কলকাতা: রবিবার সকাল থেকে আকাশ রৌদ্রজ্জ্বল। হাল্কা শীতের আমেজ শহরে। নভেম্বরের শেষ লগ্নে ছুটির দিনে সকাল থেকে চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালের সামনে ভিড়।
আর সেদিনই কি না ভিজে পিচের জন্য ভেস্তে যেতে বসেছিল স্থানীয় ক্রিকেটের টি-২০ ম্যাচ! নির্ধারিত সময়ের ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট পর খেলা শুরু হল! টি-২০ ম্যাচের পরিসর কমিয়ে সাত ওভারের খেলা হল!
বর্ষা বিদায় নিয়েছে। বৃষ্টি নেই। তার পরেও বাইশ গজে জল এল কোথা থেকে? এই প্রশ্ন ঘিরেই রবিবার তোলপাড় হল ময়দান। সিএবি পরিচালিত জে সি মুখোপাধ্যায় টি-২০ টুর্নামেন্টে কলকাতা পুলিশ ও কলকাতা পোর্ট ট্রাস্টের ম্যাচে বেনজির ঘটনা। সল্ট লেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ছিল ম্যাচ। সকাল ৯টায় খেলা শুরু হওয়ার কথা ছিল। তার আধ ঘণ্টা আগে, সাড়ে আটটায় টস। তবে রবিবার সকালে গিয়ে আম্পায়াররা আবিষ্কার করেন যে, পিচ ভিজে সপসপ করছে। ম্যাচ শুরু করার পরিস্থিতি নেই। ফলে পিছিয়ে দেওয়া হয় ম্যাচ। বেশ কয়েকবার পর্যবেক্ষণের পর বেলা ১১টা ১০ মিনিটে শুরু হয় ম্যাচ। কলকাতা পুলিশ ক্লাব প্রথমে ব্যাট করে ৭ ওভারে তোলে ৮৫/৩। জবাবে পোর্ট ট্রাস্ট ৭ ওভারে ৬০/৪ স্কোরে আটকে যায়। ২৫ রানে ম্যাচ জেতে কলকাতা পুলিশ ক্লাব।
কিন্তু কেন ম্যাচ এত দেরিতে শুরু হল? পিচ ভিজল কী করে? খোঁজখবর নিতেই বেরিয়ে এলে একের পর এক চমকপ্রদ তথ্য। চলল দোষারোপ-পাল্টা দোষারোপের পালাও।
বলা হল, রবিবার যে সল্ট লেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে জে সি মুখোপাধ্যায় ট্রফির ম্যাচ রয়েছে, সেটা নাকি মালিরা জানতেনই না! যে কারণে শনিবার বিকেলে পিচে বেশি জল দিয়েছিলেন তাঁরা। আর তাতেই বিপত্তি। পিচ ম্যাচের উপযুক্ত ছিল না বলে সময়ে শুরু করা যায়নি ম্যাচ।
জে সি মুখোপাধ্যায় টি-২০ টুর্নামেন্টে খেলে সিএবি-র প্রথম ডিভিশনের দলগুলি। রবিবারই সল্ট লেকের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ইস্টবেঙ্গল বনাম এরিয়ান ম্যাচও ছিল দ্বিতীয়ার্ধে (সেই ম্যাচটি নির্বিঘ্নে হয়েছে)। প্রথম ডিভিশনের একটা টুর্নামেন্ট নিয়ে এত উদাসীনতা কীভাবে আসে, প্রশ্ন তুলছে ময়দানের একাংশ।
কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে সিএবি-র প্রধান কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়কে। বলা হচ্ছে, তিনি আরও তৎপর হলে এই বিপত্তি হতো না। মাঠকর্মীদের কাছে ম্যাচ হওয়া নিয়ে নাকি কোনও তথ্যই ছিল না। অভিযোগের আঙুল উঠছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠের সদ্যনিযুক্ত সহকারী কিউরেটর মলয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। তিনিও নাকি ম্যাচের কথা জানতেন না!
প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, ৬ নভেম্বর থেকে শুরু হয়েছে জে সি মুখোপাধ্যায় টুর্নামেন্ট। সেই টুর্নামেন্টের মাঝপথে এসে আচমকা কী এমন হল যে, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে ম্যাচ রয়েছে সেটাই জানতে পারলেন না মাঠকর্মীরা?
সিএবি-তে খোঁজ নিয়ে জানা গেল, জে সি মুখোপাধ্যায় টুর্নামেন্টের সূচি তৈরির পরই কোন কোন মাঠে কী ম্যাচ রয়েছে, বিস্তারিত চিঠি তৈরি করে সংশ্লিষ্ট সকলকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তার পরেও কেন ভুল বোঝাবুঝি? সদুত্তর নেই।
ঘটনা হচ্ছে, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-২০ ট্রফির এলিট গ্রুপ বি পর্বের খেলা পড়েছে কলকাতায়। রিঙ্কু সিংহ, রুতুরাজ গায়কোয়াড়, পৃথ্বী শ, অর্জুন তেন্ডুলকর, উমরন মালিকরা খেলতে আসছেন কলকাতায়। ২৬ নভেম্বর থেকে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইডেন গার্ডেন্স ও যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ মিলিয়ে হবে ২৮টি ম্যাচ। শোনা গেল, সেই ম্যাচগুলি সুষ্ঠুভাবে আয়োজনের জন্য উইকেট ও মাঠ প্রস্তুতির কাজ সারতে জে সি মুখোপাধ্যায় টুর্নামেন্টের ম্যাচ স্থানান্তর করতে সিএবি-কে অনুরোধ করেছিলেন কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়। ২৪ নভেম্বরের ম্যাচ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠ থেকে সরিয়েও নেওয়া হয়েছে। দেওয়া হয়েছে টালা পার্কে। কিন্তু ২৩ তারিখ যে ম্যাচ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠেই রয়েছে, সেটা নাকি ভুলেই গিয়েছিলেন কিউরেটর ও তাঁর নবনিযুক্ত সহকারী!
গোটা ঘটনা নিয়ে সিএবি-র টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান প্রদীপ কুমার দে-র (বাপি) সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে বললেন, 'খেলা তো শুরু হয়েছে। কোনও অসুবিধা হয়নি তো।' তাহলে ম্যাচ নির্ধারিত সময়ের ২ ঘণ্টা ১০ মিনিট দেরিতে শুরু হল কেন? বাপি বললেন, 'যা বলার সিএবি পদাধিকারীরা বলবেন। হয়তো কোনও কমিউনিকেশন গ্যাপ হয়েছিল।' সিএবি-র ভাইস প্রেসিডেন্ট নীতীশরঞ্জন দত্ত (অনু) বললেন, 'অনভিপ্রেত ঘটনা। ঠিক হয়নি। আমি মহারাজকে (সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়) সবটা জানিয়েছি।' শোনা গেল, সিএবির যুগ্ম-সচিব মদন ঘোষ ও গ্রাউন্ডস কমিটির চেয়ারম্যান অমিতাভ আঢ্য দুজনই কল্যাণীতে বোর্ডের ম্যাচে রয়েছেন। ময়দানে এত খেলা থাকা সত্ত্বেও দুজনে একসঙ্গে কেন কল্যাণীতে, সেটাও অনেকের কাছে বিস্ময়।
কোনও কোনও মহল থেকে বলা হল, সল্ট লেকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠের সহকারী কিউরেটর অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের পরিবর্তে সত্তরোর্ধ্ব মলয়কে দায়িত্বে আনার পরই এই বিপত্তি। এ-ও শোনা গেল যে, শনিবার বিকেলে সিএবি-র কেউ কেউ রবিবার ম্যাচের কথা মালিদের বললেও তাতে খুব বেশি আমল দেওয়া হয়নি। জল দেওয়া হয়েছে।
রবিবার জে সি মুখোপাধ্যায় টুর্নামেন্টের ১৪টি ম্যাচ সহ স্থানীয় ক্রিকেটের মোট ২৮টি ম্যাচ ছিল। বাকি কোনও মাঠে সমস্যা না হলেও শুধু সল্ট লেকেই গোলোযোগের পর আরও বেশি করে বিতর্ক তৈরি হচ্ছে।
প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে সুজন বললেন, 'কোথাও একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। তবে আম্পায়াররা চাইলে আরও আগে ম্যাচ শুরু করতে পারতেন। উইকেট খারাপ হলে ৭ ওভারে ৮৫ উঠত না।' সিএবি-র প্রধান কিউরেটর যোগ করলেন, 'সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-২০ টুর্নামেন্টের পিচ ভাল হবে। সেই প্রস্তুতিও দেখতে হচ্ছে।'