সন্দীপ সরকার, কলকাতা: ক্রিকেট মাঠের পরিচিত শব্দবন্ধ - নড়বড়ে নব্বই। অর্থাৎ, সেঞ্চুরির আগেই আউট হয়ে যাওয়া। যে কোনও ব্যাটারের কাছে মানসিক ধাক্কা। আর অনুরাগীদের মনে আক্ষেপ, ইশশশ, আর কটা মাত্র রান যদি হতো...


কিন্তু ফুটবলে কেউ যদি ৯৪ গোল করে আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শেষ করেন? যদি অল্পের জন্য নষ্ট হয় সেঞ্চুরি গোলের মাইলফলক স্পর্শ করার সুযোগ? বিশ্ব ফুটবলের ইতিহাসে যে বিরল নজির স্পর্শ করেছেন মাত্র তিন তারকা - ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো, আলি দাই ও লিওনেল মেসি। মনে গভীর শূন্যতা তৈরি হবে নিশ্চয়ই?


সুনীল ছেত্রী (Sunil Chhetri) অবশ্য অন্য ধাতুতে গড়া। হাসতে হাসতে সেঞ্চুরি গোলের মুখে দাঁড়িয়েও আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় জানাতে পারেন। ৩৯ বছর বয়সেও সুপারফিট। অথচ সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন, ৬ জুন সল্ট লেকের যুবভারতী স্টেডিয়ামে কুয়েতের (India vs Kuwait) বিরুদ্ধে ম্যাচই ভারতীয় দলের জার্সিতে তাঁর শেষ ম্যাচ। একশো গোলের সুযোগ নষ্ট হওয়ায় আক্ষেপ বা কোনও শূন্যতা থাকবে না?


অবসর ঘোষণার পরেই দেশের বাছাই করা কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি কথা বললেন জাতীয় দলের কিংবদন্তি ফুটবলার। সাক্ষাৎকার কম, আড্ডা যেন বেশি। এবিপি আনন্দের প্রশ্ন শুনে সুনীল বললেন, 'না, আমার কোনও শূন্যতা নেই। যখন কেরিয়ার শুরু করেছিলাম, একবারও ভাবিনি এত গোল করব। ৬০ গোল, ৬৫, ৭০ গোল করব, এরকমও ভাবিনি। কখনও স্বপ্ন দেখিনি একশো গোল করব। কোনও দিন একশো গোল করা আমার পরিকল্পনায় ছিল না। আমার কোনও শূন্য অনুভূতি নেই। আমি দেশের হয়ে দেড়শো ম্যাচ খেলেছি। দারুণ গর্বের অনুভূতি। এই সংখ্যাটা নিয়ে গর্বিত। দেশের হয়ে ১৯ বছর ধরে খেলেছি, দেড়শো ম্যাচ খেলেছি। আমি সৌভাগ্যবান। খুব খুশি এটা নিয়েই। গোলের সংখ্যা নিয়ে বলতে পারি, দেশের হয়ে গোল করতে পারাটা ভীষণ আনন্দের। একশো গোল করতে না পারা নিয়ে কখনও ভাবিনি। তাই একশো গোল করা হল না, এসব নিয়ে চিন্তিত নই মোটেও।'


আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক গোলদাতাদের তালিকায় চার নম্বরে সুনীল। রোনাল্ডো, দাই ও মেসির পরেই। যে কারণে বিশ্ব ফুটবলের নিয়ামক সংস্থা ফিফাও আলাদা করে ছবি দিয়ে সুনীলের অবসরের সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়েছে। ৯৪ গোলের মধ্যে আপনার প্রিয়তম কোনটা? সুনীল এবিপি আনন্দকে বললেন, 'এটা বলা কঠিন। আমি হয়তো এখন একটা উত্তর দিলাম। তবে দশ দিন পর জিজ্ঞেস করলে আমার উত্তর বদলেও যেতে পারে। ঠিক এই মুহূর্তে যে গোলটার কথা মনে পড়ছে সেটা উজবেকিস্তানের বিরুদ্ধে করেছিলাম। বেঙ্গালুরুতে সেই ম্যাচটায় দারুণ ফুটবল খেলেছিলাম। আমাদের এশিয়া কাপে যোগ্যাতা অর্জনের চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা গোল করে দারুণভাবে সেটা রক্ষা করেছিলাম। জেজের পাসটা ছিল দুর্দান্ত। ওই গোলটার কথাই মনে পড়ছে।'


নিজে ফুটবল থেকে অবসর নিলেও সুনীলের আবেদন, জাতীয় দলকে, ভারতীয় ফুটবলকে সমর্থন করে যান... পাশে থাকুন...


আরও পড়ুন: সবাইকেই থামতে হয়, সুনীলের অবসরের সিদ্ধান্ত শুনে বলছেন শ্বশুর সুব্রত


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।