কলকাতা: ভারতের পড়শি তথা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তান আশির দশকের শেষ দিক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত বিশ্বকাপে ধারাবাহিকভাবে পারফর্ম করেছে। ১৯৯২ সালের বিশ্বজয়ের পাশাপাশি এই সময়কালেই বিশ্বকাপের ফাইনাল এবং সেমিফাইনালেও উঠেছিল পাক দল। তবে সেইসব দিন অতীত। এই শতকে পাকিস্তানের ৫০ ওভার বিশ্বকাপের পারফরম্যান্স হতাশাজনকই বটে। এই দশকে ২০১১ সালের কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়কে হারানোই পাক দলের বিশ্বকাপের নক আউটে একমাত্র জয়। শেষ পাঁচ বিশ্বকাপের তিনটিতে তো তাঁরা প্রথম রাউন্ডের গণ্ডিই পার করতে পারেনি।
তবে সেইসব হতাশা পিছনে ফেলে ৩১ বছর আগের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর আশায় এ দেশে পা রেখেছেন বাবর আজমরা (Babar Azam)। অতীত ইতিহাস অবশ্য যাই বলুক না কেন, পাকিস্তান ক্রিকেট দল (Paksitan Cricket Team) কিন্তু বরাবরই সকলকে চমকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। তাদের দলে তারকার কিন্তু কমতি নেই।
সাম্প্রতিক ফর্ম
মাত্র সপ্তাহখানেকও আগেও পাকিস্তান আইসিসির ব়্যাঙ্কিংয়ে বিশ্বের এক নম্বর দল ছিল। ঘরের মাঠে মে মাসে নিউজ়িল্যান্ডকে ৪-১ এবং আফগানিস্তানকে অগাস্টে ৩-০ হারায় পাকিস্তান। এশিয়া কাপের শুরুটাও নেপালকে হারিয়ে দুরন্তভাবে করেছিলেন তাঁরা। তবে শেষ দুই ওয়ান ডে ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে ২২৮ রানের বিরাট ব্যবধানে হার এবং শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে পরাজয়, পাক সমর্থকদের চিন্তা বাড়িয়েছে। শেষ ১০ ওয়ান ডে ম্যাচের ছয়টিতে জিতেছে পাক দল, হেরেছে তিনটি, একটি ম্যাচ অমীমাংসিত শেষ হয়।
শক্তি
তাঁকে বর্তমান বিশ্বের সেরা ব্যাটারের তকমা দিয়েছেন বিরাট কোহলি। গৌতম গম্ভীরও বিশ্বকাপে তাঁর ব্যাটিং দেখতে মুখিয়ে। তিনি বাবর আজম। পাকিস্তান দলের অধিনায়ক। আইসিসি ব়্যাঙ্কিং অনুযায়ী বিশ্বের এক নম্বর ওয়ান ডে ব্যাটার। ২০১৯ সালের পর থেকে বাবর পাকিস্তানের সবকয়টি ওয়ান ডে ম্যাচে খেলেছেনই শুধু নয়, ধারাবাহিকভাবে পারফর্মও করেছেন। প্রায় ৬০-র ব্যাটিং গড় ও ৯০-র স্ট্রাইক রেট, বাবর আজমের দক্ষতার পরিচয়বাহক। মেগা টুর্নামেন্টে ভাল পারফর্ম করার জন্য পাকিস্তান যে তাঁর ব্যাটের দিকে তাকিয়ে তা বলাই বাহুল্য।
তবে পাক দলের সবথেকে বড় শক্তি হল দলের বিধ্বংসী ফাস্ট বোলিং আক্রমণ। নাসিম শাহের চোট বোলিং বিভাগকে কিছুটা দুর্বল করলেও, শাহিন আফ্রিদির (Shaheen Afridi) মতো বোলার বিশ্বের যে কোনও দলের সম্পদ। গত বিশ্বকাপে এক তরুণ শাহিন আফ্রিদি মাত্র পাঁচ ম্যাচ খেলে ১৬ উইকেট নিয়েছিলেন। এবারের বিশ্বকাপে তাঁর দিকে নজর থাকবেই। মহম্মদ সিরাজ বাদে চলতি বছরে ওয়ান ডেতে শাহিনের থেকে বেশি উইকেট আর কোনও ফাস্ট বোলারের দখলে নেই। তাঁর জুড়িদার হ্যারিস রউফও নিজের গতি এবং রিভার্স সুইংয়ে ব্যাটারদের রাতের ঘুম কাড়তে পারেন। হাসান আলি এবং মহম্মদ ওয়াসিম জুনিয়ারও এই পেস ব্যাটারির অংশ। তাই পাকিস্তান দলের ফাস্ট বোলিং বিভাগই দলের সবথেকে শক্তিশালী পক্ষ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
দুর্বলতা
এই পাকিস্তান দলের মূল দুর্বলতা তাঁদের স্পিন বোলিং বিভাগ। শাদাব খানের দখলে অভিজ্ঞতা থাকলেও, তিনি বল হাতে বড় মঞ্চে দাগ কাটতে ব্যর্থ হয়েছেন। তরুণ উসামা মির পাকিস্তানের প্রস্তুতি ম্যাচে ভাল বল করলেও, তাঁর অভিজ্ঞতার অভাব রয়েছে। এর পাশাপাশি বাবর আজমের মতো বিশ্বমানের ব্যাটার বাদে মহম্মদ রিজওয়ানই সাম্প্রতিক সময়ে পাকিস্তানের হয়ে ধারাবাহিকভাবে বড় রান করেছেন। এই দুইজনের উপর অত্যাধিক নির্ভরশীলতা দলকে ভোগাতে।
চমক দিতে তৈরি
সউদ শাকিল (Saud Shakeel) লাল বলের ক্রিকেটে পাকিস্তান দলে নিজের জায়গা পাকা করে ফেলেছেন। টেস্টে তাঁর গড় ৮৭-র অধিক। ওয়ান ক্রিকেটে অবশ্য তিনি সদ্যই জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। এখনও পর্যন্ত খেলেছেন ছয়টি ওয়ান ডে। তবে তিনি যে ওয়ান ডেতেও দলের বড় সম্পদ হয়ে উঠতে পারেন, তার পূর্বাভাস মিলেছে পাকিস্তান-নিউজ়িল্যান্ড প্রস্তুতি ম্য়াচে। কিউয়িদের বিরুদ্ধে ৫৩ বলে ৭৫ রানের এক বিধ্বংসী ইনিংস খেলেছিলেন সউদ শাকিল। তাঁর সুবাদে কিন্তু পাকিস্তানের মিডল অর্ডারের সমস্যার সমাধান হতে পারে।
গেমচেঞ্জার
একা হাতেই ম্যাচের রং বদলে ফেলার ক্ষমতা রাখেন শাদাব খান। তাঁর বোলিং নিয়ে প্রশ্নচিহ্ন থাকলেও, লেগ স্পিনারদের যে কোনও দলেরই সম্পদ হিসাবে গণ্য করা হয়। শাদাব কিন্তু ব্যাটিংটাও মন্দ করেন না। তিনি টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডার, যে কোনও জায়গায় ব্যাট করতে সক্ষম। আর তাঁর ফিল্ডিং নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। পাকিস্তান দলের সেরা ফিল্ডার শাদাব। ঝাঁপ দিয়ে দুরন্ত ক্যাচ ধরা হোক বা ডাইরেক্ট হিটে রান আউট করা, শাদাবের মতো ফিল্ডার বিশ্বক্রিকেটে খুবই কম রয়েছেন। তিনি আসন্ন বিশ্বকাপে পাকিস্তানের গেমচেঞ্জার হয়ে উঠতেই পারেন।
বিশ্বকাপের দল: বাবর আজম (অধিনায়ক), ইফতিকার আমেদ, মহম্মদ রিজওয়ান (উইকেটরক্ষক), মহম্মদ নওয়াজ, আগা সলমন, সউদ শাকিল, মহম্মদ ওয়াসিম, উসামা মির, হাসান আলি, শাদাব খান (সহ-অধিনায়ক), ইমাম উল হক, শাহিন আফ্রিদি, ফখর জামান, হ্যারিস রউফ, আব্দুল্লা শফিক
বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সূচি:
- বনাম নেদারল্যান্ড, হায়দরাবাদ, ৬ অক্টোবর, শুক্রবার, দুপুর ২
- বনাম শ্রীলঙ্কা, হায়দরাবাদ, ১০ অক্টোবর, মঙ্গলবার, দুপুর ২
- বনাম ভারত, আমদাবাদ, ১৪ অক্টোবর, শনিবার, দুপুর ২
- বনাম অস্ট্রেলিয়া, বেঙ্গালুরু, ২০ অক্টোবর, শুক্রবার, দুপুর ২
- বনাম আফগানিস্তান, চেন্নাই, ২৩ অক্টোবর, সোমবার, দুপুর ২
- বনাম দক্ষিণ আফ্রিকা, চেন্নাই, ২৭ অক্টোবর, শুক্রবার, দুপুর ২
- বনাম বাংলাদেশ, কলকাতা, ৩১ অক্টোবর, মঙ্গলবার, দুপুর ২
- বনাম নিউজ়িল্যান্ড, বেঙ্গালুরু, ৪ নভেম্বর, শনিবার, সকাল ১০.৩০
- বনাম ইংল্যান্ড, কলকাতা, ১১ নভেম্বর, শনিবার, দুপুর ২
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামেও। যুক্ত হোন
https://t.me/abpanandaofficial
আরও পড়ুন: খেতাব ঘরে তুলতে অস্ট্রেলিয়ার হাতিয়ার অভিজ্ঞতা, ষষ্ঠবার বিশ্বকাপ জিততে পারবেন অজ়িরা?