কলকাতা: প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ ওজনদার। ৯৯ ম্যাচ। ৭৬৩৮ রান। পঞ্চাশ ছুঁই ছুঁই গড়। ২৭ সেঞ্চুরি। ২৯ হাফসেঞ্চুরি। ভারতীয় টেস্ট দলে তাঁকে নেওয়ার জোরাল দাবি উঠছে। তার মাঝেই ভারত এ দলের হয়ে অস্ট্রেলিয়া সফরে যাচ্ছেন অভিমন্যু ঈশ্বরণ (Abhimanyu Easwaran)। কল্যাণীতে বাংলা বনাম বিহার রঞ্জি ট্রফির (Ranji Trophy) ম্যাচ খেলার কথা ছিল। কিন্তু বৃষ্টিতে সেই ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ায় শততম প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলা হয়নি। মুম্বইয়ে পৌঁছে গিয়েছেন বাংলার ক্রিকেটার। জাতীয় শিবিরে যোগ দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সেখান থেকেই অস্ট্রেলিয়া উড়ে যাবেন। তার আগে এবিপি আনন্দ-কে একান্ত, ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার দিলেন।


প্রশ্ন: পরপর চার প্রথম শ্রেণির ম্যাচে চার সেঞ্চুরি করেছেন। অস্ট্রেলিয়া রওনা হওয়ার আগে মনোবল ঠিক কোন জায়গায়?


অভিমন্যু ঈশ্বরণ: সবচেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাস রান করলেই আসে। এই মরশুমটা আমার খুব ভাল শুরু হয়েছে। রানের মধ্যে রয়েছি। আশা করছি অস্ট্রেলিয়ায় গিয়েও ওখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ভাল করব। নিজের খেলাটা আগের চেয়ে এখন অনেক ভাল বুঝতে পারি। চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনে কীভাবে রান করা যায় সেই চেষ্টাই করব। 


প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ব্যাটিংয়ের প্রস্তুতি কীভাবে সারলেন?


ঈশ্বরণ: ট্রেনিংয়ে বেশি কিছু করিনি। স্যরের সঙ্গে কথা বলে কয়েকটা জিনিস করেছিলাম। ওখানে গিয়ে ৩-৪টে প্র্যাক্টিস ডে থাকবে। সেই সেশনে বুঝতে পারব পিচ ও পরিস্থিতি কীরকম আর রান করার জন্য কী করতে হবে। সেভাবে মানিয়ে নিতে হবে।


প্রশ্ন: প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৭৬৩৮ রান। ২৭ সেঞ্চুরি। বহু গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। সেরা মুহূর্ত কোনটা?


ঈশ্বরণ: এত ভাল মুহূর্তের মধ্যে থেকে কোনও একটা মুহূর্তকে সেরা বেছে নেওয়া যায় না। তবু আমি বলব, প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ইডেনে উত্তর প্রদেশের বিরুদ্ধে অভিষেক ম্যাচই সবচেয়ে স্মরণীয়। সেই ম্যাচে প্রথমবার বাংলার হয়ে খেলেছিলাম। বাংলার প্রতিনিধিত্ব করতে পারাটা গর্বের।


প্রশ্ন: দেহরাদূনে আপনার নামে ক্রিকেট অ্যাকাডেমি রয়েছে। সবরকম আধুনিক পরিকাঠামোর বন্দোবস্ত করেছেন আপনার বাবা। এখনও পর্যন্ত ক্রিকেটীয় সফরে পরিবারের সমর্থন কতটা সাহায্য করেছে?


ঈশ্বরণ: আমি যে এত ভাল একটা পরিবার পেয়েছি, বন্ধু পেয়েছি, তার জন্য কৃতজ্ঞ। কোচেরাও সবাই সব সময় পাশে থেকেছে। আমার সাফল্যের জন্য এগুলোও ফ্যাক্টর। আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি।


প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার আগে মানসিক প্রস্তুতি কীভাবে নিচ্ছেন?


ঈশ্বরণ: অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে সাফল্যের জন্য বিভিন্ন ব্যাটারের ভিডিও দেখছি। অস্ট্রেলিয়ায় যারা রান করেছে তাদের ব্যাটিং দেখছি। বিরাট কোহলি ভাই অনেক রান করেছে অস্ট্রেলিয়ায়। দারুণ বোলিংয়ের বিরুদ্ধে সাফল্য পেয়েছে। বিরাট ভাইয়ের ব্যাটিংয়ের ভিডিও দেখছি নিয়মিত। উপকৃতও হচ্ছি।


প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় নিজের সামনে কী লক্ষ্য সাজাচ্ছেন?


ঈশ্বরণ: নিজের সামনে আলাদা কোনও লক্ষ্য রাখি না। ব্যাটার হিসাবে রান করে যেতে হবে। দল আমার জন্য যে ভূমিকাটা ঠিক করে রেখেছে সেটা পালন করব।


প্রশ্ন: কাকে আদর্শ মনে করেন?


ঈশ্বরণ: অনেককেই অনুসরণ করি। প্রিয় ক্রিকেটার অনেকে। প্রত্যেকের ভাল দিকগুলো নেওয়ার চেষ্টা করি। শেখার চেষ্টা করি। একজনকে বেছে নেওয়া খুব কঠিন।


প্রশ্ন: অনেকেই আপনাকে ভারতীয় টেস্ট দলে দেখতে চান। কিন্তু বারবার সিনিয়র দলে উপেক্ষিত থাকায় হতাশা গ্রাস করে না?


ঈশ্বরণ: দল ঘোষণার সময় সব সময়ই লক্ষ্য রাখি। যে কোনও ক্রিকেটারই চায় দেশের প্রতিনিধিত্ব করার। আমিও সেই সুযোগের অপেক্ষায় থাকি। জাতীয় দলে নিজের নাম না দেখলে হতাশ লাগে, তবে মনে হয় নিজের কাজটাই করে যেতে হবে। আর সেই কাজটা হল রান করা। ধারাবাহিকতা দেখানো। দলে সুযোগ পাই বা না পাই, বাস্তবকে মেনে নিতে হবে। আর নিজের কাজটা করে যেতে হবে। তৈরি থাকতে হবে যাতে সুযোগ পেলেই নিজের সেরাটা দিতে পারি। ইন্ডিয়া এ খেলি, বা দলীপ, ইরানি, দেওধর, যেখানেই সুযোগ পাই না কেন, চেষ্টা করি দল আমাকে যে ভূমিকায় চায় সেটা যেন পালন করতে পারি।


প্রশ্ন: আগের চেয়ে আপনি অনেক বেশি ফিট। এর নেপথ্যে কারণ কী?


ঈশ্বরণ: ফিটনেসে বরাবর বেশি জোর দিই। ট্রেনাররা রয়েছেন। তাঁরাই সাহায্য় করেন। কী খেলা আছে, কী সূচি রয়েছে, সেই অনুযায়ী ট্রেনিং করি। লক্ষ্য থাকে, ১০০ ওভার ফিল্ডিং করার পরে যে দশ মিনিটে ইনিংস ওপেন করতে নামতে হয়, তার মধ্যে নিজেকে তৈরি করে ফেলব, এমন ফিট থাকতে হবে। সেটার ওপরই মনোনিবেশ করি।


প্রশ্ন: শততম প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলবেন অস্ট্রেলিয়ায়, কতটা উচ্ছ্বসিত?


ঈশ্বরণ: অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে একশো প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলব। যে কোনও ক্রিকেটারের জন্যই এটা মাইলফলক। বাংলার হয়ে প্রথম ম্যাচ খেলেছিলাম। বাংলার হয়েই একশোতম ম্যাচটা খেলতে পারলে ভাল লাগত। কিন্তু দুর্ভাগ্য সেটা সম্ভব হল না। অস্ট্রেলিয়ায় একশো প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলব। মুখিয়ে রয়েছি।


প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়ায় সাফল্যের মন্ত্র হিসাবে কীসে জোর দিচ্ছেন?


ঈশ্বরণ: ধারাবাহিকতাই মন্ত্র। প্রস্তুতি হোক বা ফিটনেস, ধারাবাহিকতাই আসল। পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া, পরিকল্পনার সঠিকভাবে প্রয়োগ করাই আমার সাফল্যের চাবিকাঠি।


আরও পড়ুন: সৌরভের মানবিক উদ্যোগ, অভাবী শিশুদের পড়াশোনায় সাহায্য, বয়স্কদেরও পাশে দাঁড়ালেন


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।