সন্দীপ সরকার, কলকাতা: আগামী সপ্তাহে আইপিএলের (IPL 2024) প্লে অফ। তারপরই ফাইনাল। সপ্তদশ আইপিএলে কারা চ্যাম্পিয়ন, নির্ধারিত হয়ে যাবে ২৬ মে, রবিবার।
ইডেন গার্ডেন্সে (Eden Gardens) অবশ্য আইপিএলের বিসর্জন হয়ে গিয়েছে। ১১ মে ক্রিকেটের নন্দনকাননে শেষ ম্যাচ খেলে ফেলেছে কলকাতা নাইট রাইডার্স (KKR)। ১৬ মে শেষবারের মতো ইডেনে প্র্যাক্টিস সেরেছে কেকেআর। রাজস্থান রয়্যালস ম্যাচ খেলতে গুয়াহাটি রওনা হওয়ার আগে ঘরের মাঠেই এক দফা মহড়া সেরে নিয়েছেন শ্রেয়স আইয়ার, সুনীল নারাইন, আন্দ্রে রাসেলরা।
আইপিএলের কলকাতা-পর্ব শেষ হওয়া মাত্রই বাংলা ক্রিকেটে পদত্যাগের ঢল! এক আধজন নয়, এক ঝাঁক প্রাক্তন ক্রিকেটার, যাঁরা বর্তমানে কোচিংয়ের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের ইস্তফা দিতে বলা হয়েছে। পদ ছাড়তে বলা হয়েছে ক্রিকেটের দৈনন্দিন কাজকর্মের সঙ্গে জড়িত কর্মীদেরও। আর সেই নির্দেশ দিয়েছে খোদ বঙ্গ ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা সিএবি!
কিন্তু কী এমন হল যে, ঝাঁকে ঝাঁকে সকলকে ইস্তফা দিতে হচ্ছে?
১১ জুন থেকে শুরু হচ্ছে বেঙ্গল প্রো টি-২০ লিগ। ফ্র্যাঞ্চাইজি নির্ভর যে টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট এবারই প্রথম শুরু করছে সিএবি। পুরুষ ও মহিলা - দুই বিভাগে ৮টি করে মোট ১৬টি দল অংশ নেবে টুর্নামেন্টে। ১৯ মে, রবিবার বাইপাসের ধারে এক অভিজাত হোটেলে হবে ক্রিকেটারদের ড্রাফ্টিং।
টুর্নামেন্ট শুরুর আগে লোঢা কমিটির নির্দেশিকা নিয়ে থরহরিকম্প শুরু হয়ে গিয়েছে সিএবি-তে। সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত যে কমিটির তত্ত্বাবধানে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড সহ সমস্ত রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার গঠনতন্ত্র বদলে ফেলা হয়েছিল। সেই গঠনতন্ত্রে সাফ বলা হয়েছে, কোনওভাবেই কারও বিরুদ্ধে যেন স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ না ওঠে। এক ব্যক্তি এক পদ মেনে চলতে হবে কঠোরভাবে।
এদিকে বেঙ্গল প্রো টি-২০ লিগে আট দলের সঙ্গে কোচ বা সাপোর্ট স্টাফ হিসাবে যাঁরা যুক্ত হয়েছেন, তাঁরা প্রায় সকলেই কোনও না কোনওভাবে সিএবি-র সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। বাংলা ক্রিকেটের বিভিন্ন দায়িত্বে রয়েছেন। বাংলা ক্রিকেট দল ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট লিগ, দুই জায়গায় একসঙ্গে থাকলে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠতে পারে, আশঙ্কা সিএবি-র। সেই কারণে বেঙ্গল প্রো টি-২০ লিগে যাঁরা বিভিন্ন দায়িত্ব নিচ্ছেন, তাঁদের সিএবি-র দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। যে ঘটনায় বেশ শোরগোল পড়েছে। অনেকেই বুঝতে পারছেন না, খোদ সিএবি পরিচালিত এক টুর্নামেন্টে কাজ করলে কী করে স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়ে পড়া হয়? এ ব্যাপারে সিএবি প্রেসিডেন্টের কাছে ব্যাখ্যাও চাইতে পারেন কয়েকজন।
সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায় এবিপি আনন্দকে বললেন, 'আমরা চাই না কারও বিরুদ্ধে স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগ উঠুক। তাই যে কোনও একটা দায়িত্বেই থাকা যাবে। যারা বাংলার বিভিন্ন দলের কোচিং স্টাফের অংশ, তারা বেঙ্গল প্রো টি-২০-তে কোনও দলের দায়িত্বে থাকলে সিএবি থেকে ইস্তফা দিতে বলা হচ্ছে।' তবে জানা গেল, ইস্তফার মাধ্যমে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি শুধু টুর্নামেন্ট চলাকালীন মাস খানেকের জন্য। তারপর ফের সিএবি সকলকে দায়িত্বে ফিরিয়ে আনবে।
যদিও তাতে ধোঁয়াশা কাটছে না। প্রশ্ন ওঠা থামছে না। বলা হচ্ছে, আগে থেকে কি এই পরিস্থিতির কথা ভেবে সেই অনুযায়ী চুক্তি করা যেত না? কেউ কেউ আরও একটা ব্যাপারে অসন্তুষ্ট। সিএবি সব ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের জানিয়েছে, কোচ ও সাপোর্ট স্টাফদের সঙ্গে চুক্তির টাকা সরাসরি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির হাতে না দিয়ে তা সিএবি-র হাতে দিতে। সিএবি তা তুলে দেবে সেই কোচ বা সাপোর্ট স্টাফদের হাতে। এভাবে ঘুরিয়ে কেন সাম্মানিক নিতে হবে, প্রশ্ন তুলছেন কেউ কেউ। কারও কারও আবার আশঙ্কা, সিএবি-র সঙ্গে ১২ মাস হিসাবে চুক্তি থাকলে ইস্তফা দেওয়াকালীন সেই একমাসের মাইনে কেটে নেওয়া হবে না তো?
বাংলার সিনিয়র দলের প্রধান কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্ল যেমন মেদিনীপুর উইজার্ডসের মেন্টর হিসাবে যোগ দিয়েছেন। বাংলার সিনিয়র দলের কোচ সৌরাশিস লাহিড়ী শিলিগুড়ি স্ট্রাইকার্সের দায়িত্ব নিচ্ছেন। মুকেশ কুমার-আকাশ দীপদের বোলিং কোচ শিবশঙ্কর পাল কলকাতা রয়্যাল টাইগার্সের কোচ হিসাবে যোগ দিয়েছেন। গত মরশুম পর্যন্ত বাংলার সিনিয়র দলের প্রধান নির্বাচক থাকা শুভময় দাস হাওড়া ওয়ারিয়র্সের কোচ। একমাত্র শুভময় আগেই নির্বাচকের পদ ছেড়েছিলেন। সেটা অবশ্য বাংলার অনূর্ধ্ব ১৯ দলের কোচ হিসাবে তাঁর নাম পাকা হয়ে গিয়েছে বলে। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সেই চুক্তি হওয়ার দিনক্ষণও পিছিয়ে যাওয়ার কথা।
অনেকে ভেবেই পাচ্ছেন না, সিএবি-র সঙ্গে চুক্তি থাকলে বা রাজ্য ক্রিকেট সংস্থার কর্মী হিসাবে নিযুক্ত থাকলে সিএবি-রই একটি টুর্নামেন্টে বিশেষ দায়িত্ব পালনের জন্য কেন স্বার্থের সংঘাতে জড়িয়ে পড়া হবে। উদাহরণ হিসাবে বলা হচ্ছে, ঘরোয়া ক্রিকেটে বিভিন্ন দলের কোচেরা আইপিএলের সময় ফ্র্যাঞ্চাইজি দলে যুক্ত থাকেন। যেমন চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত। ঘরোয়া ক্রিকেটে মধ্যপ্রদেশের কোচ। আইপিএলে কেকেআরের। যেমন ওমকার সালভি। তাঁরা পারছেন কীভাবে? আরও বলা হচ্ছে, যদি স্বার্থের সংঘাতের অভিযোগই ওঠে, তাহলে বাংলার যে সমস্ত ক্রিকেটারেরা বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজি দলে খেলবেন, তাঁরা বাদ যান কীভাবে? সিএবি-র কাছে তা জানতেও চাওয়া হবে বলে খবর।
ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলির মধ্য়ে কিছুটা ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে সিএবির একটি নির্দেশিকায়। যেখানে সব দলকে টুর্নামেন্ট চলাকালীন ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফদের বাইপাসের ধারে অভিজাত হোটেলে রাখতে বলা হয়েছে। দলগুলি চেয়েছিল, পাঁচতারা হোটেলে নয়, তবে ভাল মানের হোটেলে রেখে টুর্নামেন্টটা খেলাতে। তাতে খরচ অনেকটাই কমত। যদিও রাজি নয় সিএবি। তাতে ফ্র্যাঞ্চাইজি দলগুলির খরচ অনেকটাই বাড়ছে বলে খবর।
এদিকে, ওয়ান ডে বিশ্বকাপের সময় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হওয়া ইডেন গার্ডেন্সের বক্স ভেঙে দেওয়া হচ্ছে। তা নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক। সিএবি প্রেসিডেন্ট স্নেহাশিস এবিপি আনন্দকে বললেন, 'এতে বিতর্কের কিছু নেই। বিশ্বকাপের সময় আইসিসি-র নিয়ম মেনে একটা বাড়তি ব্রডকাস্টিং রুমের ব্যবস্থা করতে হয়েছিল। আর দেড় কোটি নয়, ওই বক্স তৈরি করতে ১ কোটি ২০ লক্ষ টাকা মতো খরচ হয়েছিল। বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজন করার জন্য এইসব কারণেই আমরা ২৬ কোটি টাকা পেয়েছিলাম।' স্নেহাশিস আরও বললেন, 'ইডেনে কোনও নির্মাণকাজের জন্য সেনাবাহিনীর অনুমতি নিতে হয়। সেটা অস্থায়ী নির্মাণ হলেও। বিশ্বকাপের পরই ওই বক্স ভেঙে দেওয়ার কথা ছিল। আমরা অনুরোধ করায় বক্সটি আইপিএল পর্যন্ত রাখার অনুমতি দেওয়া হয়। আইপিএল মিটতেই তাই ভাঙা হচ্ছে। ঠিক যেভাবে অস্থায়ী কিচেন-ক্যান্টিনও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।'
যদিও তাতে বিতর্ক থামছে না। অনেকেই বলছেন, সেনাবাহিনীর সঙ্গে কথা বলে ঝাঁ চকচকে বক্সটিকে রেখে দেওয়ার ব্যাপারে কোনও ব্যবস্থাই কি করা যেত না? আলোচনায় তা সম্ভব ছিল বলে মনে করছেন সিএবি-রই কেউ কেউ।
আরও পড়ুন: রোনাল্ডো-মেসিদের সঙ্গে টক্কর, সুনীল ছেত্রীর চোখে নিজের সেরা গোল কোনটা?
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।