্দোনার শট আটকে দেন মার্তিনেজ়। রুদ্ধশ্বাস টাইব্রেকারে প্রতিপক্ষ ফুটবলারদের সঙ্গে কথোপকথন চালিয়ে মনস্ত্বাত্ত্বিক চাপের খেলা শুরু করেছিলেন তিনি। তাতেই সাফল্য।


কোপার ফাইনালে আর্জেন্তিনার লড়াই এবার নেমার দ্য সিলভা স্যান্তোস জুনিয়রদের ব্রাজ়িলের সঙ্গে।