লখনউ: বাবা পেশায় নাপিত, পরিবারের অবস্থাও খুব একটা আহামরি নয়। তবে চোখে ছিল স্বপ্ন আর মনে জেদ। ক্রিকেটার তাঁকে হতেই হবে। খেলতে হবে জাতীয় দলের হয়ে। সেই পথেই আরও একধাপ এগোলেন চাঁদনী শর্মা (Chadni Sharma)। ভারতীয় 'এ' অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ পেলেন তরুণী।
পুণেতে দক্ষিণ আফ্রিকা, ভারতীয় 'এ' অনূর্ধ্ব ১৯ ও ভারতীয় 'বি' অনূর্ধ্ব ১৯, এই তিন দলের একটি সিরিজ় আয়োজিত হতে চলেছে। সেই সিরিজ়ের পর পরেই আসন্ন অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপের জন্য দল নির্বাচিত হবে। তাই এই টুর্নামেন্টে ভাল পারফরম্যান্সে কিন্তু জাতীয় দলে তাঁকে জায়গা পাইয়েই দিতেই পারে। লখনউয়ের বাংলা বাজারের চাঁদনী শর্মার সফরটা যে সহজ হবে তা, কিন্তু তিনি ভালভাবেই জানতেন। তবে পারিবারিক আর্থিক অবস্থাও তাঁর জেদের কাছে হার মানে। জয় হয় প্রতিভার।
ক্লাস এইটে পড়াকালীনই চাঁদনী পড়াশুনা ছেড়ে ক্রিকেটে সম্পূর্ণ মনোনিবেশ করতে চেয়েছিলেন। তবে তাঁর ভাইয়ের পরামর্শেই ক্লাস ১০ অবধি পড়াশোনা চালিয়ে যান চাঁদনী। কিন্তু ১০-র পরীক্ষার পরেই আর পড়াশুনা নয়, ক্রিকেটকেই সম্পূর্ণভাবে বেছে নেন চাঁদনী। ক্রিকেটে অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হওয়ার জন্য খাওয়া দাওয়া করবেন না, বাড়িতে অনশন ঘোষণা করে দেন তিনি। শেষমেশ নর্দান রেলওয়ে স্টেডিয়ামে অনুশীলনে ভর্তি হন তিনি। অর্থাভাবে অ্যাকাডেমির বেতন দিতেন পারবেন না বলে আগেই জানিয়েছিলেন চাঁদনীর বাবা, তবে কোচেরা কিন্তু সেই কারণে তাঁকে বিরত রাখেননি।
নর্দান রেলওয়ের ক্রীড়াসচিব তথা লখনউয়ের মহিলা ক্রিকেট শাখার চেয়ারপার্সন প্রিয়ঙ্কা সালিলি জানান অ্যাকাডেমিতে তাঁকে সকাল, সন্ধে অনুশীলন করার সুযোগ দেওয়া থেকে তাঁর জন্য খাবারের আয়োজন করা, কোনওকিছুতেই কমতি রাখেননি তাঁরা। সম্প্রতি হরিয়ানায় বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টে নয় ম্যাচে ১৯টি উইকেট নিয়ে সর্বোচ্চ উইকেটসংগ্রাহক হন চাঁদনী। এরপরেই আসে জাতীয় 'এ' অনূর্ধ্ব ১৯ দলে ডাক।
লেগ স্পিনার চাঁদনী এই সুযোগের পর নিজের কোচ এবং পরিবারকে এই সফরে তাঁর মদত করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান, 'এইটা আমার কোচেদের এবং আমার পরিবারের খাটা খাটনির পরিণাম। আমার অ্যাকাডেমির বেতন দেওয়ার সামর্থ্যটুকুও না ছিল না বাবার, তবে আমায় তা সত্ত্বেও কোনওদিন বাধা দেননি ওঁ। আমায় নর্দান রেলওয়ে স্টেডিয়ামে নিয়ে গিয়ে কোচ প্রিয়াঙ্কা সাহিলি ও সাইমা আলিকে তিনি জানিয়েই দেন যে টাকা দেওয়ার সামর্থ্য তাঁর নেই। তবে থেকে এখানেই খেলছি আমি।'
যুজবেন্দ্র চাহালকে আইডল মনে করা চাঁদনী আরও যোগ করেন, 'আমার বাড়ি থেকে স্টেডিয়ামটি ১০ কিলোমিটার দূরে। এই দূরত্বটা আমি রোজ বাবার বন্ধুর উপহার দেওয়া সাইকেলে করেই পার করি। বিগত পাঁচ বছর ধরে অনুশীলন করছি এবং প্রতিদিনই আমার কোচেরা ক্রিকেটের না না ছোট ছোট বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে আমার উন্নতি ঘটানোর চেষ্টা করেছেন যেটা আমায় আজ সাহায্য করছে। ভবিষ্যতেও এভাবেই ভাল পারফর্ম করে যেতে চাই।' জানান তরুণী।
আরও পড়ুন: পেনাল্টি মিস এমবাপের, ৮ ম্যাচ পরে মাদ্রিদকে হারাল লিভারপুল, জয় ডর্টমুন্ডের, গোলশূন্য ড্র জুভের