ম্যাঞ্চেস্টারে: ওল্ড ট্রাফোর্ডে (IND vs ENG 4th Test) প্রথম সেশনে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ভারতীয় দল প্রথম ওভারেই জোড়া উইকেট হারানোর পর ভারতীয় সমর্থকরা ভীষণই উদ্বিগ্ন ছিলেন। ইনিংসে হারের খাঁড়া ঝুলছিল যে। তবে পরের দুই সেশনে সম্ভবত ভারতীয় দলের সেরা দুই ব্যাটার দেখালেন পাল্টা লড়াই কাকে বলে। কেএল রাহুল (KL Rahul) ও শুভমন গিল (Shubman Gill) ইংরেজ বোলারদের বিরুদ্ধে কার্যত দুর্ভেদ্য প্রাচীর গড়ে তুললেন। দুই সেশনে কোনও উইকেটই পড়তে দিলেন না তাঁরা।
লাঞ্চে যেখানে ভারতীয় দল এক রানে দুই উইকেট হারিয়েছিল ধুঁকছিল, সেখানে চতুর্থ দিনশেষে ভারতের স্কোর ১৭৪ রান। উইকেটের সংখ্যা সেই দুই। রাহুল ও গিলের স্মরণীয় পার্টনারশিপেই রবিবাসরীয় ম্যাঞ্চেস্টারে ইতিবাচক কিছুর আশা করতেই পারেন ভারতীয় দলের সমর্থকরা। দিনশেষে আপাতত রাহুল ৮৭ ও গিল ৭৮ রানে অপরাজিত রয়েছেন। ভারতীয় অবশ্য এখনও ইংল্যান্ডের থেকে ১৩৭ রানে পিছিয়ে রয়েছে।
আজকের দিনের প্রথম সেশনটা কিন্তু পুরোপুরিই ইংল্যান্ডের দখলে গিয়েছিল। দিনের শুরুতে ইংল্যান্ডের হয়ে ব্যাটে নামেন বেন স্টোকস (Ben Stokes) ও লিয়াম ডসন। তাঁর ইংল্যান্ডকে ৫৫০-র গণ্ডি পার করালেও, তাঁদের পার্টনারশিপ বেশিদূর এগোয়নি। দুইজনে ১৯ রান যোগ করার পরই ডসনকে সাজঘরে ফেরান যশপ্রীত বুমরা। তবে ইংল্যান্ডকে দ্রুত আউট করার স্বপ্ন সফল হয়নি ভারতের।
নবম উইকেটে ব্রাইডন কার্সকে সঙ্গে নিয়ে ৯৫ রানের পার্টনারশিপ গড়ে ফেলেন স্টোকস, তাও আবার মাত্র ৯৮ বলে। বল হাতে পাঁচ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতেও তিনি প্রায় তিন বছরের মাথায় টেস্টে নিজের সেঞ্চুরি পূরণ করেন। ছয়শো রানের গণ্ডি পার করার পরেই ইংরেজ অধিনায়ক আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করছিলেন। সেই চেষ্টাতেই অবশ্য তিনি আউটও হন। বাউন্ডারিতে ১৪১ রানে ধরা দেন স্টোক। ব্রাইডন কার্সও অর্ধশতরানের দোরগোড়ায় আউট হন। ৬৬৯ রানে শেষ হয় ইংল্যান্ড ইনিংস। ভারতের হয়ে চার উইকেট নেন রবীন্দ্র জাডেজা।
ওল্ড ট্রাফোর্ডের পিচে এমনিই বাউন্সের তারতম্য দেখা গিয়েছে। সেখানে ৩১১ রানে পিছিয়ে থাকার অর্থ ভারতীয় দল ম্যাচে অনেকটাই পিছিয়ে। এমন পরিস্থিতিতে শুরুতেই যশস্বীর আগ্রাসী ব্যাটিং এবং রাহুলের জমাটি রক্ষণে ভর করে টিম ইন্ডিয়া একটা ভাল শুরুর আশা করছিল। সে গুড়ে বালি। পাহাড়প্রমাণ রানে পিছিয়ে থেকে শুরু করে লাঞ্চের আগে দ্বিতীয় ইনিংসের প্রথম ওভারেই ভারতীয় দল জোড়া ধাক্কা খায়। যশস্বী ও সাই সুদর্শনকে খাতা খোলার আগেই পরপর দুই বলে ফেরান ক্রিস ওকস। লাঞ্চে ভারতীয় দল এক রানে দুই উইকেট হারিয়ে সাজঘরে ফেরে।
এমন পরিস্থিতিতে অনেক ভারতীয় সমর্থকদের উদ্বেগ ছিল টিম ইন্ডিয়া কি আজই অল আউট হয়ে যাবে? ইনিংস হারবে ভারত? সেই উদ্বেগটা খানিক দূর করলেন রাহুল ও গিল। প্রথম সেশনে দুই উইকেট হারানোর পর তাঁরাই গোটা দিনটা ব্যাট করলেন। শুভমন গিল শুরুটা খানিকটা আগ্রাসীভাবেই করেন। একাধিক দুরন্ত কভার ড্রাইভ, স্ট্রেট ড্রাইভ মারেন গিল। তবে ঠিক অর্ধশতরানের দোরগোড়াতেই টিম ইন্ডিয়া সমর্থকদের রক্তচাপ বাড়িয়ে ড্রাইভ মারতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন গিল। অবশ্য কার্সের বলে ৪৬ রানে লিয়াম ডসন পয়েন্টে গিলের ক্যাচ ফেলেন। জীবনদান পেয়ে অর্ধশতরান পূরণ করেন গিল। ৭৭ বলে নিজের অর্ধশতরান করেন তিনি।
রাহুল অপরদিকে গোটা সিরিজ়ে যেমন পরিপক্কতার সঙ্গে ব্যাটিং করেন, তেমনই করলেন। ১৪১ বলে তিনি নিজের হাফসেঞ্চুরি হাঁকান। দেখতে দেখতেই ভারতীয় দল প্রথমে ১০০ ও পরে ১৫০ রানের গণ্ডি পার করে। ইনিংস যত গড়ায় গিলও ততই রক্ষণাত্মক তবে জমাটি ব্যাটিং করেন। শেষমেশ তাঁরাই অপরাজিত থেকে ক্রিজ ছাড়লেন।