নয়াদিল্লি: মাথায় পরতেন পাগড়ি আর মনে ছিল অদম্য ইচ্ছেশক্তি ও জেদ। সেই ইচ্ছেশক্তিতে ভর করেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন বিশ্বের প্রবীণতম ম্যারাথনার। তবে সেই ফৌজা সিংহ (Fauja Singh) জীবনযুদ্ধে পরাজিত হলেন ১১৪ বছর বয়সে। তবে বার্ধক্যজনিত কারণে নয়, তাঁর মৃত্যু হল দুর্ঘটনায়। ১৪ জুলাই আর পাঁচটা দিনের মতোই তিনি জলন্ধরে নিজের শহর বিয়াস পিণ্ডে হাঁটতে বেরিয়েছিলেন। সেখানেই এক গাড়ির ধাক্কায় তিনি প্রাণ হারালেন। তাঁর মাথায় একাধিক জায়গায় চোট লাগে। দ্রুত তাঁর চিকিৎসা শুরু করা হলেও 'শিখ সুপারম্য়ান' মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েন।
১৯১১ সালের ১ এপ্রিল জন্ম নেওয়া ফৌজা সিংহের জীবনের পরতে পরতে যেন যুদ্ধ, যা যে কোনও সিনেমার চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে। 'টারবানড টর্নেডো' হিসাবে পরিচিত ফৌজা ছোটবেলায় এতটাই দুর্বল ও রুগ্ন ছিলেন যে তাঁকে 'কাঠি' বলে স্থানীয়রা টিটকিরি করতেন। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত তো ফৌজা হাঁটতে পর্যন্ত পারতেন না। অনেকে তাঁর বেঁচে থাকা নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছিলেন। তবে সেইসব সংশয়কে পিছনে ফেলে তিনি শুধু বাঁচেনইনি, বরং জীবন কেমন হওয়া উচিত, তার আদর্শ উদাহরণ হয়ে উঠেন।
ফৌজা প্রমাণ করেন জীবন ৬০ পেরোলেই শেষ নয়, বরং ৮৯ বছর বয়সেও ম্যারাথনে দৌড়ানো শুরু করা যায়। তাঁর স্ত্রীর মৃত্যুর পর ফৌজা ভারত ছেড়ে ইংল্যান্ডে পাড়ি দেন। সেখানেই ৮৯ বছর বয়সে তিনি প্রথমবার লন্ডনে ম্যারাথনে দৌড়ন। ছয় ঘণ্টা ৫৪ মিনিটে ম্যারাথন দৌড় শেষ করে সকলকে চমকে দেন তিনি। ২০১১ সালে শতবর্ষের অধিক বয়সি প্রথম মানুষ হিসাবে তিনি ম্যারাথন সম্পূর্ণ করেন। নিজের শততম জন্মদিনের দিনেই তিনি ৮ ঘণ্টা ১১ মিনিটে টরন্টো ওয়াটারফ্রন্ট ম্যারাথন সম্পূর্ণ করে ইতিহাস গড়েন।
তিনি নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, টরন্টো, মুম্বইয়ের মতো জায়গায় দৌড়ন তিনি। মোট নয়টি ম্য়ারাথন সম্পূর্ণ করেন ফৌজা। এর সঙ্গেই আসে খ্যাতি। বিখ্যাত ক্রীড়া সরঞ্জাম প্রস্তুতকারক সংস্থা অ্যাডিডাসের ক্যাম্পেনে দেখা যায় তাঁকে। তাঁর সঙ্গে সেই ক্যাম্পেনে মহম্মদ আলি ও ডেভিড বেকহ্য়ামকেও দেখা যায়। ২০১৩ সালে তিনি অবসর নেন। তবে তার আগে ২০১২ সালের অলিম্পিক্স টর্চ হাতেও দেখা মেলে তাঁর। ২০১১ সালে আসে 'প্রাইড অফ ইন্ডিয়া' পুরস্কার। ২০১৫ সালে 'ব্রিটিশ এম্পায়ার' মেডেল পান তিনি। খবর অনুযায়ী 'ফৌজা' নামে তাঁর একটি বায়োপিকও তৈরি হতে চলেছে। সেখানেই তাঁর জীবনযুদ্ধের কথাও হয়তো জানা যাবে।