লন্ডন: ওভালে ম্যাচ জিতে সিরিজ় নিজেদের নামে করতে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ছিল ৩৭৪ রান। ইংল্যান্ডকে ম্যাচ জিততে তাঁদের ক্রিকেট ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান তাড়া করতে হত। তবে এই সিরিজ়ের প্রথম ম্যাচেই তো ইংল্যান্ড ৩৭৩ রান তাড়া করে জিতেছিল। তাই ইংল্যান্ডের এত বড় রান তাড়া করে জয়ের আত্মবিশ্বাস ছিলই। জো রুট (Harry Brook) এবং হ্য়ারি ব্রুক (Joe Root) ফের একবার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর জন্য নিজেদের সেরাটা দেন। দুইজনেই দুরন্ত শতরান হাঁকান।

তবে ইংল্যান্ড ও জয়ের মাঝে ভারতের হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন এক যোদ্ধা। তাঁর নাম মহম্মদ সিরাজ (Mohammed Siraj)। যেখানে বর্তমান দিনে ওয়ার্কলোড ম্যানেজমেন্টের এত কথা শোনা যায়, সেখানে টানা পাঁচ ম্যাচ খেলা এবং নিজের সেরাটা দেওয়া তো আর মুখের কথা নয়। সিরাজ সেটাই করলেন। এই সিরিজে লর্ডস টেস্টে শেষ উইকেট হিসাবে সিরাজই আউট হয়েছিলেন। ম্য়াচ হারার পর মাঠে তাঁর মাথা নীচু করে হতাশায় দাঁড়িয়ে থাকার ছবিটা এখনও সকলের মনে তাজা। গতকালও তিনি ১৯ রানে ব্যাট করা হ্যারি ব্রুকের ক্যাচ ফেলেছিলেন। তার পরে ব্রুক দুরন্ত সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডকে জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেন। নাসির হুসেনকে বলতে শোনা গিয়েছিল সিরাজকে হয়তো এই ক্যাচ ফেলার জন্য়ই মনে রাখা হবে। তবে সিরাজ গোটা গল্পটাই যেন বদলে দিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। চলল স্মরণীয় লড়াই। 

এক সময় যেখানে তিনশো রানের গণ্ডি পার করেও ইংল্য়ান্ডের হাতে সাত উইকেট বাকি ছিল, তখনও কিন্তু বিশ্বাস হারাননি সিরাজ। তারপরেই আসল এক অনবদ্য স্পেল। সিরাজ অবশ্য একা নন, তাঁকে যোগ্য সঙ্গ দিলেন প্রসিদ্ধ কৃষ্ণও (Prasidh Krishna)। চলল এক স্মরণীয় লড়াই। পঞ্চম দিনের সকালবেলাতে নিজের প্রথম ওভারেই ইংল্যান্ডের শেষ বিশেষজ্ঞ ব্যাটার জেমি স্মিথকে ফিরিয়ে ভারতীয় সমর্থকদের মনে আশা জাগান সিরাজ। তবে রানের পুঁজি যে অল্প। তাতেও দমলেন না ভারতীয় বোলাররা। সিরাজ ও কৃষ্ণ নিরন্তর উইকেট লক্ষ্য় করে বোলিং করে গেলেন। তাঁদের আগুনে বোলিংয়ে একে একে ফিরলেন ওভারটন, টাঙরা। নয় উইকেট হারাল ইংল্যান্ড।

চোটের কারণে ইংল্যান্ডের হয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিং করতে পারেননি ক্রিস ওকস, প্রথম ইনিংসে ব্যাটও করেননি তিনি। তবে সোয়েটারের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসলেন ওকস। অপরপ্রান্তে তখন গাস অ্যাটকিনসন। ওকসকে যাতে বল খেলতে না হয়, তা সুনিশ্চিত করেন অ্যাটকিনসন। আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করেন তিনি। সিরাজের বলে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচও উঠে। তবে তা তালুবন্দি করতে পারেননি আকাশ দীপ। রক্তচাপ আরও বাড়ে। এক অঙ্কে নেমে আসে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় রান।

তবে সম্ভবত সবথেকে যোগ্য ক্রিকেটার হিসাবে এই স্মরণীয় লড়াইয়ের শেষটা করলেন মহম্মদ সিরাজ। গাস অ্যাটকিনসনের উইকেট ভেঙেই শূন্যে দুই হাত ছুড়ে উচ্ছ্বাসে ভাসলেন তিনি। ইনিংসে তো পাঁচ উইকেটে নিলেনই ম্যাচেও মোট নয় উইকেট আসল তাঁর ঝুলিতে। ওভালে ছয় রানে ম্য়াচ জিতল ভারত। এটাই টেস্টে ভারতের ক্ষেত্রে নিরিখে সবথেকে কম রানের ব্যবধানে জয়। সিরিজ় ২-২ ড্রয়ে শেষ হল। প্রসিদ্ধ কৃষ্ণও গোটা ম্যাচ জুড়েই যেন নিজের সমালোচকদের জবাব দিলেন। দলের প্রয়োজন দুই ইনিংসেই চারটি করে উইকেট নিলেন তিনি। সিরিজ় শেষ হল বটে, তবে একটা বিষয় নিশ্চিত, এই সিরিজ় কিন্তু সমর্থক ও ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে দীর্ঘদিন তাজা থাকবে।