মেলবোর্ন: তিনি বিশ্ব ক্রিকেটের নতুন মিস্টার থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি। জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে একার হাতে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন। তাঁর স্কুপ শট দেখে হতবাক ভারতের জাতীয় দলের প্রাক্তন কোচ রবি শাস্ত্রীও (Ravi Shastri)।
ম্যাচের নায়ক, সেই সূর্যকুমার যাদবকে (Suryakumar Yadav) শাস্ত্রী প্রশ্নও করে ফেললেন, 'অফস্টাম্পের বাইরে প্রায় ষষ্ঠ বা সপ্তম স্টাম্পের বল পা ভাঁজ করে বসে বাঁ কানের ৫-৬ ইঞ্চি পাশ দিয়ে উইকেটকিপারের মাথার ওপর দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দাও কীভাবে?'
রহস্য উদঘাটন করলেন ম্যান অফ দ্য ম্যাচ। সূর্য হাসতে হাসতে বললেন, 'নেটে প্রচুর প্র্যাক্টিস করেছি। রাবার বলে ক্রিকেট খেলার সময় থেকেই এই শট খেলে আসছি। সেই থেকেই হয়ে গিয়েছে এরকম।'
রবিবার একটা সময় ১০১/৪ হয়ে গিয়েছিল ভারত। সেখান থেকে সূর্যকুমার ও হার্দিক পাণ্ড্যর জুটি ম্যাচে ফেরায় ভারতকে। শেষ পাঁচ ওভারে ৭৯ রান তোলে ভারত। সূর্য বলছেন, 'আমি ও হার্দিক ব্যাট করার সময় পরিকল্পনা একেবারে স্পষ্ট ছিল। ও বলেছিল চলো ইতিবাচক রাস্তায় হাঁটি। তারপর দেখা যাবে কোথায় শেষ করতে পারি। তারপর থেকে আমরা আক্রমণ শুরু করি যা ২০তম ওভার পর্যন্ত চলতে থাকে।'
সাফল্যের নেপথ্যে ড্রেসিংরুমের পরিবেশকেও কৃতিত্ব দিয়েছেন সূর্য। বলেছেন, 'ড্রেসিংরুমের আবহ চমৎকার। নক আউটের আগের পর্বে সকলে খুব খুশি। আমার পরিকল্পনা সব সময় পরিষ্কার ছিল। আলাদা কিছু করার চেষ্টা করিনি। নেটে যেভাবে ব্যাট করি, ম্যাচেও সেভাবেই খেলেছি।'
২০২২ সালটি তাঁর কাছে দারুণ কাটছে। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রথম ভারতীয় হিসাবে এক ক্যালেন্ডার বর্ষে এক হাজার রান করেছেন। সূর্য বলছেন, 'ভাল লাগছে। তবে আমি প্রত্যেকবার ক্রিজে গিয়ে শূন্য থেকে শুরু করি। আমরা সেমিফাইনালের যোগ্যতা অর্জন করে ফেলার পরও এত মানুষ এসে সমর্থন করছেন দেখে আমি আপ্লুত।'
সহজ জয়
গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে দুরন্ত টিম ইন্ডিয়া। জিম্বাবোয়েকে ৭১ রানে দুরমুশ করে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ চারে পৌঁছে গেল ভারত। গ্রুপ টু-র পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে। সেমিফাইনালে ভারতের সামনে ইংল্যান্ড। জস বাটলাররা গ্রুপ ওয়ানের দুই নম্বরে শেষ করে পড়লেন ভারতের সামনে।
মেলবোর্নে ২৩ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন সূর্য। পেসারের বল স্কুপ করে বাউন্ডারির বাইরে ফেললেন। একবার নয়, বারবার। শেষ পর্যন্ত ২৫ বলে ৬১ রান করে অপরাজিত রইলেন সূর্য। তাঁকে সঙ্গত করলেন হার্দিক পাণ্ড্য। ১৮ বলে ১৮ রান করলেন বঢোদরার অলরাউন্ডার। প্রথমে ব্যাট করে ভারত তোলে ১৮৬/৫।
জিম্বাবোয়ের সামনে জয়ের লক্ষ্য ছিল ১৮৭ রান। যে রান তাড়া করতে নেমে জিম্বাবোয়ে শিবির কেঁপে গেল প্রথম বলেই।ভুবনেশ্বর কুমারের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই কোনও রান না করে ফিরলেন ওয়েসলি মাধেভেরে। শর্ট এক্সট্রা কভারে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুরন্ত ক্যাচ নিলেন বিরাট কোহলি। যিনি এদিন ব্যাট হাতে ২৫ বলে ২৬ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেছিলেন। পরের ওভারে অর্শদীপ সিংহ ফেরান রেগিস চাকাভাকে। ২/২ হয়ে যায় জিম্বাবোয়ে। তখন থেকেই দেওয়াল লেখন পড়া যাচ্ছিল। সিকন্দর রাজা ২৪ বলে ৩৪ ও রায়ান বার্ল ২২ বলে ৩৫ রান করে কিছুটা পাল্টা লড়াই করলেও, মাত্র ১১৫ রানে গুটিয়ে যায় জিম্বাবোয়ে ইনিংস।
ভারতের হয়ে তিন উইকেট আর অশ্বিনের। দুটি করে উইকেট মহম্মদ শামি ও হার্দিক পাণ্ড্যর। ভুবনেশ্বর কুমার, অর্শদীপ সিংহ ও অক্ষর পটেলের ঝুলিতে জমা পড়েছে একটি করে উইকেট।
আরও পড়ুন: বিধ্বংসী ছন্দে সূর্য, প্রথম ভারতীয় হিসাবে টি-২০ ক্রিকেটে গড়লেন মাইলফলক