বেঙ্গালুরু: ওয়ান ডে বিশ্বকাপের (ODI World Cup 2023) আর মাস দু'য়েকও বাকি নেই। বিশ্বক্রিকেটে ইতিমধ্যেই সাজ সাজ রব। সমর্থকদের উত্তেজনার পারদও চড়ছে। মেগা টুর্নামেন্টের আগে সব দেশই নিজেদের দলের ভারসাম্য, শক্তি, দুর্বলতা বিচার করে দল গোছানোর কাজ সারতে ব্য়স্ত। তার ফাঁকে এবিপি লাইভ বিশ্বকাপের দশ স্টেডিয়ামের হাল হকিকত জানাতে শুরু করল বিশেষ এই সিরিজ়। এই সিরিজ়ের প্রথম পাঁচ পর্বে আলোচনা হয়েছে ধর্মশালা ক্রিকেট স্টেডিয়াম, আমদাবাদের নরেন্দ্র মোদি ক্রিকেট স্টেডিয়াম, মুম্বইয়ের বিখ্যাত ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়াম, রাজধানী নয়াদিল্লির অরুণ জেটলি স্টেডিয়াম ও হায়দরাবাদের রাজীব গাঁধী আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম নিয়ে। ষষ্ঠ কিস্তিতে আজ ভারতের 'গার্ডেন সিটি' বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়াম (M. Chinnaswamy Stadium) নিয়ে আমরা আলোচনা করব।


বেঙ্গালুরুর শহরের মধ্যমণি এই স্টেডিয়ামটি কর্ণাটক ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশনের (Karnataka Cricket Association) তত্ত্বাবধানে রয়েছে এবং সেই থেকেই প্রাথমিকভাবে স্টেডিয়ামটির নামকরণ কর্ণাটক স্টেট ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়াম করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে আশির দশকে বিসিসিআইয়ের সভাপতি তথা কর্ণাটক বোর্ডের সঙ্গে চার দশক ধরে যুক্ত থাকা এম চিন্নাস্বামীর নামে স্টেডিয়ামটি নামাঙ্কিত করা হয়।


চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামের পরতে পরতে রয়েছে ইতিহাস। এই স্টেডিয়াম যেমন তিন কিংবদন্তির শুরুর সাক্ষী থেকে, তেমনই মতান্তরে সর্বকালের সেরা ক্রিকেটারের বিদায়ী ঘণ্টারও সাক্ষীও এই চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামই। ১৯৭৪-৭৫ সালে স্টেডিয়ামটি প্রথমবার আন্তর্জাতিক টেস্ট ম্যাচ আয়োজন করে। অর্ধনির্মিত সেই স্টেডিয়ামে, সেই ম্যাচেই গর্ডন গ্রিনিজ ও ভিভি রিচার্ডস নিজেদের অভিষেক ঘটান। আবার ১৯৮৭ সালে এই মাঠেই সুনীল গাওস্কর পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নিজের শেষ টেস্ট ম্যাচটি খেলেন। ভারতীয় দল সেই সিরিজ নির্ণায়ক ম্যাচে ১৬ রানে পরাজিত হয় বটে। তবে স্পিনারদের স্বর্গরাজ্যের তাঁর ৯৬ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস, ইতিহাসের পাতায় আজও স্মরণীয় হয়ে রয়েছে।


অতীত থেকে সাম্প্রতিক সময়ে ফেরা যাক। চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামই কিন্তু বিশ্বের প্রথম ক্রিকেট স্টেডিয়াম যেখান সোলার প্যানেলের মাধ্যমে মাঠের সিংহভাগ বিদ্যুৎ তৈরি এবং ব্যবহারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। ২০০০ সালে বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামকেই বিসিসিআই জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমির ভেন্যু হিসাবে বেছে নেয়। তারপর এই ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতেই তারকা ক্রিকেটারদের রিহ্যাব, চোট সারানোর প্রক্রিয়া থেকে উঠতি ক্রিকেটারদের তালিম দেওয়ার কাজ চলছে।


গত বিশ্বকাপেই তো এই মাঠ একাধিক স্মরণীয় ম্যাচের সাক্ষী থেকেছিল। ভারত ও ইংল্যান্ড এই মাঠেই নিজেদের গ্রুপ পর্বের ম্যাচ খেলেছিল। হাই স্কোরিং সেই ম্যাচেই ভারতের হয়ে সচিন তেন্ডুলকর এবং ইংল্যান্ডের হয়ে অ্যান্ড্রু স্ট্রস শতরান হাঁকিয়েছিলেন। হাই স্কোরিং সেই ম্যাচ টাইয়ে শেষ হয়েছিল। উভয় দলই ৩৩৮ রান বোর্ডে তোলে। তার দিনকয়েক পরেই কেভিন ও ব্রাইনের দুরন্ত শতরানের ভর করে আয়ারল্যান্ড ৩২৯ রান তাড়া করে ইংল্যান্ড এই মাঠেই পরাজিত করেছিল।


পিচ: ভারতীয় উপমহাদেশের প্রথাগত মন্থর, অল্প বাউন্সের পিচের থেকে চিন্নাস্বীমী স্টেডিয়ামের পিচের চরিত্র খানিকটা ভিন্ন বাউন্স সহায়ক, যেখানে ম্যাচের শুরুর দিকে ফাস্ট বোলাররা হালকা মদত পায়। তবে ম্যাচ গড়ালে ব্যাটারদেরই দাপট চোখে পড়ে। ছোট বাউন্ডারি এবং ভাল বাউন্সের সুবাদে এই মাঠে দলগুলিকে বড় বড় তুলতেই সচরাচর দেখা যায়।


এই বাউন্সসহায়ক পিচে কিন্তু সেই কারণেই ঐতিহাসিকভাবে অ্যাওয়ে দলগুলি ভাল পারফর্ম করেছে। পাকিস্তান এই চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামেই একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ জিতেছে। পাকিস্তানের কিংবদন্তি অধিনায়ক ইনজামাম উল হক চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামেই নিজের শততম টেস্টে শতরান হাঁকিয়েছেন।আবার এক তরুণ সোনালি চুলের অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারের শতরান হাঁকিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে আগমনটাও এই মাঠেও। সেই ক্রিকেটার আর কেউ নন, অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বজয়ী অধিনায়ক তথা সর্বকালের অন্যতম সেরা ব্যাটার মাইকেল ক্লার্ক। তবে ঘরের ছেলে অনিল কুম্বলের চারশোতম টেস্ট উইকেটটিও আসে এই মাঠেই। 


আবহাওয়া: বছরের যে কোনও সময়েই বেঙ্গালুরুর আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ, উপভোগ্য। বিশ্বকাপ চলাকালীন অক্টোবর, নভেম্বর মাসেও এর অন্যথা হবে না। অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ ২৮ ডিগ্রি থেকে সর্বনিম্ন ১৯ ডিগ্রির আশেপাশে তাপমাত্র ঘোরাফেরা করার কথা। তবে এই সময় বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে। নভেম্বর মাসেও তাপমাত্রার খুব একটা হেরফের হবে না। সর্বোচ্চ ২৭ ডিগ্রি থেকে সর্বনিম্ন ১৮ ডিগ্রির আশেপাশে তাপমাত্রা থাকার পূর্বাভাস রয়েছে। অবশ্য অক্টোবর মাসের তুলনায় নভেম্বর মাসের বৃষ্টির পরিমাণ কমবে। আসন্ন বিশ্বকাপের বেঙ্গালুরুতে সিংহভাগ ম্যাচও কিন্তু নভেম্বরেই আয়োজিত হবে।


স্টেডিয়ামের মোট আসনসংখ্যা: বেঙ্গালুরুর চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে একসঙ্গে ৪০,০০০ হাজার দর্শক মাঠে বসে ম্যাচের মজা উপভোগ করতে পারবেন।


চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ওয়ান ডে রেকর্ড:


প্রথম ওয়ান ডে – ভারত বনাম শ্রীলঙ্কা (২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৮২)


শেষ ওয়ান ডে – ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া (১৯ জানুয়ারি, ২০২০)


ম্যাচ – ২৬


সর্বোচ্চ ইনিংস – ৩৮৩/৬ (ভারত বনাম অস্ট্রেলিয়া, ২ নভেম্বর ২০১৩)


সর্বনিম্ন ইনিংস –  ১৬৮ (বনাম পাকিস্তান, ৪ অপ্রিল, ১৯৯৯)


সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোর – ২০৯ রান (রোহিত শর্মা বনাম অস্ট্রেলিয়া, ২ নভেম্বর ২০১৩)


সেরা বোলিং – যুবরাজ সিংহ (আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৩১ রানের বিনিময়ে পাঁচ উইকেট ৬ মার্চ, ২০১১ বিশ্বকাপ)


সর্বাধিক রান- সচিন তেন্ডুলকর (১১ ইনিংসে মোট ৫৩৪ রান)


সর্বাধিক উইকেট- জাহির খান (৮ ম্যাচে ১৪টি উইকেট)


চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে ভারতের ওয়ান ডে রেকর্ড:


ম্যাচ – ২১


জয় – ১৪


পরাজয় - ৫


টাই- ১


অমীমাংসিত- ১


চিন্নাস্বামী স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপের ম্যাচসমূহ:


১. অস্ট্রেলিয়া বনাম পাকিস্তান, ২০ অক্টোবর, শুক্রবার, দুপুর ২.০০


২. ইংল্য়ান্ড বনাম শ্রীলঙ্কা, ২৬ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, দুপুর ২.০০ 


৩. নিউজিল্যান্ড বনাম পাকিস্তান, ৪ নভেম্বর, শনিবার, সকাল ১০.৩০


৪. নিউজিল্যান্ড বনাম শ্রীলঙ্কা, ৯ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার, দুপুর ২.০০


৫. ভারত বনাম নেদারল্যান্ডস, ১২ নভেম্বর, রবিবার, দুপুর ২.০০


আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন


https://t.me/abpanandaofficial


আরও পড়ুন: ব্যাটারদের স্বর্গরাজ্য, প্রথমবার বিশ্বকাপের ম্যাচ আয়োজনের অপেক্ষায় এই স্টেডিয়াম