নয়াদিল্লি: ওয়ান ডে বিশ্বকাপের (ODI World Cup 2023) আর মাস দু'য়েকও বাকি নেই। বিশ্বক্রিকেটে ইতিমধ্যেই সাজ সাজ রব শুরু গিয়েছে, বাড়ছে সমর্থকদের উন্মাদনার পারদও। মেগা টুর্নামেন্টের আগে সব দলই নিজেদের দলের ভারসাম্য, শক্তি, দুর্বলতা বিচার করে দল গোছানোর কাজ সারতে ব্য়স্ত। তার ফাঁকে এবিপি লাইভ বিশ্বকাপের দশ স্টেডিয়ামের হাল হকিকত জানাতে শুরু করল বিশেষ এই সিরিজ়। এই সিরিজ়ের প্রথম তিন পর্বে আলোচনা হয়েছে ধর্মশালা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও ভারতে আয়োজিত গত বিশ্বকাপ ফাইনালের ভেন্যু, মুম্বইয়ের বিখ্যাত ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম নিয়ে। চতুর্থ কিস্তিতে আজ রাজধানী নয়াদিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম (Arun Jaitley Stadium) নিয়ে আমরা আলোচনা করব।


দিল্লি ক্রিকেট সংস্থার (DDCA) ঐতিহাসিক এই স্টেডিয়ামে এবারের বিশ্বকাপের পাঁচটি ম্যাচ আয়োজিত হবে। এর আগে তিনটি বিশ্বকাপের কোনওটিতেই এতগুলি ম্যাচ আয়োজন করেনি এই স্টেডিয়াম। এবারের বিশ্বকাপে এই স্টেডিয়ামে আয়োজিত পাঁচ ম্যাচের মধ্যে ভারতের একটি ম্যাচও রয়েছে। রোহিত শর্মারা এই স্টেডিয়ামেই রশিদ খানদের আফগানিস্তানের মুখোমুখি হবেন। গত বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড, রেকর্ড চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচ রয়েছে এই স্টেডিয়ামে। দুই পড়শি বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার ম্যাচও আয়োজন হবে অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামেই। তবে পাঁচ ম্যাচই গ্রুপ পর্বের ম্যাচ। নক আউট পর্বের কোনও ম্যাচ এই স্টেডিয়ামে আয়োজিত হবে না।


নয়াদিল্লির বাহাদুর শাহ মার্গে অবস্থিত এই স্টেডিয়ামের পরতে পরতে ইতিহাস জড়িয়ে। ক্রিকেটের নন্দন-কানন ইডেন গার্ডেন্সের পরে এই স্টেডিয়ামই ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম ক্রিকেট স্টেডিয়াম। ১৮৮৩ সালে এই স্টেডিয়াম তৈরি হয়। কোটলা দুর্গ স্টেডিয়ামটির পাশেই অবস্থিত হওয়ায় স্টেডিয়ামের নামকরণ সেই অনুসারেই ফিরোজ শাহ কোটলা (Feroz Shah Kotla) করা হয়। ২০১৯ সালে ১২ সেপ্টেম্বর অবশ্য স্টেডিয়ামটির নাম বদলে প্রাক্তন ডিডিসিএসভাপতি অরুণ জেটলির নামে নামাঙ্কিত করা হয়। যদিও ডিডিসিএ-র তরফে পরবর্তীকালে জানানো হয় যে কেবল স্টেডিয়ামেরই নাম বদল করা হয়েছে। মাঠটির নাম ফিরোজ শাহ কোটলাই রাখা হচ্ছে।


এই মাঠেই কিন্তু বর্ডার-গাওস্কর ট্রফি নামকরণ হওয়ার পর ১৯৯৬ সালে ভারত-অস্ট্রেলিয়ার প্রথম টেস্ট সিরিজের আয়োজিত হয়েছিল। বছর তিনেক পর এই স্টেডিয়ামই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অনিল কুম্বলের এক ইনিংসে ১০ উইকেট নেওয়ার স্মরণীয় মুহূর্তের সাক্ষী থেকেছিল। নয়াদিল্লির মাঠেই সুনীল গাওস্কর টেস্টে স্যর ডন ব্র্যাডম্যানের ২৯টি শতরানের রেকর্ড স্পর্শ করেন। আবার তাঁর উত্তরসূরি সচিন তেন্ডুলকর, ২০০৫ সালের ২২ ডিসেম্বর কোটলাতেই তাঁকে পিছনে ফেলে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে নিজের টেস্ট কেরিয়ারের ৩৫তম শতরানটি হাঁকান। হয়ে যান লাল বলের ক্রিকেটের ইতিহাসের সর্বোচ্চ শতরানের মালিক।


স্টেডিয়ামটিকে ভারতের দুর্গ বললেও খুব ভুল বলা হবে না। ফ্রেবুয়ারি মাসে এই স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে টেস্ট জিতেছিল ভারত। এমনকী ১৯৮৭ সালের পর থেকে এই মাঠে লাল বলের ক্রিকেটে ভারতকে কখনও হারের মুখ দেখতে হয়নি। ওয়ান ডে ক্রিকেটেও 'কিলা কোটলা'য় ভারতের রেকর্ড এক কথা দুর্দান্ত। ২০০৬ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত টিম ইন্ডিয়া এই মাঠে ওয়ান ডেতেও অপরাজিত ছিল। অবশ্য সাম্প্রতিক সময়ে সেই রেকর্ড বদলেছে। ৫০ ওভারের শেষ তিন ম্যাচের মধ্যে ভারতকে এখানে দুইটি ম্যাচ হারতে হয়েছে।


পিচ: অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামের পিচ সাধারণত ব্যাটিং সহায়কই হয়ে থাকে। তবে পিচের চরিত্র একেবারে প্রথাগত উপমহাদেশীয় পিচগুলির মতো। দিনের আলোতে ম্যাচ যত গড়ায় তত পিচ খানিকটা শুকিয়ে আসে এবং স্পিন বোলাররা মদত পান। পিচে খুব বেশি উঁচুতে বল লাফায় না। তবে রাতের বেলায় শিশির পড়লে তা ব্যাটিংটা অনেকটাই সহজ করে দেয়। কিন্তু ভারতের অন্যান্য অনেক মাঠের মতো এই মাঠে কিন্তু ৩০০ রান তোলা সহজ নয়। মাত্র দুইবারেই এই মাঠে ওয়ান ডেতে ৩০০-র অধিক রান করতে পেরেছে প্রথমে ব্যাট করা দল। ওয়ান ডের প্রথম ইনিংসে গড় রানও মাত্র ২২৩। যেহেতু অক্টোবর, নভেম্বর মাসে বিশ্বকাপের আসর বসবে এবং সেই সময় দিল্লিতে শিশির পড়ার সম্ভাবনা প্রবল, তাই টস জিতে অধিনায়করা এখানে প্রথমে বোলিং করারই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। 


তবে এই দিল্লির পিচকে নিয়ে কিন্তু অতীতে বড় বিতর্কও হয়েছিল। ২০০৯ সালে ভারত, শ্রীলঙ্কার এক ম্যাচে পিচ খেলার অযোগ্য বলে ঘোষণা করেন ম্যাচ আধিকারিকরা। পিচের বাউন্সে ভয়ঙ্কর তারতম্য লক্ষ্য করেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বাতিল করা হয় সেই ম্যাচ। এর জেরে এক বছর ক্রিকেটের নিয়ামক সংস্থা আইসিসির তরফে এই স্টেডিয়ামকে নির্বাসিত করা হয়েছিল। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি বিগত এক দশকের বেশি সময়ে আর কখনও হয়নি।


আবহাওয়া: অক্টোবর-নভেম্বর মাসে এবারের বিশ্বকাপ আয়োজিত হবে। এই সময়ে নয়াদিল্লির তাপমাত্রা খুব একটা কমার পূর্বাভাস নেই। অক্টোবরেই অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে চারটি ম্যাচ আয়োজিত হবে। সেই সময় তাপমাত্রা ২৬ থেকে ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশেপাশে থাকার কথা। নভেম্বরে তা খানিকটা কমে ২১ থেকে ৩০ ডিগ্রির মধ্যে ঘোরাফেরা করার পূর্বাভাস রয়েছে। তবে বিশ্বকাপ চলাকালীন ভারতের রাজধানীতে রাতের দিকে শিশির পড়ার পূর্বাভাস থাকলেও, কোনওসময়েই বৃষ্টির তেমন কোনও পূর্বাভাস নেই।


স্টেডিয়ামের মোট আসনসংখ্যা: অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে একসঙ্গে ৫৫,০০০ হাজার দর্শক মাঠে বসে ম্যাচের মজা উপভোগ করতে পারবেন।


অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ওয়ান ডে রেকর্ড:


প্রথম ওয়ান ডে – ১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৮২


শেষ ওয়ান ডে – ১১ অক্টোবর, ২০২২


ম্যাচ – ২৮


সর্বোচ্চ ইনিংস – ওয়েস্ট ইন্ডিজ় ৩৩০/৮ (বনাম নেদারল্যান্ডস, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১ বিশ্বকাপ)


সর্বনিম্ন ইনিংস – দক্ষিণ আফ্রিকা ৯৯ (বনাম ভারত, ১১ অক্টোবর, ২০২২)


সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর – রিকি পন্টিং ১৯৯৮ সালে এই মাঠে ব্যক্তিগত সর্বাধিক ১৪৫ রানের ইনিংস খেলেন জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে


সেরা বোলিং – কেমার রোচের ২০১১ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ৮.৩ ওভারে ২৭ রানে ছয় উইকেটে নেওয়া এই মাঠে সেরা বোলিং


সর্বাধিক রান- সচিন তেন্ডুলকর (৩০০)


সর্বাধিক উইকেট- রবীন্দ্র জাডেজা (৯)


অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে ভারতের ওয়ান ডে রেকর্ড:


ম্যাচ – ২১


জয় – ১৩


পরাজয় - ৭


অমীমাংসিত- ১


অরুণ জেটলি স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ম্যাচসমূহ:


১. দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম শ্রীলঙ্কা, ৭ অক্টোবর, শনিবার, দুপুর ২.০০


২. ভারত বনাম আফগানিস্তান, ১১ অক্টোবর, বুধবার, দুপুর ২.০০ 


৩. ইংল্য়ান্ড বনাম আফগানিস্তান, ১৫ অক্টোবর, রবিবার, দুপুর ২.০০


৪. অস্ট্রেলিয়া বনাম নেদারল্যান্ড, ২৫ অক্টোবর, বুধবার, দুপুর ২.০০


৫. বাংলাদেশ বনাম শ্রীলঙ্কা, ৬ নভেম্বর, সোমবার, দুপুর ২.০০


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial


আরও পড়ুন: এই মাঠেই রেকর্ড গড়েছেন গাওস্কর, কপিল, সচিন, নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়াম যেন ক্রিকেটের কলোসিয়াম