নয়াদিল্লি: দিনের প্রথম দুই সেশনে ভারতীয় দল দাপট দেখিয়েছিল। তবে রবিবাসরীয় রাজধানীতে শেষ সেশনে দুরন্তভাবে লড়াইয়ে ফিরল ওয়েস্ট ইন্ডিজ় (IND vs WI 2nd Test)। সৌজন্যে শাই হোপ (Shai Hope) ও জন ক্যাম্পবেল (John Campbell)। দুইজনে মিলে তৃতীয় উইকেটে অপরাজিত ১৩৮ রান যোগ করে দিন শেষ করলেন। তৃতীয় দিনশেষে ফলো অন করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের স্কোর দুই উইকেটের বিনিময়ে ১৭৩ রান। আপাতত ৯৭ রানে পিছিয়ে রয়েছে ক্যারিবিয়ান দল।  

Continues below advertisement

ফলো অন করে ব্যাট করতে নেমেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ় দ্বিতীয় সেশন শেষ হওয়ার আগেই দুই উইকেট হারিয়ে ফেলেছিল। ক্যারিবিয়ান দলের সমর্থকরা হয়তো ফের একবার প্রথম টেস্টের মতো ইনিংসে হারার দুঃস্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু তাঁদের আশ্বস্ত করলেন হোপ ও ক্যাম্পবেল। তাঁরা যে শুধু পাল্টা লড়াই চালালেন, তাই নয়, রীতিমতো ভারতীয় বোলারদের শাসন করলেন হোপরা।  

গোটা সিরিজ় এবং এই ম্যাচের প্রথম ইনিংসেও ভারতীয় স্পিনাররা ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে বিপাকে ফেলেছিলেন। সেই বিপদ সামলাতে আগ্রাসনের পথ বেছে নেন ক্যাম্পবেলরা। কুলদীপ যাদবদের (Kuldeep Yadav) বিরুদ্ধে তো এক ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ওপেনার ১৫ রান করেন। মাত্র ৬৯ বলে নিজের অর্ধশতরান পূরণ করেন তিনি। ক্যাম্পবেলই প্রথম ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ব্যাটার হিসাবে এই সিরিজ়ে অর্ধশতরান করেন। ২৬তম ওভারে শতরানের গণ্ডি পার করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়।

Continues below advertisement

হোপও কিন্তু পিছিয়ে থাকার পাত্র নয়। বুমরার বিরুদ্ধে তাঁর ব্যাট থেকেও পরপর বলে বাউন্ডারি আসে। দুইজনে মিলে ১৪৯ বলে শতরানের পার্টনারশিপ পূরণ করেন। ৮০ বলে হোপ ব্যক্তিগত ৫০ রানের গণ্ডি পার করেন। দিনের শুরুতেই দাপট দেখানো ভারতীয় বোলারদের এই সেশনে একেবারেই নিষ্প্রভ দেখায়। দিনের শেষ পর্যন্ত যাতে আর কোনও উইকেট না পরে, তা হোপরা সুনিশ্চিত করেন। দিনের শেষে তিনি ৬৬ ও ক্যাম্পবেল ৮৭ রানে ক্রিজে উপস্থিত রয়েছেন।

তবে এই সেশনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় কামব্যাক করলেও, দিনের প্রথম দুই সেশনে সিরিজ়ের ধারা অব্য়াহত রেখে ভারতই দাপট দেখায়। ১৪০ রানে চার উইকেট থেকে এই দিনের শুরুটা করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। ইমলাচ ১৪ ও শাই হোপ ৩১ রানে ক্রিজে উপস্থিত ছিলেন। তবে তাঁরা বেশিদূর এগোতে পারেননি। ১৫০ রানের গণ্ডি পার করেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ধাক্কা খায়। দুরন্ত বলে শাই হোপের রক্ষণভেদ করে উইকেট ভাঙেন কুলদীপ। ৩৬ রানে সাজঘরে ফেরেন হোপ। 

এই উইকেটের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ় যেমন রান করতে চাপে পড়ছিল, তেমনই উইকেটও হারাচ্ছিল। ১৯ রানের ব্যবধানে আরও তিন উইকেট হারায় তারা। ইমলাচ (২১), জাস্টিন গ্রিভসকেও (১৭) কুলদীপ সাজঘরে ফেরেন। এরপরে জমেল ওয়ারিকানের উইকেট ভাঙেন মহম্মদ সিরাজ। ১৭৫ রানে আট উইকেট হারিয়ে কার্যত ধুঁকছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ইনিংস। তাঁরা আদৌ দু'শো ঘরে পৌঁছবে পারবেন কি না, সেই নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছিল। কিন্তু শেষ দুই উইকেট ক্যারিবিয়ান দলের হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।

পাল্টা লড়াইটা শুরু করেন খ্যারি পিয়ের এবং অ্যান্ডারসন ফিলিপ। দুইজনে মিলে দেখেশুনে বেশ পরিক্কতার সঙ্গেই ইনিংস এগিয়ে নিয়ে যান। দেখতে দেখতেই দু'শো রানের গণ্ডি পার করে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিডজ়। দুইজনে মিলে ৪২ রান যোগ করে ফেলেন। আট উইকেটের বিনিময়ে ২১৭ রান তুলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ় দিনের প্রথম সেশন শেষ করেন। তবে দ্বিতীয় সেশনে তাঁরা বেশিদূর এগোতে পারেননি। লাঞ্চের পরে প্রথম ওভারেই এই পার্টনারশিপ ভাঙেন যশপ্রীত বুমরা। দুরন্ত বোলিংয়ে খ্যারি পিয়েরের উইকেট ভাঙেন বুমরা। ২৩ রানে আউট হন পিয়ের। নবম উইকেটে ৪৬ রানের পার্টনারশিপ ভাঙে।

শেষ উইকেটেও ফিলিপ ও জেডন সিলস আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ের পন্থা বেছে নেন। দুইজনে ২৭ রান যোগ করেন। তবে ২৫০ রানের ঠিক আগেই, ২৪৮ রানে অল আউট হয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। শেষ উইকেট হিসাবে ১৩ রানে সিলসকে আউট করে নিজের পাঁচ উইকেট সম্পূর্ণ করেন কুলদীপ যাদব। প্রথম ইনিংসে ২৪৮ রানে অল আউট হওয়ার পর ফলো অনে ব্যাটিংয়ে নেমেও চা বিরতির আগে ৩৫ রানে আরও দুই উইকেট হারিয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়। তেগনারায়ণ চন্দ্রপালকে ১০ রানে ফেরান মহম্মদ সিরাজ। দুরন্ত বলে অ্যালিক অ্যাথিনাজ়কে সাত রানে বোল্ড করেন ওয়াশিংটন সুন্দর।

এই দুই উইকেটের পর ভারতীয় দল তৃতীয় সেশনে আরও কয়েকটি উইকেটের আশায় ছিল। তেমনটা হল না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ম্যাচে বেশ ভালভাবেই ফিরে এল। তবে এখনও পর্যন্ত কিন্তু ম্যাচের রাশ ভারতীয় দলেরই হাতে। চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনটা ম্যাচের গতিপ্রকৃতি নির্ধারণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে। হোপরা নিজেদের পার্টনারশিপ অব্য়াহত রাখলে কিন্তু ভারতের ওপর ধীরে ধীরে চাপ আসতে শুরু করবে।