কলকাতা: ভারতের ফাস্ট বোলিং ত্রয়ী গোটা বিশ্বকাপ (ODI World Cup 2023) জুড়েই প্রতিপক্ষ ব্যাটারদের ত্রাস হয়ে উঠেছেন। যশপ্রীত বুমরা এবং মহম্মদ শামি নিজের অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্সে বিশ্বকাপে সকলের নজর কেড়েছেন। সেই বোলিং লাইন আপেরই অংশ মহম্মদ সিরাজও (Mohammed Siraj)। চলতি বিশ্বকাপে তাঁর সংগ্রহ ১৩টি উইকেট। বিশ্বকাপে নিজের সেরা ছন্দে না দেখালেও, সিরাজ বল হাতে ঠিক কতটা দক্ষ, তা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তাঁর ঘাতক বোলিংই প্রমাণ করে দেয়।


হায়দরাবাদের নিম্ন মধ্যবিত্ত এক ঘর থেকে জাতীয় দল পর্যন্ত সিরাজের সফরটা কিন্তু একেবারেই সহজ ছিল না। তাঁর বাবা পেশায় অটোরিক্সা চালক ছিলেন। মা লোকের বাড়িতে কাজ করতেন। কোনওক্রমে দিন কাটাত সিরাজদের। এই দারিদ্র্য দূর করার জন্য সিরাজের বাবা তাঁর ছোট্ট ছেলেকে পড়াশোনা শিখিয়ে ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করতে চেয়েছিলেন। সিরাজের বাবা মহম্মদ ঘউস চাইতেন ছেলে যাতে থিতু হয়ে ঠিকঠাক চাকরি করেন। তবে সিরাজের বরাবরই আগ্রহ ছিল ক্রীড়াজগতের দিকে।


বড় বয়স পর্যন্ত তিনি খেপ খেলেই দিন কাটাতেন। তবে তাঁর দক্ষতা চিহ্নিত করে হায়দরবাদের কয়েকজন তাঁকে টেনিস বল ছেড়ে ক্রিকেট বলে রাজ্য স্তরে খেলার পরামর্শ দেন। কঠিন নির্বাচনী প্রক্রিয়ার পর সিরাজের ভাগ্য তাঁর উপর সদয় হয়। ক্রিকেট বল হাতে শুরু হয় সিরাজের সফর। তবে ঘরের থেকে অনুশীলনের মাঠ দূরে হওয়ায় তাঁকে বাইক করে সফর করা শুরু করতে হয়। সিরাজ এক সাক্ষাৎকারে জানান তাঁর দাদা নিজের হাতখরচ হিসাবে পাওয়া ১০০ টাকা থেকে প্রতিনিয়ত ৭০ টাকা সিরাজকেই দিতেন। সেই ৭০ টাকার ৪০ টাকা গাড়িতে তেল ভরাতেই খরচ হয়ে যেত। 


এত সংঘর্ষের পর ভাগ্য সিরাজের দিকে মুখ তুলে চাইলেও, ফের ধাক্কা। হায়দরাবাদের অনূর্ধ্ব ২৩ দলের হয়ে এক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগেই ডেঙ্গির কবলে পড়েন সিরাজ। তবে ডেঙ্গি তাঁকে রুখতে পারেনি। হায়দরাবাদ থেকে সরাসরি মাঠে গিয়ে ম্যাচ খেলতে নেমে পড়েন সিরাজ। এরপর রাজ্য স্তর আইপিএলে আসে খেলার সুযোগ। সেখানেও কিন্তু শুরুর দিকে আহামরি পারফর্ম করতে পারেননি তিনি। প্রবল সমালোচনা, কটাক্ষের সম্মুখীন হতে হয় তাঁকে। এই সময়ই অধিনায়ক বিরাট কোহলির তাঁর পাশে দাঁড়ান বলে জানান সিরাজ।


সিরাজের বাবা বরাবরই তাঁর ছেলেকে ভারতীয় টেস্ট জার্সি গায়ে চাপিয়ে মাঠে নামতে দেখার স্বপ্ন দেখতেন। ২০২০ সালের অস্ট্রেলিয়া সফরে টেস্ট অভিষেক ঘটান সিরাজ। তবে তাঁর বাবা ছেলের অভিষেকের আগেই পরলোক গমন করেন। কড়া কোয়রান্টিন নির্দেশিকার জেরে বাবার শেষকৃত্যে পর্যন্ত উপস্থিত থাকতে পারেননি সিরাজ। নিজের টেস্ট অভিষেকে সিরাজের চোখের জল আজও নিশ্চয়ই সকল ক্রিকেটপ্রেমীর স্মৃতিতে তাজা রয়েছে। সিরাজের সফরের পরতে পরতে হার না মানা সংগ্রামের কাহিনি, যে কাউকে উদ্বুদ্ধ করতে বাধ্য। 


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।


https://whatsapp.com/channel/0029VaCBCh6545uwkeNBg11y


আরও পড়ুন: দীর্ঘমেয়াদি চোট থেকে ফর্ম নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন, প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও হার না মানা যোদ্ধা রাহুল