কলকাতা: ডুরান্ড কাপের (Durand Cup) দ্বিতীয় ম্যাচেও গোলশূন্য ড্র করল ইস্টবেঙ্গল। দুই ম্যাচ থেকে দুই পয়েন্ট সংগ্রহ করল লাল-হলুদ বাহিনী। অন্যদিকে, এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে জয় দিয়ে শুরু করার পরে কলকাতার আর এক প্রধানের বিরুদ্ধে থমকে গেল আই লিগে খেলা নতুন দল রাজস্থান ইউনাইটেড।


বৃহস্পতিবার কলকাতার কিশোরভারতী স্টেডিয়ামে গোলশূন্য থেকে গেল ‘বি’ গ্রুপের গুরত্বপূর্ণ ম্যাচটি। এই ড্রয়ের ফলে অবশ্য সুবিধাই হল শীর্ষস্থানীয় মুম্বই সিটি এফসি-র। বৃহস্পতিবার এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে ১-১ ড্র করেও গোলের বিচারে তারা গ্রুপের শীর্ষেই রয়ে গেল।


রবিবার কলকাতা ডার্বির আগে এই ম্যাচ ছিল ইস্টবেঙ্গলের কাছে ড্রেস রিহার্সাল। কিন্তু যে ভাবে গোলের সুযোগ নষ্ট করার প্রদর্শনী দেখা গেল লাল-হলুদ বাহিনীর পারফরম্যান্সে, তার পরে ডার্বিতে তারা কতটা সুবিধা করতে পারবে, এই প্রশ্ন থেকেই গেল। একাধিক সুযোগ নষ্ট করেছেন ভিপি সুহের। অনিকেত যাদব, তুহিন দাসরা এ দিন একাধিক গোলের পাস বাড়ানো সত্ত্বেও সুহের, অমরজিৎ সিংহ কিয়াম, সুমিত পাসিরা গোলে বল রাখতে ব্যর্থ হন। পরের দিকে ব্রাজিলীয় ফরওয়ার্ড এলিয়ান্দ্রো ডস স্যান্টোস নামলেও তেমন কিছু করতে পারেননি।


দুই দলই এ দিন শুরু থেকে আগোছালো ফুটবল খেলে। প্রথম ১৫ মিনিটে কোনও পক্ষই অপরের গোল লক্ষ্য করে শট মারতে পারেনি। ১২ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক থেকে জেরি লালরিনজুয়ালার ক্রস গোলকিপার নীরজ কুমার ধরে না ফেললে বিপদে পড়ত রাজস্থান। তার দু’মিনিট আগে ফ্রিকিক থেকে ছিটকে আসা বল সুবিধাজনক জায়গায় পেয়েও গোলে শট নিতে পারেননি জেরি।


ম্যাচের মধ্যে চোট পেয়ে বেরিয়ে যান ইস্টবেঙ্গলের ডিফেন্ডার অঙ্কিত মুখোপাধ্যায়। তাঁর জায়গায় নামেন মহম্মদ রাকিপ। চোট পেয়ে অ্যালেক্স লিমাও কিছুক্ষণের জন্য মাঠের বাইরে চলে গিয়েছিলেন, তবে তিনি ফিরে আসেন।


ইস্টবেঙ্গল অবশ্য বিপক্ষকে চাপে রাখার কাজ চালিয়ে যায়। ৩৭ মিনিটের মাথায় বাঁ দিক দিয়ে ওঠা তুহিন দাস কোণাকুনি শটে বক্সের মধ্যে থাকা সুহেরকে গোলের সুযোগ করে দিলেও সুহের অল্পের জন্য বলের নাগাল পাননি। বাড়তি সময়ে ডানদিক দিয়ে ওঠা অনিকেতের পাস পেয়েও বক্সের মধ্যে থেকে গোলে শট নিয়ে ব্যর্থ হন কেরলের ফরওয়ার্ড।


দ্বিতীয়ার্ধে জোড়া পরিবর্তন করে দল নামান ইস্টবেঙ্গল কোচ স্টিফেন কনস্টান্টাইন। সাইপ্রাসের ডিফেন্ডার চারালাম্বোস কিরিয়াকুর জায়গায় নামেন স্প্যানিশ ডিফেন্ডার ইভান গঞ্জালেজ এবং অমরজিৎ সিংহ কিয়ামের জায়গায় নামেন শৌভিক চক্রবর্তী। তবে কোনও দলের খেলাতেই তেমন পরিবর্তন দেখা যায়নি।


রাজস্থান ইউনাইটেড তেমন ধারালো আক্রমণে না উঠলেও ৬১ মিনিটের মাথায় শৌভিক গোলমুখী লালরেমসাঙ্গাকে বক্সের মধ্যে ফাউল করায় পেনাল্টি পায় রাজস্থান। কিন্তু সেই সুযোগও হাতছাড়া করেন তাদের ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড সের্গিও বারবোজা। তাঁর মাঝারি গতির স্পট কিক আটকাতে তেমন অসুবিধা হয়নি লাল-হলুদ গোলকিপার কমলজিতের।


আক্রমণে ধার বাড়ানোর জন্য ৬৮ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলীয় ফরোয়ার্ড এলিয়ান্দ্রো স্যান্টোস ও মহম্মদ মোবাশিরকে নামান ইস্টবেঙ্গল কোচ। কিন্তু তুলে ননেন সুহেরকে। তাই আক্রমণে প্রয়োজনীয় ঝড় তুলতে পারেনি লাল-হলুদ বাহিনী। বরং উরুগুয়ের ফরোয়ার্ড মার্টিন শাভেজকে পরিবর্ত হিসেবে নামিয়ে সেট পিসে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে রাজস্থান। দু’টি ফ্রি কিক প্রায় গোলে ঢুকিয়েই দিয়েছিলেন শাভেজ। দু’বারই কমলজিতের তৎপরতায় বিপদ কাটে ইস্টবেঙ্গলের।


ম্যাচের শেষ দিকে যেমন গোলের চেষ্টা বাড়ায়, তেমনই রক্ষণও আঁটোসাঁটো করে তোলে। ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলারদের নিজেদের গোল এরিয়ায় কার্যত ঢুকতেই দিচ্ছিলেন না জগদীপ সিংরা। কাউন্টার অ্যাটাকেও উঠছিলেন দ্রুত। তবু লাল-হলুদ শিবির দুই উইং বরাবর আক্রমণে ওঠার চেষ্টা করেন একাধিকবার এবং প্রতিবারই বিপক্ষের রক্ষণে আটক হয়ে যান।


বাড়তি পাঁচ মিনিট সময়ের মধ্যে এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে জয়সূচক গোলের নায়ক গিয়ামার নিকুমের শট ক্রসবারের কয়েক ইঞ্চি ওপর দিয়ে বেরিয়ে না গেলে বোধহয় এই ম্যাচেও জিতত রাজস্থান। বক্সের মধ্যেই রাঘব গুপ্তার নিখুঁত পাস থেকে শটটি নেন গিয়ামার। এর পরে আরও দু’টি কর্নার পায় হিরো আই লিগের দলটি। কিন্তু ফিনিশিংয়ের অভাবে এই ম্যাচে জয় পাওয়া হল না তাদের।       


ইস্টবেঙ্গল দলকমলজিৎ সিংহ (অধিনায়ক), লাল চুঙনুঙ্গা, চারালাম্বোস কিরিয়াকু (ইভান গঞ্জালেজ), অঙ্কিত মুখোপাধ্যায় (মহম্মদ রাকিপ), জেরি লালরিনজুয়ালা, অনিকেত যাদব, অমরজিৎ সিংহ কিয়াম (শৌভিক চক্রবর্তী), অ্যালেক্স লিমা, সুমিত পাসি (মহম্মদ মোবাশির), ভিপি সুহের (এলিয়ান্দ্রো ডস স্যান্টোস), তুহিন দাস।