মুম্বই: ভারতের ওয়ান ডে দলের অধিনায়ক এখনও রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। তিনি ভারতের ২৪তম খেলোয়াড়, যিনি ওয়ান ডে দলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। রোহিতের কেরিয়ার শেষের দিকে। প্রশ্ন উঠছে, ভারতের ওয়ান ডে দলের পরবর্তী অধিনায়ক কে হবেন? কেউ শুভমন গিলের নাম করছেন, কেউ কেউ শ্রেয়স আইয়ারের কথা বলছেন। ভারতের ODI দলের অধিনায়কত্ব কারা করেছেন? তাঁদের রেকর্ডই বা কী রকম? রইল ঝলক।
অজিত ওয়াডেকর (১৯৭৪)
অজিত ওয়াডেকার ভারতীয় ODI দলের প্রথম অধিনায়ক ছিলেন, তিনি মোট ২ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন। যদিও দুটি ম্যাচেই ভারত হেরে গিয়েছিল।
শ্রীনিবাসন বেঙ্কটরাঘবন (১৯৭৫-৭৯)
শ্রীনিবাসন বেঙ্কটরাঘবন ভারতের হয়ে ৭টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন, এর মধ্যে ভারত মাত্র ১টিতে জিতেছিল, যেখানে ৬টি ম্যাচে হেরেছে।
বিষাণ সিংহ বেদি (১৯৭৫-১৯৭৮)
বিষাণ সিংহ বেদির অধিনায়কত্বে ভারত ৪টি ODI ম্যাচ খেলেছে, তাঁর অধিনায়কত্বেও ভারত মাত্র ১টি ম্যাচ জিততে পেরেছে, যেখানে ৩টিতে হারতে হয়েছে।
সুনীল গাওস্কর (১৯৮০-১৯৮৫)
সুনীল গাওস্কর ৩৭টি ODI ম্যাচে ভারতীয় দলের দায়িত্বভার সামলেছেন, তাঁর জয়ের হার ছিল ৩৭.৮৩। এর মধ্যে ভারত ১৪টি ম্যাচ জিতেছে এবং ২১টি হেরেছে। ২ ম্যাচে কোনও ফল হয়নি।
গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথ (১৯৮০)
গুণ্ডাপ্পা বিশ্বনাথ ভারতের পঞ্চম ODI অধিনায়ক হন, যদিও তিনি মাত্র একটি ম্যাচেই অধিনায়কত্ব করতে পেরেছিলেন। এই ম্যাচটি ভারতীয় দল হেরে গিয়েছিল।
কপিল দেব (১৯৮২-১৯৯২)
১৯৮৩ সালে ভারতকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক কপিল দেব তাঁর কেরিয়ারে ৭৪টি ODI ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন। এর মধ্যে ভারত ৩৯টি ম্যাচ জিতেছে এবং ৩৩টি হেরেছে, তাঁর জয়ের হার ছিল ৫২.৭০।
সৈয়দ কিরমানি (১৯৮৩)
সৈয়দ কিরমানিকে একটি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, যা টিম ইন্ডিয়া হেরে গিয়েছিল।
মোহিন্দর অমরনাথ (১৯৮৪)
১৯৮৪ সালে মোহিন্দর অমরনাথ শুধুমাত্র একটি ম্যাচের জন্য অধিনায়ক হন, যদিও এই ম্যাচের কোনও ফল হয়নি।
রবি শাস্ত্রী (১৯৮৬-১৯৯১)
কপিল দেবের সময়েই রবি শাস্ত্রীও ১১টি ODI ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন, যার মধ্যে ভারত ৪টি ম্যাচ জিতেছে এবং ৭টি ম্যাচ হেরেছে।
দিলীপ বেঙ্গসরকার (১৯৮৭-৮৮)
ভারতের দশম ODI অধিনায়ক ছিলেন দিলীপ বেঙ্গসরকার, যাঁর অধিনায়কত্বে ভারত মোট ১৮টি ম্যাচ খেলেছে। এর মধ্যে ৮টি ম্যাচ ভারত জিতেছে এবং ১০টিতে হেরেছে।
কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত (১৯৮৯)
এক বছরে কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত ভারতের হয়ে ১৩টি ODI ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন, এর মধ্যে ভারত ৪টিতে জিতেছে এবং ৮টিতে হারতে হয়েছে। তাঁর জয়ের হার ছিল ৩০.৭৬।
মহম্মদ আজহারউদ্দিন (১৯৮৯-১৯৯৯)
আজহারউদ্দিন ১০ বছরের মধ্যে ভারতের ODI দলে ১৭৪টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন, এর মধ্যে টিম ইন্ডিয়া ৯০টি ম্যাচ জিতেছে এবং ৭৬টিতে হারতে হয়েছে। আজহারউদ্দিনের জয়ের হার ৫১.৭২।
সচিন তেন্ডুলকর (১৯৯৬-৯৯)
ক্রিকেটের ভগবান হিসাবে পরিচিত সচিন তেন্ডুলকর ভারতীয় ODI দলের ৭৩টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন। এর মধ্যে ২৩টিতে জয় এসেছে, যেখানে ৪৩টিতে হারতে হয়েছে। সচিনের অধিনায়ক হিসেবে জয়ের হার ৩১.৫০।
অজয় জাডেজা (১৯৯৮-১৯৯৯)
অজয় জাদেডেজা ভারতের হয়ে অধিনায়ক হিসেবে ১৩টি ODI ম্যাচ খেলেছেন, এর মধ্যে ৮টিতে জয় এসেছে এবং ৫টিতে হার।
সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় (১৯৯৯-২০০৫)
সৌরভ ভারতের দ্বিতীয় অধিনায়ক যিনি ১০০টির বেশি ODI ম্যাচে জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেছেন। তাঁর অধিনায়কত্বে খেলা ১৪৬টি ODI ম্যাচের মধ্যে ভারত ৭৬টিতে জয়লাভ করেছে এবং ৬৫টিতে হেরেছে। সৌরভের অধিনায়ক হিসেবে জয়ের হার ৫২.০৫। তাঁর অধিনায়কত্বে ভারত ২০০৩ বিশ্বকাপের ফাইনাল পর্যন্ত পৌঁছেছিল।
রাহুল দ্রাবিড় (২০০০-২০০৭)
রাহুল দ্রাবিড় ভারতের হয়ে ৭৯টি ODI ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন, এর মধ্যে ৪২টিতে জয় এসেছে এবং ৩৩টিতে হার। দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বে ভারত ২০০৭ ODI বিশ্বকাপ খেলেছিল, যেখানে তারা বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয়।
অনিল কুম্বলে (২০০২)
অনিল কুম্বলে একটিমাত্র ODI-তে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেছেন, এই ম্যাচটি ভারত জিতেছিল। কুম্বলে ভারতের প্রধান কোচও হয়েছিলেন।
বীরেন্দ্র সহবাগ (২০০৩-২০১১)
বীরেন্দ্র সহবাগ ভারতের হয়ে ১২টি ODI ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন, এর মধ্যে ভারত ৭টিতে জিতেছে এবং ৫টিতে হেরেছে।
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (২০০৭-২০১৮)
এমএস ধোনি ভারতের হয়ে ২০০টি ODI ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন, যা সবচেয়ে বেশি। এর মধ্যে ভারত ১১০টি ম্যাচ জিতেছে এবং ৭৪টি হেরেছে, তাঁর জয়ের হার ছিল ৫৫। ধোনির অধিনায়কত্বে ভারত ২০১১ সালে বিশ্বকাপ ও ২০১৩ সালে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জিতেছিল।
সুরেশ রায়না (২০১০-২০১৪)
সুরেশ রায়না ভারতের ২০তম ODI অধিনায়ক হন, তিনি ১২টি ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন। এর মধ্যে টিম ইন্ডিয়া ৬টিতে জয়লাভ করেছে এবং ৫টিতে হেরেছে।
গৌতম গম্ভীর (২০১০-২০১১)
বর্তমানে ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রধান কোচ গৌতম গম্ভীর ভারতের হয়ে ৬টি ODI ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন, এর মধ্যে ৬টি ম্যাচই ভারত জিতেছে।
বিরাট কোহলি (২০১৩-২০২১)
বিরাট কোহলি মোট ৯৫টি ODI ম্যাচে ভারতের অধিনায়কত্ব করেছেন, এর মধ্যে ৬৫টিতে জয় এসেছে এবং ২৭টিতে হার। কোহলির অধিনায়ক হিসেবে ODI-তে জয়ের হার ৬৫.৪২। বিরাট কোহলি এখনও শুধুমাত্র ODI ফর্ম্যাটে খেলেন, তিনি টেস্ট এবং টি-২০ থেকে অবসর নিয়েছেন।
অজিঙ্ক রাহানে (২০১৫)
রাহানে মাত্র ৩টি ODI ম্যাচে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেছেন, এর মধ্যে ৩টি ম্যাচই ভারত জিতেছে।
রোহিত শর্মা (২০১৭ থেকে এখনও পর্যন্ত)
রোহিত শর্মা ভারতীয় ODI দলের ২৪তম অধিনায়ক হয়েছিলেন, ২০১৭ সালে তিনি প্রথমবার অধিনায়কত্ব করেন। ২০২৩ বিশ্বকাপের ফাইনাল পর্যন্ত দল তাঁর অধিনায়কত্বে পৌঁছেছিল। এই বছর ODI ফর্ম্যাটে হওয়া চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির খেতাবও রোহিতের অধিনায়কত্বে ভারত জিতেছিল। রোহিতও টি-২০ এবং টেস্ট থেকে অবসর নিয়েছেন, এখন বড় প্রশ্ন হল রোহিত শর্মা কি ২০২৭ বিশ্বকাপ খেলবেন? তাঁর পরে নতুন অধিনায়ক কে হবেন?
শিখর ধবন (২০২১-২০২২)
গব্বর নামে পরিচিত শিখর ধবন ভারতের হয়ে ১২টি ODI ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন, এর মধ্যে ৭টিতে টিম ইন্ডিয়া জয়লাভ করেছে এবং ৩টিতে হেরেছে।
কে এল রাহুল (২০২২-২০২৩)
কে এল রাহুল ভারতের হয়ে ১২টি ODI ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেছেন। তাঁর অধিনায়কত্বে ভারত ৮টি ম্যাচ জিতেছে এবং ৪টি হেরেছে।
হার্দিক পাণ্ড্য (২০২৩)
হার্দিক পাণ্ড্য ২০২৩ সালে ভারতীয় ODI দলের অধিনায়কত্ব করেছিলেন, তিনি ভারতের ২৭তম খেলোয়াড় হয়েছিলেন যিনি ODI দলের দায়িত্বভার গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর নেতৃত্বে ভারত ৩টির মধ্যে ২ ম্যাচ জিতেছে এবং ১টিতে হেরেছে।
ODI-তে ভারতীয় দলের পরবর্তী অধিনায়ক কে হবেন?
মহাম্মদ কাইফ থেকে শুরু করে অনেক প্রাক্তন ক্রিকেটার মনে করেন যে রোহিত শর্মার পর শুভমন গিল ODI-এর অধিনায়ক হবেন। শুভমন গিলকে টেস্টের পর টি-২০-র অধিনায়কও করা হতে পারে। বর্তমানে টি-২০-র অধিনায়ক সূর্যকুমার যাদব, যাঁর নেতৃত্বে ভারত এশিয়া কাপ খেলবে।